আগরতলা, ১৬ ডিসেম্বর (হি. স.) : মহান বিজয় দিবস বাংলাদেশের সাথে ত্রিপুরাতেও জাকজমকভাবে উদযাপিত হয়েছে। আগরতলা স্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশন অফিসে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। এছাড়া দুই দেশের মৈত্রীর সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে সাইকেল রেলি করা হয়েছে। ৫০ জন সাইক্লেলিস্ট আজ ৫০ কিমি পথ পরিক্রমা করেছেন। সকালে লিচু বাগান স্থিত এলবার্ট এক্কা পার্কে শহীদ সেনা জওয়ান এলবার্ট এক্কার প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ত্রিপুরার পরিবহণ মন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায়। এদিন বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী। আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্টে বাংলাদেশের ল্যান্ড পোর্ট আধিকারিকদের শুভেচ্ছা জানিছেন ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের ত্রিপুরা চাপ্টার।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। ভারতীয় সেনা এবং মুক্তি বাহিনীর যৌথ লড়াইয়ে ৯ মাসের যুদ্ধের অবসান হয়েছিল বাংলাদেশ নাম স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মের মাধ্যমে। বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে বহু ভারতীয় সেনা আত্মবলিদান দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে ত্রিপুরার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। কারণ, তখন কয়েক লক্ষ শরণার্থীকে ত্রিপুরা আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আগরতলায় সার্কিট হাউসে ১০ নম্বর রুমে প্রথম সেদেশের মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছিল। ত্রিপুরা এই অকৃত্রিম অবদান বাংলাদেশ সব সময় কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে চলেছে। সেই দিক দিয়ে মহান বিজয় দিবস ত্রিপুরার জন্যও সমানভাবে তাত্পর্যপূর্ণ।
আগরতলা স্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার মহম্মদ জুবায়েদ হুসেন বলেন, আজ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে শুরুতে পতাকা উত্তলনের মধ্য দিয়ে আজকের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছে। তারপর জাতীয় সঙ্গীত এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী। আমরা সকলে মিলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। তাঁর বক্তব্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে ত্রিপুরার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তাই, দুই দেশের মৈত্রীর এবং সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় ও মজবুত করার লক্ষ্যে সাইকেল রেলির আয়োজন করা হয়েছে। তাঁর কথায়, স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষ্যে ৫০ জন সাইক্লেলিস্ট ৫০ কিমি পথ পরিক্রমা করবেন। তাঁরা আগরতলা চেকপোস্টে জিরো পয়েন্টে যাবেন সেখান থেকে সহকারী হাই কমিশন কার্যালয়ে এসে রেলির সমাপ্তি ঘটবে।
মহম্মদ জুবায়েদ হুসেনের কথায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রখ্যাত গীতিকার সুবিমল ভট্টাচার্য বহু গান লিখেছেন। আজ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি নতুন একটি গেয়ে শুনাবেন। শুধু তাই নয়, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের দুইজন বাচিক শিল্পী অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করবেন।
এদিন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রচুর শরণার্থী ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে অন্যতম ভূমিকার অধিকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিস্বত্তার জাগরণ ঘটেছিল। সেই জাগরণের বিস্ফোরণ নতুন ইতিহাস গড়ে দিয়েছিল। তিনি বলেন, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংহ এবং দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর বলিষ্ট নেতৃত্ব বাংলাদেশের সূচনা হয়েছিল। তিনি আজ মুক্তি যুদ্ধে মহান যোদ্ধাদের স্মরণ করেছেন। সাথে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বারে বারে গণতন্ত্রের হত্যার চেষ্টা হয়েছে, কিন্ত স্বাধীনতা প্রেমী মানুষ সেই চেষ্টা ভেস্তে দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সহায়তায় ত্রিপুরায় উগ্রপন্থার দমন সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ত্রিপুরার উন্নয়নে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এভাবেই দুই দেশের মৈত্রীর সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে, দাবি করেন তিনি।
এদিন ত্রিপুরার পরিবহণ মন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায় লিচুবাগান স্থিত এলবার্ট এক্কা পার্কে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আজকের দিনে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং মুক্তির যুদ্ধার কাছে পাক সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছিল। ওই স্বাধীনতা যুদ্ধে সেনার বলিদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ তাঁদের ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তিনি বলেন, সেনা জওয়ান এলবার্ট এক্কা বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিলেন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং বাংলাদেশের সকল অংশের মানুষের প্রতি রইল শুভেচ্ছা। এদিকে, আজ আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কর্মাসের ত্রিপুরা চাপ্টার বাংলাদেশ ল্যান্ড পোর্ট আধিকারিকদের মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা স্বরূপ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।
এদিকে, বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সাথে জড়িত ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থানে নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠার যোগ্য। বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার সেই সমস্ত স্থান খুঁজে বের করার চেষ্টায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আজ তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সবচেয়ে বড় নিদর্শন চোত্তাখলায় মৈত্রী উদ্যান। এমনই আরও বহু স্থান রয়েছে যার সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। তাঁর দাবি, কোবিডের কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে ঠিকই। কিন্ত,, সেই সমস্ত স্থান খুঁজে বের করার কাজ অচিরেই সমাপ্ত হবে। তিনি জানান, এবিষয়ে ত্রিপুরার পরিবহণ মন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে।