আগরতলা, ২৭ নভেম্বর (হি. স.) : সাংবাদিক ও আইনজীবিদের বিরুদ্ধে ত্রিপুরা পুলিশের দায়ের বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধক আইনে [Unlawful Activities (Prevention) Act 1967 (UAPA)] মামলা পর্যালোচনার জন্য পুলিশের মহানির্দেশককে(ডিজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই ডিজিপি ভিএস যাদব এডিজি ক্রাইম ব্রাঞ্চকে সমস্ত মামলা পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ক্রাইম ব্রাঞ্চ পর্যালোচনা শুরু করে দিয়েছে। আজ এ-কথা জানিয়েছেন ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক ভি এস যাদব। তাঁর কথায়, সাংবাদিক এবং আইনজীবিদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলায় পর্যাপ্ত রয়েছে, ক্রাইম ব্রাঞ্চকে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ত্রিপুরায় বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। এমনই এক বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ঘিরে পানিসাগর থানাধীন রোয়া বাজার এলাকায় উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছে।
নেটিজেনদের একাংশ ত্রিপুরার বাইরের হিংসার ছবি এনে রাজ্যের ঘটনা উল্লেখ করে প্রচার করেছে। তাতে, মসজিদে অগ্নিকান্ড এবং ভাংচুরের ঘটনা দেখানো হয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশ তদন্তে নেমে এধরনের কোন ঘটনার প্রমাণ পায়নি। কিন্ত, গুজব সারা দেশে এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে বিভিন্ন সংগঠন ত্রিপুরায় পরিস্থিতির খোজ নেওয়ার জন্য ছুটে আসেন।
সত্য অনুসন্ধানের নামে দিল্লিস্থিত আইনজীবীদের এক প্রতিনিধি ত্রিপুরায় এসে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। বহু সাংবাদিক ত্রিপুরায় ওই গুজবের সত্যতা যাচাই করতে আসেন। কিন্ত দেখা গেছে, ত্রিপুরায় সত্যের খোজে এসে অনেকেই উল্টে গুজব ছড়িয়েছেন। এমনই আইনজীবী মুকেশ, আইনজীবী আনসারুল হক আনসারী এবং সাংবাদিক শ্যাম মীরা সিং ত্রিপুরার ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। সত্যের সাথে মিল না রেখেই তাঁরা ওই সমস্ত পোস্ট দিয়েছেন অভিযোগ এনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা রুজু করেছে।
শুধু ওই তিন জন নয়, ত্রিপুরা সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমে গুজব রটানোর অভিযোগে পুলিশ ১৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে। তার মধ্যে ১০২ জনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা হয়েছে। বহু টুইটার একাউন্ট বন্ধ করার জন্য নোটিশ পাঠিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গুজব ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে এমন ১২৮টি পোস্ট চিহ্নিত হয়েছে। তাতে, ৯৪টি টুইটার পোস্ট, ৩২টি ফেইসবুক পোস্ট এবং ২টি ইউটিউব পোস্ট রয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশের দাবি, এখন পর্যন্ত ১২৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। যা প্রমাণ করেছে, ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার মতো কোন ঘটনাই ঘটেনি।
এদিকে, দুই আইনজীবী এবং এক সাংবাদিক ত্রিপুরা পুলিশের দায়ের করা এজাহার বাতিল করার আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশের ওই এজাহারে সংবিধান প্রদত্ত বাক স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। ওই এজাহারে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ ইউএপিএ-তে মামলা রুজু করেছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্না এবং বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুর ও বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চে শুনানি হয়েছে। আদালত ত্রিপুরা পুলিশের এজাহার বাতিলের আবেদন মঞ্জুর করেনি। তবে, আবেদনকারীদের গ্রেফতারিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সাথে পুলিশের তদন্ত কাজ বন্ধ করারও নির্দেশ দেয়নি আদালত। কিন্ত, ত্রিপুরা সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৩ জানুয়ারী ওই আবেদনের উপর পুণরায় শুনানি হবে। তার আগেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ওই মামলায় পর্যালোচনা হোক চাইছেন।
ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক ভি এস যাদব বলেন, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়ানোর কারণে সারা দেশে ত্রিপুরা বদনাম হয়েছে। শুধু তাই নয়, ত্রিপুরায় কিছুটা অশান্তির পরিবেশ কায়েম হয়েছিল। তাই, বিভিন্ন ধারায় মামলার পাশাপাশি ইউএপিএ ধারাতেও মামলা রুজু হয়েছে। এখন মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন সাংবাদিক এবং আইনজীবিদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ মামলা পর্যালোচনা করা হোক। তাই, এডিজি ক্রাইম ব্রাঞ্চকে তদন্ত কাজে আরও গতি আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাথেই, সাংবাদিক এবং আইনজীবিদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলার পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।