নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ জুলাই ।।পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন রক্তক্ষয়ী ছিল, আজ অকপটে এ-কথা স্বীকার করলেন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। অথচ, তাঁর পাশে বসে তৃণমূলের আরেক মন্ত্রী মলয় ঘটক দাবি করেন, ত্রিপুরায় নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস দেশের ইতিহাসে অন্য কোন রাজ্যে দেখা যায়নি। তাই, আজ সন্ত্রাস ইস্যুতে তৃণমূল নেতাদের সমস্ত অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়ে উল্টে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের তথ্য দিল প্রদেশ বিজেপি।
আজ আগরতলা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন রক্তক্ষয়ী ছিল। এ-কথা বলেই তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। তিনি বলেন, বিজেপি নির্বাচন জয়ে সর্বোত চেষ্টা করেছে। কিন্ত, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তৃণমলেই আস্থা রেখেছেন। এদিন তৃণমূলের মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ত্রিপুরার মতো নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস দেশের ইতিহাসে অন্য কোন রাজ্যে হয়নি। তাঁর কথায়, পশ্চিমবঙ্গে ১০ কোটি মানুষের বসবাস। সেই তুলনায় ত্রিপুরায় ১০ ভাগের এক ভাগ মানুষ রয়েছেন। অথচ সন্ত্রাস অনেক বেশি হয়েছে। তাতে মনে হচ্ছে, তিনি বুঝাতে চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা বেশি সেই তুলনায় ত্রিপুরায় সন্ত্রাস অধিক হয়েছে। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাস হয়নি, তা তিনি জোর গলায় বলেননি।
বরং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, সেই প্রশ্নের স্পষ্ট কোন উত্তর দেননি মলয় বাবু। তবে বুঝাতে চেয়েছেন, মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা বিজেপি সমর্থিত। কিন্ত, তাঁরা তদন্তে গিয়ে আক্রান্তের ঘটনায় কোন সদুত্তর দেননি মলয় ঘটক।
আজ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ বিজেপি তৃণমূলের মন্ত্রিদের অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য তুলে ধরেছে। বিজেপি প্রদেশ প্রধান মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ১৫ দিন আগে পর্যন্ত কিছু তথ্য সংগ্রহ হয়েছে। তাঁর কথায়, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনোত্তর ৩০১০ জন বিজেপি কর্মী সরাসরি আক্রান্ত হয়েছেন, ৯৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, ৬৯৭৬ জনের বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে এবং ৯২ জন বিজেপি কার্যকর্তাকে প্রশাসনিকভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। সাথে তিনি যোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনোত্তর ৪০ জন বিজেপি সমর্থক নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন, ৫৪ জনকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চেষ্টার মাধ্যমে বর্বরোচিত নির্যাতন করেছে, ১ লক্ষাধিক মানুষ বাড়িঘরে ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছেন এবং ২০ হাজারের অধিক মানুষ এখনো নিজ নিজ এলাকায় ঢুকতে পারছেন না।
তাঁর দাবি, ত্রিপুরার মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রের প্রমাণ আজ পাওয়া গিয়েছে। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রিরা সেই উদ্দেশ্যেই ত্রিপুরায় এসেছেন। তাঁরা আই-প্যাকের সহায়তায় ত্রিপুরায় অস্থিরতা কায়েম করতে চাইছে। বামেদের সাথে মিলে ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ত্রিপুরার মানুষ রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই সচেতন। তাঁরা তৃণমূলের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না।