করোনা-র সংক্রমণ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী, নিগম এলাকায় সম্পূর্ণ কারফিউয়ের সময়সীমা বেড়ে ৫ জুন, ২৭ মে থেকে সারা ত্রিপুরায় বলবৎ

আগরতলা, ২৫ মে (হি.স.) : করোনা-র সংক্রমণ ত্রিপুরায় ক্রমশ ঊৰ্ধ্বগামী। ফলে, করোনা-কারফিউ আরও কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রিপুরা মন্ত্রিসভা। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এ-বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, পুর নিগম এলাকায় সম্পূর্ণ করোনা-কারফিউ আরও কঠোরতার সাথে সমস্ত নগর সংস্থা এলাকা সহ ৫ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। সাথে তিনি যোগ করেন, নগর সংস্থা এলাকা ছাড়া সারা ত্রিপুরায় আগামী ২৭ মে ভোর ৫টা থেকে ৫ জুন পর্যন্ত সম্পূর্ণ করোনা-কারফিউ বলবৎ থাকবে। তবে, করোনা-কারফিউয়ের কারণে গরিব মানুষের আর্থিক সহায়তায় ত্রিপুরা সরকার ৭ লক্ষ পরিবারকে ১০০০ টাকা করে সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্কে খাতায় পাঠিয়ে দেবে, বলেন তিনি।

এদিন তিনি বলেন, পুর নিগম এলাকায় করোনা-র সংক্রমণ ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী। এমন-কি অন্যান্য স্থানেও নির্দিষ্ট ব্লক এলাকায় করোনা-র প্রকোপ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এক্ষেত্রে পশ্চিম এবং খোয়াই জেলায় সংক্রমণ বৃদ্ধির হার যথেষ্ট উদ্বেগজনক। পুর নিগম এলাকায় করোনা সংক্রমণের এক তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, গত ৭ দিনে ত্রিপুরায় গড় সংক্রমণের হার ২১.৩৭ শতাংশ। এক্ষেত্রে গত ১৬ মে সংক্রমণের হার যেখানে ছিল ১৭.২২ শতাংশ, ২৪ মে তা বেড়ে হয়েছে ২২.৮২ শতাংশ।

এ-বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, গত ৭ দিনে জেলাভিত্তিক গড় সংক্রমণে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ১২.৩২ শতাংশ, গোমতি জেলায় ৬.৫৬ শতাংশ, ধলাই জেলায় ৫.০১ শতাংশ, খোয়াই জেলায় ১১.০৬ শতাংশ, সিপাহিজলা জেলায় ৫.৩৫ শতাংশ, দক্ষিণ জেলায় ৪.৩৩ শতাংশ, উনকোটি জেলায় ৫.১৭ শতাংশ এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলায় হার ৪.০৫ শতাংশ। ফলে, জনগণের স্বার্থে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

মন্ত্রী নাথ বলেন, জন-নিরাপত্তায় ত্রিপুরা মন্ত্রিসভা আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুর নিগম এলাকায় সম্পূর্ণ করোনা-কারফিউ এখন ৫ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। সাথে সমস্ত নগর সংস্থা এলাকায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে সমস্ত মুদি দোকান, মাছ-সবজি বাজার সকাল ৬-টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। জরুরি পরিষেবা ছাড়া সমস্ত কিছু কাল থেকে বন্ধ থাকবে। আদেশ অমান্য হলে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। তিনি জানান, আন্তঃরাজ্য যাতায়াত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এক্ষেত্রে সরকারি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে যুক্ত যানবাহন ছাড়া সমস্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সাথে তিনি যোগ করেন, সরকারি কার্যালয়ের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত অফিস খোলা থাকবে, বাকি সমস্ত সরকারি কার্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে, নগর সংস্থা ব্যতীত সারা ত্রিপুরায় আগামী ২৭ মে সকাল থেকে সম্পূর্ণ করোনা-কারফিউ বলবৎ হবে। ৫ জুন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এক্ষেত্রে পুর নিগম এবং নগর সংস্থার মতোই সমস্ত বিধিনিষেধ কার্যকর হবে। তাঁর কথায়, ত্রিপুরাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থেই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আজ রাতেই বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। তবে, করোনা-কারফিউয়ের কারণে গরীব মানুষের আর্থিক সহায়তায় ৭ লক্ষ পরিবারের প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক খাতায় ১০০০ টাকা করে পাঠাবে ত্রিপুরা সরকার। তাতে, রাজ্যের কোষাগার থেকে ৭০ কোটি টাকা ব্যয় হবে, বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর দাবি, করোনাকালে গরিবের জন্য কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, অন্ত্যোদয়, প্রাইরোটি গ্রুপ এবং গরিব এপিএল পরিবারগুলিকে ওই আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। ত্রিপুরায় প্রায় ৯ লক্ষ ২৯ হাজার পরিবার রয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ লক্ষ ১৩ হাজারের অধিক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *