BRAKING NEWS

ফের মেধা তালিকাভুক্ত চাকুরীপ্রার্থীদের আর্জি মুখ্যমন্ত্রীকে

কলকাতা, ৯ জুন (হি. স.) :  দীর্ঘ ১৩১ দিন ধরে দাবি-অবস্থানে আছেন মেধা তালিকাভুক্ত  চাকুরীপ্রার্থীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ফের চিঠি দিলেন তাঁরা। ইয়াসের তাণ্ডব উপেক্ষা করে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের ৫ নং গেটের সামনে অবস্থান করছেন তাঁরা। 

আবেদনে লিখেছেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন আয়োজিত ২০১৬ সালে প্রথম এসএলএসটি- র মাধ্যমে নবম-দশম থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়ােগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধা তালিকাভুক্ত অপেক্ষমান চাকুরীপ্রার্থী। 

এসএলএসটি-২০১৬ সালের নবম- দশম এবং একাদশ- দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য যে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, উক্ত পরীক্ষায় স্কুল সার্ভিস কমিশন প্রকাশিত গেজেট  (১. লিখিত পরীক্ষা, প্রাপ্ত নম্বর, মৌখিক পরীক্ষার নম্বর সহ পূর্ণাঙ্গ মেধাতালিকা প্রকাশ না করা, ২. বিন্যাস অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গভাবে  ১:১.৪ অনুপাতিক হার না মানা, ৩. সাধারণ মেধাতালিকা প্রকাশের পরেও তাতে একাধিক নতুন নাম যোগ করা, ৪. পরিমার্জিত শূণ্যপদে নিয়োগ না করা, ৫. সামনের সাড়ির প্রার্থীদের বঞ্চিত করে তালিকায় অনেক পিছনের সাড়ির প্রার্থীদের গোপনে নিয়োগ প্রভৃতি না মেনে নিয়োগ করার ফলে আমরা প্রথম পর্যায়ে ডাক পাওয়া প্রার্থীদের সুপরিকল্পিত ভাবে অপেক্ষামান মেধা তালিকায় রেখে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে ডাক পাওয়া প্রার্থীদের সুপরিকল্পিত ভাবে চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ মেধাতালিকা স্বচ্ছ ভাবে প্রকাশ  করলে প্রথম পর্যায়ের প্রার্থীদের চাকরি সুনিশ্চিত হতো। কিন্তু কমিশন সুপরিকল্পিত ভাবে বিজ্ঞপ্তি লঙ্ঘন করার জন্য আমরা যোগ্য অথচ বঞ্চিত হয়েছি।

আপনার উজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে সামনে রেখে কমিশন চরম অবৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ-সিদ্ধির কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। তাই আমরা যোগ্য অথচ বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ২০১৯ সালে প্রেস ক্লাবের সামনে ২৯ দিন ধরে অনশন করেছিলাম। আপনি আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে অনশনের ২৯ তম দিনের সন্ধ্যায় কলকাতার প্রেস ক্লাবের সামনে নবম- দ্বাদশ স্তরের মেধতালিকাভুক্ত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের অনশন মঞ্চে স্বয়ং উপস্থিত হয়ে আমাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে আন্তরিকভাবে আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য উপস্থিত সকল মানুষ এবং প্রচারমাধ্যমগুলির সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যোগ্য প্রার্থীগণ যাতে বঞ্চিত না হয় তার জন্য আপনি সুব্যবস্থা করবেন, প্রয়োজনে আইনের কিছু পরিবর্তন করেও যোগ্য প্রার্থীদের চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করবেন। উক্ত মঞ্চে আপনি বার্তা দিয়েছিলেন বঞ্চিত প্রার্থীদের প্রতি আপনার সহানুভূতি আছে। বঞ্চিত প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে আপনার কোনো আপত্তি নেই, যাতে মেধাতালিকা থেকে ১জনও বঞ্চিত না হয় আপনি  আন্তরিকতা সঙ্গে বিষয়টি দেখবেন। আপনি বলেছিলেন আপনার ওপর বিশ্বাস রাখতে। আপনি কথা দিলে কথা রাখেন। তাই আপনার আশ্বাসবাণীর ওপর আমাদের চরম ভরসা আছে। উক্ত মঞ্চে প্রার্থীদের মধ্য থেকে ৫ জন এবং প্রশাসনিক স্তরে ৫ জন আধিকারিকদের নিয়ে যে কমিটি গঠন করার নির্দেশ আপনি দিয়েছিলেন, সেই কমিটি ২০১৯ সাল থেকে আলোচনা চালিয়ে কী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন সেই বিষয়ে অন্যান্য প্রার্থীদের কাছে এখন ও অজানা। অথচ মঞ্চের তৎকালীন সভাপতি এবং প্রতিনিধিগণ সহ তাদের ঘনিষ্ঠ কিছু অন্যান্য প্রার্থীগণ তালিকায় অনেক পিছনে থাকা সত্ত্বেও সামনের প্রার্থীদের বঞ্চিত রেখে স্কুল সার্ভিস কমিশন গোপনে চাকরিতে নিয়োগ করেছে। উক্ত প্রতিনিধিগণ সহ ঘনিষ্ঠ কিছু প্রার্থী অবৈধ ভাবে কমিশন কর্তৃক চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছে।  আবার লক ডাউনের অন্ধকারে কমিশন গেজেট বিরুদ্ধ এসএমএস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বহু প্রার্থীকে অবৈধভাবে নিয়োগ করেছে। এমনকি যারা পরীক্ষায় পাস করেনি এরকম অনেক প্রার্থী কমিশন নজিরবিহীনভাবে নিয়োগ করেছে। কিন্তু আমরা যোগ্য  মেধা তালিকাভুক্ত প্রার্থীরা আজও চাকরিতে নিয়োগ পাইনি।

যে সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই সমস্যা তো মিটলই না, উপরন্তু বঞ্চিত প্রার্থীদের প্রতিনিধি সহ ঘনিষ্ঠরা চাকরি পেয়ে সরে গেছে। তেমনই প্রশাসনিক ৫ কমিটির তিন জন দায়িত্ব প্রাপ্ত পদাধিকারীর পদ পরিবর্তন হয়ে গেছে (শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়,  স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার,  শিক্ষা সচিব)। আমাদের সমস্যা সমাধান না হওয়ার জন্য আমরা বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ পুনরায় আপনার হস্তক্ষেপ দাবি করছি। যাতে আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি কার্যকর করে আমাদের যন্ত্রণাময় অসহায় প্রার্থীদের চাকরিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়োগের সুব্যবস্থা করা হয় সেই মর্মে আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করতে করুনাময়ী বাসস্ট্যান্ডের নিকট সল্টলেকের ৫ নম্বর গেটের সামনে দ্বিতীয়বারের জন্য অবস্থান ও অনশন চালিয়ে যাচ্ছি।

আমাদের মহামূল্যবান জীবন থেকে পাঁচ বছর অতিবাহিত। এখন আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা নতুন করে পরীক্ষা হলে পরীক্ষায় বসার সুযােগ পাবেন না। কারণ বয়স অতিক্রান্ত, সিলেবাস পরিবর্তন এবং দীর্ঘদিন পরীক্ষা না হওয়ায় বিশাল প্রতিযােগতায় সাফল্য অর্জন করা আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। একমাত্র আপনিই পারেন আমাদের বাঁচাতে, আপনিই আমাদের আশা-ভরসা ও শেষ আশ্রয়।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ এই  স্লোগান কে সামনে রেখে আমরা এবং আমাদের পরিবার গুলি সহ বাংলার জনতা  আন্তরিক ভাবে বিপুল সংখ্যক ভোট দিয়ে মা মাটি মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেছিলাম। আপনাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে পুনরায় পেয়ে আমরা ভীষণ গর্বিত। আগামী ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাননীয়া আপনাকেই চাই। আমরা আপনার অনুগামী। আপনি এগিয়ে চলুন, আমরা আপনার সাথে আছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *