BRAKING NEWS

করোনা : স্বাস্থ্য যুদ্ধে ভারত পথ দেখাল

ড. রাজলক্ষ্মী বসু

করোনা কালের এই দুটো বছর অনেক স্বাস্থ্য টানাপোড়েন গেছে এবং আমাদের কি কি এতোদিন ছিলনা কি কি থাকা উচিত তা মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। ভ্যাকসিন কূটনীতিতে ভারত প্রথম থেকেই গেম চেঞ্জার ছিল তার প্রমান আজকে প্রায় সব ভারতীয়র প্রথম ডোজ শেষ। এরমধ্যে আরো এক উল্লেখযোগ্য সাফল্যে দেশ উপনীত, ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার অনুমোদনে ছাড়পত্র পাওয়া ২- ডিঅক্সি- ডি- গ্লুকোজ ড্রাগ যা কোভিড ১৯ রোগীর অক্সিজেন চাহিদা কমিয়েছে, সারা বিশ্ব সমাদর করছে ভারতের ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার মিডিশিন এন্ড এলায়েড সায়েন্সের এই অভাবনীয় সাফল্য গবেষণাকে। অনেক অভিযোগ করছিল কংগ্রেস এবং কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। এই যেমন ধরি, এদেশে নাকি হাসপাতালের অভাব।পুরোপুরি অস্বীকার করা যাচ্ছিল না , কোভিডের আগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে প্রতি ১০০০ রোগীর জন্য নূন্যতম ৩ টি শয্যার উল্লেখ করেছে , এই অনুপাতের হিসেবে কোভিডে র আগেও এ দেশে উল্লিখিত হিসেবের অঙ্কে দেখলে ভারতে দরকারের ১৮.৩ শতাংশ হাসপাতাল শয্যা ছিল। কিন্তু সব দায় হঠাত্ কেন মোদী সরকার নেবে? স্বাধীনতার পর থেকে হিসেব করলে কংগ্রেসের দায় নেওয়া উচিত ৭৭.৭ শতাংশ এবং বিজেপির ১৭.৯ শতাংশ। স্বাস্থ্যের জন্য নাকি বিজেপি কিছু করেনি, তাই ২২ টি এইমস এর মধ্যে ১৪ টিই নরেন্দ্র মোদীর আমলে প্রস্তাবিত এবং কংগ্রেসের ৫৭ বছর রাজত্ব মাত্র ২ টি! কংগ্রেস অনেক বিষদ্গার করেছে করোনা কালে, Failed Modi, Resign Modi ইত্যাদি ইত্যাদি। ২১ শে এপ্রিল ২০২০ এদেশে ৬২,৪৫৮ টি অক্সিজেন সাপোর্টেট হাসপাতাল শয্যা ছিল যা ৯ ই এপ্রিল ২০২১ এ হয় ২,৫৫,১৬৮ টি। এই একই সময় টেবিলে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট ২৭,৩৬০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৭৫,৮৬৭ টি। তবুও নিন্দায় পঞ্চমুখ। এই যেমন নিন্দুক শ্রেষ্ঠ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কীর্তি কলাপ দেখি একবার। ২০১৫ এর এপ্রিল থেকে মার্চ ২০২১ এর মধ্যে দিল্লির স্বাস্থ্য উন্নতির হেতু কেজরিওয়াল ৪৭,৬৩৪ কোটি টাকা নাকি ব্যয় করেছিলেন। কিন্তু ২০২১ এর মার্চ বলছে অশ্বত্থামা ইতি গজ। এই ব্যয়ের মধ্যে একটাও অক্সিজেন প্লান্ট, নতুন হাসপাতাল, ভেন্টিলেটার কিছুই ছিলনা। আম আদমি পার্টির ২০১৫ নির্বাচনী ইস্তাহারে কি বড় বড় করে বলা ছিল তারা নাকি ৩০ হাজার শয্যার হাসপাতাল বানাবে।পরে অজুহাত জমির অভাব।কিন্তু দিল্লির উপকন্ঠে ১৭৫-২০০ একর জমি কি সত্যিই নেই? নতুন অ্যারোসিটি হতে পারলে কেন মেডিসিটি গড়তে পারল না?

যারা নিন্দায় আকাশ মুখরিত করছেন তাদের কর্ম উদ্যোগে এতো তঞ্চকতা কেন? এই উদাহরণের বিপরীত ক্রিয়া করল করোনা পরিস্হিতিতে ভারত সরকার। দিল্লিতেই ন ‘ মাসের মধ্যে অতিরিক্ত ২,১০৫ টি শয্যা, ৭০,০০০ আইসোলেশন বেড, এবং শুধুমাত্র দিল্লির জন্যই ভারতীয় রেল ৪৫০০ টি কোভিড কেয়ার কোচের ব্যবস্থা করে। এই উদাহরণ এতোটা বিস্তারিত এই কারণেই দিলাম, যেন নিন্দুক এবং কর্মযোগী র তফাতটা পরিস্কার হয়। স্বাস্থ্য সংবিধানের হিসেবে রাজ্যের স্ব – স্ব বিষয় ( যুগ্ম তালিকায় নেই) । অতিমারী র পূর্বে কেজরিওয়ালের মতো বাগাড়ম্বর ভরা সংশ্লিষ্ট বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রেখে করোনা কালে সব দোষ কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর আরোপ করার দোষটাও করল। একটি রাইট টু ইনফরমেশনের অনুসন্ধানে যখন দেখা গেল দিল্লির এক বছরে ( করোনা কালে) বিজ্ঞাপন ব্যয় ৫০৫ কোটি তখন কি এই জিজ্ঞাসা আসেনা ১.২৪ কোটির কটা অক্সিজেন প্ল্যান্ট এই অর্থে হতো? করোনা কালে দেশ অক্সিজেন প্ল্যান্ট এবং তার উদ্যোগ নিয়ে যথেষ্ট নড়েচড়ে বসেছে। এপ্রিল ২০২১ তে প্রাইম মিনিস্টার কেয়ার ফান্ড অতিরিক্ত ৩৮৯টি পিএসএ প্ল্যান্টের অনুমোদন দেয়। সব মিলিয়ে নতুন মোট অক্সিজেন প্ল্যান্ট দাঁড়ায় ৫৫১ টি এবং এদের আগামী সাত বছরের সব পরিচর্যায় থাকবে পি এম কেয়ার।প্রয়োজনের তাগিদে এক লক্ষ চলমান অক্সিজেন প্ল্যান্ট এবং ১.৫ লাখ ইউনিট SpO2 অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ( ডি আর ডি ও তৈরি করেছে) করেছে। খুব সংক্ষেপে যদি পি এম কেয়ার ফান্ডের হিসেব দেখি, তাহলে, ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাজ্য গুলিকে বরাদ্দ করেছে মোট ৬,৩০৯ কোটি টাকা, ভেন্টিলেটার, পি পি ই এবং মাক্সের জন্য ব্যয় বরাদ্দ ৫,০২২ কোটি, প্রথম ফেজ ভ্যাকসিনেশানের জন্য ২,২০০ কোটি, পি এস এ অক্সিজেন প্ল্যান্টে ১,৫৪০ কোটি, ২২.১৪ লক্ষ স্বাস্থ্য কর্মীর স্বাস্থ্য বিমায় ব্যয় ১,০৬৩ কোটি, পরিযায়ী শ্রমিক সেবায় ১০০০ কোটি, ১.৫ লক্ষ অক্সিকেয়ার সিস্টেমের উদ্দেশে ৩২৩ কোটি এবং ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টে ১০০ কোটি , পরিশেষে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইননে ব্যয় বরাদ্দ ৭০ কোটি।

ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত? যে দিন আমাদের দেশের অক্সিজেন উৎপাদন ৬৫.৬ শতাংশ একলাফে বৃদ্ধি পেয়ে দৈনিক উৎপাদন হলো ৯, ৪৪০ মেট্রিক টন ঠিক তার পরেই ৬ ই জানুয়ারি ২০২১, ওয়াশিংটন পোস্টে মুখ চুন করা রিপোর্ট ” Loss Angeles is running out of oxygen for patients as Covid hospitalization hit record highs nationwide ” করোনা কালে বিশ্বের প্রতিটা মানুষ দেশ সুস্থ থাকুক এ অবিরাম প্রার্থনা সবার ছিল কিন্তু স্বাস্থ্য মোকাবিলার উদ্যোগে যে কখন আমাদের এতোটা প্রগতি হয়েছে তা যখন পরিসংখ্যানের হিসেবে বোঝা গেল যেন আস্হার নিঃশ্বাস এক বুক ভরা অক্সিজেন পেল। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতেই হবে ২৬ শে এপ্রিল হনুমান মাল বেঙ্গানির ( ভূতপূর্ব সি ই ও, লিনডে ইন্ডিয়া) বক্তব্য — যিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেন ভারতে অক্সিজেন উৎপাদনের অভাব নেই এবং যা উৎপাদন হয় তার মাত্র ১ শতাংশ চিকিৎসায় ব্যবহৃত। এই প্রসঙ্গে কিছু শিক্ষা প্রত্যেকটি রাজ্য পেল, তাহলে কেন অক্সিজেনে টান বলে তারা অভিযোগ করেছিল? তার প্রথম কারণ হিসেবে বলা যায় বন্টন ব্যবস্থা, সরঞ্জামের যোগ আপাত কম থাকা। যা ছিল তাও ব্যয়বহুল, প্রতিটা রোড ট্যাঙ্কারের পিছু ব্যয় ৪৫ লক্ষ টাকা, এবং সিলিন্ডার পিছু ব্যয় ১০ হাজার। অথচ সেই সিলিন্ডারে থাকছে ৩০০ টাকার অক্সিজেন। খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি এবং তার বিকল্প ব্যবস্থা অনেক সময় ছিলনা। অনেক অক্সিজেন প্ল্যান্ট উত্তর- পূর্ব ভারতে , আবার কিছু গুজরাটে তাই গড়ে ৭০০ কিলোমিটার ট্রান্সপোর্ট লজিস্টিকের প্রস্তুতি অনেক রাজ্য করেনি।

করোনা দু বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর একটাতো ফিরে দেখার সময় অবশ্যই এসেছে। একটা ক্রাইসিস পিরিয়ড এসেছিল, সারা বিশ্বের সাথে সাথে আমরাও যুদ্ধ করেছি কিন্তু স্বাস্থ্য মোকাবিলায় স্বাস্থ্য পরিষেবায় অনেকটা ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পেরেছি আমরা। সমালোচনা চর্চা বিতর্ক এসবতো কাজের অঙ্গ কিন্তু এর মাঝে যে জয়ের ইঙ্গিত সূচিত হয়েছে তা যেন আমরা এড়িয়ে না যাই। বিরোধি কন্ঠকে কিছু একটা বলতেই হবে, তাইবলে এ দেশের সাথে যেন ইজরায়েলের তুলনা না করে, ও দেশের জনসংখ্যা এ দেশের মাত্র ০.৬৬ শতাংশ তা সত্ত্বেও ও দেশের চাইতে ২০.২ গুণ গতিতে এ দেশে ভ্যাকসিনেশন হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্মানের সীমারেখায় করোনা কাল এ দেশকে এগিয়ে দিল। যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা বিদ্রুপ করছেন তখন কানাডা থেকে প্যাট্রিক ব্রাকম্যান উদ্দাত্ত ভঙ্গিতে বলছেন” Half of the vaccines Canada has administered were to Canada by India because Canada could not source enough ” বা অস্ট্রেলিয়া র ক্রিকেটার ম্যাথু হাইডেন আবেগী হয়ে যখন বলেন ” spend any time here to understand India ” . করোনা পরিস্হিতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনেক অসুবিধা নানান রাজ্যে অস্বচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও সার্বিক ভাবে যে মোকাবিলা করেছে ভারত তা সারা বিশ্বের কাছে সমাদৃত। আমেরিকার কিছু জার্নাল কেন ভারত বিরোধী কথা লেখে বলুনতো? এ দেশের রাজনৈতিক বিরোধী দুর্বৃত্তায়নের জন্য। যেমন, রাহুল গান্ধীর ২৬ শে মে, ২০২১ দায়িত্ব জ্ঞানহীন ট্যুইট! নিউ ইয়র্ক টাইমস নাকি বলছে মোট কোভিড মৃত্যু ৪২ লাখ! অথচ অফিশিয়াল পরিসংখ্যান ছিল ৩,০৭,২৩১ — সঙ্কটের মধ্যে যুদ্ধ মোকাবিলায় যতোই দক্ষতা এদেশ দেখাক না কেন উল্টো দলের বিরোধিতার সঙ্কটের মতো ভাইরাসের ভ্যাকসিন আপাতত হাতে নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *