BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় এলেন কিশোর বর্মণ, নিয়োজিত প্রদেশ বিজেপির নতুন সাধারণ সম্পাদক পদে

আগরতলা, ২০ জুলাই (হি.স.) : ছক পুরনো। তবে, নতুন দায়িত্বে নয়া চেহারা ত্রিপুরায় বর্তমান শাসকের ২০২৩ নির্বাচনের কামান সামলাবেন। সেনাপতি নয়, তবে প্রধান সৈনিকের মতোই ত্রিপুরার সন্তান কিশোর বর্মণ বিজেপি-র শক্তিবৃদ্ধি করবেন। অন্তত এমনটাই দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে রাজ্যে এসেছেন তিনি। ঠিক যেমনটা ২০১৫ সালে বিপ্লব কুমার দেব দিল্লি থেকে ত্রিপুরায় এসেছিলেন। কল্পনার বাইরে গিয়ে বামদুর্গ তছনছ করে দিয়েছিলেন তিনি। এখন দুর্গ সামলানো তাঁর একমাত্র লক্ষ্য বলেই মনে করা হচ্ছে।

আজ আগরতলায় এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রাক্তন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) তথা ত্রিপুরার নলছড় কেমতলির বাসিন্দা কিশোর বর্মণ। রাজ্যে আসামাত্র প্রদেশ সভাপতি তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োজিত করেছেন। কিশোরের দাবি, বুথ স্তরে কাজ করা আমার খুবই পছন্দের। ত্রিপুরায় আসামাত্রই এই দায়িত্ব পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। এখন বুথকে আরও শক্তিশালী করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। প্রদেশ সভাপতির মতে, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে। তাঁর যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বুথগুলিকে অধিক শক্তিশালী করার দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবও তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।


১৯৮০ সালে ত্রিপুরার সিপাহিজলা জেলার নলছড় কেমতলি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন কিশোর বর্মণ। ছাত্র জীবন থেকে তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত। ২০০০ সালে এবিভিপি-তে যোগদানের মাধ্যমে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত তিনি ত্রিপুরায় এবিভিপি-র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গেও তিনি সংগঠনের দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি এবিভিপি-র রাষ্ট্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ বিজেপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-এর দায়িত্বে ছিলেন। সদ্যসমাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তিনি উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে ছিলেন।

তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে উত্তরবঙ্গে বিজেপি ৫৪টি আসনের মধ্যে ৩০টি আসনে জয়ী হয়েছে। ইতিপূর্বে লোকসভা নির্বাচনেও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির দারুণ ফলাফলের পেছনে কিশোর বর্মণের যথেষ্ঠ অবদান ছিল, এমনটাই দলীয় নেতৃত্ব মনে করেন। তাই তাঁকে এখন ত্রিপুরার দায়িত্বে পাঠিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। দলীয় সূত্রের খবর, কিশোর বর্মণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের খুবই ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।


আজ বিজেপির প্রদেশ সভাপতি ডা. মানিক সাহা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে আলোচনাক্রমে কিশোর বর্মণকে ত্রিপুরায় দলের প্রদেশ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে। তাই তাঁকে বুথ স্তরে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, বুথগুলিকে আরও সক্রিয় করা, প্রধানমন্ত্রীর মন-কি বাত পৌঁছে দেওয়া এবং সামগ্রিক বিষয়ে রিপোর্টিঙের দায়িত্ব এখন থেকে তাঁকেই পালন করতে হবে।

এদিকে কিশোর বর্মণ বলেন, ১৪ বছর পর ত্রিপুরায় ফিরে এসে আমি খুবই খুশি। তাঁর কথায়, নতুন দায়িত্ব, সাথে নতুন চ্যালেঞ্জ ঘরে ফেরার আনন্দকে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন কাজ অনেক সহজ হবে। কারণ, নিজের জায়গায় অভিভাবকদের সাথে কাজ করার আনন্দই আলাদা। তিনি বলেন, আজ প্রদেশ সভাপতি আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁর দাবি, বুথস্তরে কাজ করতেই সব থেকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাই বুথকে শক্তিশালী করার দায়িত্বই আমাকে দেওয়া হয়েছে। তিনি এই দায়িত্ব তাঁর কাঁধে তুলে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।


মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ টুইট বার্তায় বলেন, প্রদেশ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্তির জন্য কিশোর বর্মণ অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। তাঁর নিষ্ঠা এবং কাজের প্রতি দৃঢ় মানসিকতা দলকে আরও অনেক শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। রাজ্যের ৩৭ লক্ষ মানুষের উন্নয়নের কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন তিনি।

সূত্রের খবর, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে কিশোর বর্মণ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সাথেও যুক্ত ছিলেন। তিনি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের রাষ্ট্রীয় সম্পাদক পদে তিনবার মনোনীত হয়েছেন। দীর্ঘ সময় তিনি পশ্চিমবঙ্গে কাটিয়েছেন। বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও তাঁর অংশীদারিত্ব রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, ত্রিপুরায় দলের নতুন মুখ হিসেবে কিশোর বর্মণ খুব শীঘ্রই উঠে আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ত্রিপুরায় বিজেপিকে আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা নেবে বলে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।


রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, কিশোর বর্মণের ত্রিপুরায় প্রবেশ অনেকটা বিপ্লব দেবের কায়দায় হয়েছে। ২০১৫ সালে এভাবেই উদয়পুরের ছেলে দিল্লি থেকে ত্রিপুরায় এসে বিজেপির হাল ধরেছিলেন। আজ ত্রিপুরায় বিজেপি শাসকের চেয়ারে বসেও নানাভাবে বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছে। অন্তত, দলের ড্যামেজ কন্ট্রোলে কিশোর বর্মণ নির্ণায়কের ভূমিকা নেবেন, তা মনে করা ভুল হবে না। কারণ, ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছে বিজেপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *