আগরতলা, ৯ জুলাই (হি. স.) : ত্রিপুরায় প্রত্যেক বছরের মত এ-বছরও রাজ্যের পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গতবছরের তুলনায় এবার প্রাদুর্ভাবের হার কিছুটা বেশী হয়েছে। এবছর এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার লোক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত দুই বছর ধরে করোনার প্রকোপে স্বাস্থ্য দফতরে কর্মীর অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক আধিকারিক। তবে, আগামী কিছুদিনের মধ্যে দফতরের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা কাজে যোগ দেবেন। এমনটাই আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, তখন ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা পরিষেবা আরও ভালভাবে প্রদান করা সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের ওই আধিকারিকের কথায়, প্রত্যেক বছর জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত ত্রিপুরায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। তাঁর বক্তব্য, এই বর্ষার মরশুমে জনজাতিরা জুম চাষ করতে পাহাড়ে যান। কেউ কেউ তাড়াতাড়ি চলে আসেন। আবার অনেকেই তিনমাস পর্যন্ত পাহাড়েই থাকেন। এই সময়ে তারা কেউ কোন নিয়ম মেনে চলেন না। তাদেরকে প্রত্যেকবার কিছু নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ মেনে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিবারই তাঁরা দফতরের বিধি নিষেধকে অবহেলা করেন। ফলে অনেক সময় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।
তাঁর দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগেই নমুনা পরীক্ষা করার জন্য ওই জুমিয়া জনজাতিদের বাড়ীতে যান। কিন্তু তাদেরকে তখন বাড়িতে না পাওয়ার কারনে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। ফলে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলেও সময় মতো চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় মৃত্যু হচ্ছে। তাঁর দাবি, ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচতে তাঁদেরকে দফতরের তরফে ওষধ এবং মশারী দেওয়া হয়েছে। তারা সেই মশারিও ব্যবহার করতে চান না, বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন তিনি।
তাঁর বক্তব্য, এমনিতেই গত দুই বছর ধরে করোনার প্রকোপে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীর অভাব রয়েছে। একই স্বাস্থ্য কর্মী করোনার পরীক্ষা করতে হচ্ছে। আবার তাঁকেই ম্যালেরিয়ার নমুনা পরীক্ষার কাজেও ছুটে যেতে হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্য কর্মীরা এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তাঁর দাবি, এমনও এলাকা রয়েছে যেখানে সাত থেকে আট কিলোমিটার পথ হেটে যেতে হচ্ছে। ফলে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যাঘাত হচ্ছে বলে ওই আধিকারিক দাবি করেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধলাই জেলায় গত পঁচিশ দিন ধরে একটি প্রাথমিক সাস্থ্য কেন্দ্রে মাত্র একজন চিকিৎসক কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর উপর ভীষণ চাপ যাচ্ছে, তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। তিনি জানান, আগামী কিছুদিনের মধ্যে দফতরের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা কাজে যোগ দেবেন। তাহলে পরিষেবা আরও বিস্তার সম্ভব হবে।
ওই আধিকারিকের সাফ কথা, পাহাড়ে জনজাতিদের আর্থ ও সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলা পর্যন্ত তাদেরকে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থেকে রক্ষা করা খুবই মুস্কিল হবে।