নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ জুলাই।। উত্তর-পূর্বাঞ্চল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, পশুপাখি ও ঐতিহ্যময় সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। এসব সম্পদের কারণে এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিশেষ করে ইকো ট্যুরিজম বিকাশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আজ শিলংয়ে নর্থ-ইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন। সাথে তিনি যোগ করেন, ত্রিপুরা সরকার নর্থ ইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের পরামর্শে ২১টি প্রকল্প চিহ্নিত করেছে।
তিনি বলেন, জিও স্পেসিয়াল প্রযুক্তি ও পর্যটনের মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে। পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের স্থায়ী উন্নয়নের ক্ষেত্রে জিও স্প্যাশিয়াল প্রযুক্তিকে একটি পদ্ধতি ও প্রযুক্তির ভান্ডার বলা যেতে পারে। যার প্রযোজ্যতা এই ক্ষেত্রে রয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যগুলির পর্যটন সম্ভাবনাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে জিও স্পেসিয়াল প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চল মূলত: পাহাড়ি অঞ্চল হওয়াতে এখানে জলের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে, ভূমি সংরক্ষণ ও জমির গুণমান উন্নয়নে চেকড্যাম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বন্যার সময় জল ছাড়া, পলি পরিবহণ, গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ইত্যাদির জন্য চেকড্যামের প্রচলন রয়েছে এই অঞ্চলে। ভূগর্ভে জল সঞ্চয় ও সংরক্ষণ বৃদ্ধির জন্য সঠিক জায়গায় ওয়াটার হার্ভেস্টিং খুবই দরকার। তাই ওয়াটার হার্ভেস্টিং কাঠামো তৈরির সময় জিআইএস এবং রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইন্টেগ্রেটেড ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে ত্রিপুরায় ১৮২৫টি চেকড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
তাছাড়া বিভিন্ন জায়গার স্যাটেলাইট চিত্রের উপর ভিত্তি করে ত্রিপুরা স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার একটি তুলনামূলক গবেষণা করে দেখেছে সরকারি নেওয়ার আগে এবং পরে কতটুকু ব্যবধান হয়েছে এক্ষেত্রে। এই গবেষণার ফলাফল ভূবন জিওআইসিটি পোর্টালে রয়েছে। এই প্রযুক্তি সমূহ আরও বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে এই অঞ্চলের রাজ্যগুলি আরও বেশি লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মূলত জুম চাষ ও সমতল জমিতে স্থায়ী কৃষি চাষ দেখা যায় এবং প্রায় চার ভাগের তিনভাগ জনসংখ্যা কৃষিকাজ ও সংশ্লিষ্ট কাজ করে জীবনধারণ করে। এই অঞ্চলের বিচিত্র ভূমিগত চরিত্রকে সামনে রেখে কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নে জিও স্পেসিয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। রিমোট সেন্সিং-এর মাধ্যমে উপযুক্ত শস্য নির্বাচন করে ভালো ফসল পাওয়া যেতে পারে৷ উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বর্তমান ক্রপিং-এর ধরণকেও বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দেন তিনি।
এই অঞ্চলে ফসল কাটার ব্যাপারে অধিক পরিকল্পনা ও নজরদারির লক্ষ্যে একটি মোবাইল অ্যাপ এবং ড্যাশবোর্ডও তৈরি করা যেতে পারে৷ বিগত তিন বছরে জিআইএস এবং রিমোট সেন্সিং-এর ক্ষেত্রে ত্রিপুরায় প্রভূত অগ্রগতি হয়েছে। তাছাড়া রাজ্যে জিআইএস ভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ল্যান্ড ব্যাঙ্কও তৈরি করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই ব্যবস্থা শিল্প স্থাপনে জমির সহজলভ্যতা দেখিয়ে ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াকে সহজ করে দেয়। আগরতলা পুর এলাকায় ত্রিপুরা ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের গ্যাস পাইপলাইনের নেটওয়ার্ক তৈরি সম্পূর্ণ হয়েছে। ফলে যে কোনও খোদাই কার্য করার সময় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, বলেন তিনি৷
নর্থ ইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের (এনইএসএসি) গত জানুয়ারির সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মহাকাশ প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আনন্দের সাথে জানান যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী ত্রিপুরা সরকার ইতিমধ্যে একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেছে ও নর্থ ইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের পরামর্শে ২১টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে দুটি প্রকল্প ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রকল্পগুলির একটি হচ্ছে রাজ্যের নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন যোগ্য কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে জিও স্পেসিয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার এবং অপরটি হচ্ছে উত্তর পূর্বাঞ্চল পরিষদের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নযোগ্য পর্যটন ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহার। এই কর্ম পরিকল্পনাতে আগর চাষের আওতাধীন এবং সম্ভাব্য এলাকার ম্যাপিং করারও পরিকল্পনা রয়েছে, কেননা আগর চাষের পরিমাণ বাড়াতে পারলে অর্থনীতিতেও ভালো প্রভাব পড়বে।