গুয়াহাটি, ২৩ ডিসেম্বর (হি.স.) : অসম বিধানসভায় ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে গেছে গবাদি পশু সংরক্ষণ (সংশোধনী) বিল বা দ্য আসাম ক্যাটেল প্রিজার্ভেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট বিল)-২০২১। রাজ্য বিধনসভার শীতকালীন অধিবেশনের চতুর্থ দিন আজ বৃহস্পতিবার এই সংশোধনী বিল পেশ করেন গৃহ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। বিলের ওপর ব্যাপক চর্চা হয়। বিরোধী বিধায়করা গবাদি পশু সংরক্ষণ (সংশোধনী) বিলের বিপক্ষে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করে ঝড় তুলেন।
বিরোধীদের নানা প্রশ্ন, বিশেষ করে অখিল গগৈয়ের এক মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফ-এর অনুরোধে এই সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে। গণতন্ত্রে বিরোধী দলের পরামর্শকে সম্মান জানাতে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটিই প্রথম বিল নয় যাতে সংশোধনী আনা হচ্ছে। বিরোধীদের বোঝাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, ২০১১ সাল থেকে প্রায় প্রতিটি অধিবেশনে বিদ্যালয় প্রাদেশিকীকরণ বিল সংশোধন করা হয়েছে। তাই জনগণের স্বার্থে সংশোধনী আনতে হয়। বলেন, এমন কোনও কথা কোথাও লেখা নেই যে একবার আইন প্রণয়ন হয়ে গেলে তা আর সংশোধন করা যাবে না।
এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, গবাদি পশু পরিবহণ তখা পাচারের বিষয়টি আন্তঃজেলা থেকে আন্তঃরাজ্য, এমন-কি বিদেশে বিস্তৃত হয়েছে। বলেন, ‘আমরা কৃষিকাজের উদ্দেশ্যে গবাদি পশু পালনে বিধিনিষেধ রাখছি না। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে গবাদি পশু পাচার বন্ধ করার চেষ্টা করছি মাত্র। আমাদের লক্ষ্য গোহত্যা বন্ধ করা। এছাড়া এই আইনের বলে পুলিশ যাতে বাড়তি ক্ষমতা না পায় সেজন্যই সংশোধন আনা হয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব বলেন, কোরবানি সংক্রান্ত বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা বা অনুমতি দেওয়ার কোনও বিষয়ও নেই। তাই সংশোধনীতে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি প্রহিবেটরি নয় বরং রেগুলেটরি আইন। আরও খোলসা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গবাদি পশু বহনকারী গাড়িগুলিকে বাজেয়াপ্ত করে তা বিক্রি করার অধিকার দেওয়া হয়েছে প্রশাসনকে। কেননা, যানবাহন মালিকদের বুঝতে হবে, গবাদি পশু পাচার একটি অবৈধ কাজ।
তিনি বলেন, অসমে ১০ লক্ষ লিটার দুধ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তাই গরুর মাংস নয়, গরুর দুধের উৎপাদন ও ব্যবসা বাড়াতে হবে। একে নেতিবাচক না ভেবে ইতিবাচক এবং অতিরিক্ত ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। গবাদি পশুর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে না, তবে নিষ্ঠুরতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলেন, গবাদি পশুর আন্তঃরাজ্য যাতায়াতের জন্য ৩০৪ ধারায় সংশোধন আনা হয়েছে। কেননা, মৌলিক অধিকারের উপর রাজ্যের অধিকার রয়েছে। যে কোনও ধরনের অসাংবিধানিক কাজ হলে তা বন্ধ করার অধিকার রাজ্যের রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ডাইরেক্টলি প্রিন্সিপল অব স্টেট পলিসি প্রিভেইল ওভার ফান্ডামেন্টাল রাইটস।
মূলত, কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ মুখ্যমন্ত্রী প্রবর্তিত বিলের ওপর বিতর্কে অংশ নিয়ে বলেছিলেন, আমরা হিন্দু, আমরা বৈষ্ণব, আমরা গো-মাতাকে সম্মান করি। কিন্তু, আমাদের দেশে বহু মানুষ আছেন যাঁরা শাক্ত, তাঁরা বলি প্রথার আচার-অনুষ্ঠানে বিশ্বাসী এবং বিভিন্ন সময়ে বলিদানও করেন। যদি এই বিলের মাধ্যমে কোনও পশু বধের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়, তা হলে এই আইন আমরা মেনে নিতে না পারি না। পাশাপাশি গবাদি পশু পরিবহণে ব্যবহৃত গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা বা সংশ্লিষ্ট গাড়ি মালিকের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা কোনও অবস্থাতেই ঠিক নয়, বলেন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়্স্থ।
এদিকে রাইজর দল-এর একমাত্র বিধায়ক অখিল গগৈ বিলের বিরোধিতা করে বলেন, ধারা ৩০৪-এ উন্মুক্ত বাণিজ্যের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই এই বিল অসাংবিধানিক। এই বিলের কোনও প্রয়োজনই নেই। অখিলের কটাক্ষ, কী এমন প্রয়োজন পড়েছে যে, চার মাস আগে প্রণীত এই বিলে সংশোধন আনতে হচ্ছে? তিনি বলেন, আগে যাঁরা এই বিল তৈরি করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এছাড়া অখিল গগৈয়ের যুক্তি, সংবিধানে সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয়েছে যা এই বিলের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হবে।
বিতর্কে বিরোধী বিধায়ক আমিনুল ইসলাম, আবদুল রসিদ মণ্ডল, মনোরঞ্জন তালুকদার প্রমুখ অংশ নিয়েছেন। বিতর্ক শেষে বিরোধী সদস্যরা তাঁদের সংশোধনী প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। এর পর সদনে ধ্বনিভোটে অসম গবাদি পশু সংরক্ষণ (সংশোধনী) বিল পাশ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, আজকের অধিবেশনে আসাম ডাইরেক্ট রিক্রুটমেন্ট কমিশনস ফর অ্যানালগাস পোস্টস ইন ক্লাস-থ্রি ও ফোর বিল-২০২১, অসম পুলিশ (সংশোধনী) বিল, অসম আবগারি (সংশোধনী) বিল, আসাম মিউনিসিপাল (থার্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, দ্য গুয়াহাটি মিউনিসিপাল কর্পোরেশন (সংশোধনী) বিল, দ্যা গুয়াহাটি মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল পেশ করা হয়েছে।