BRAKING NEWS

বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি চান বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসু

কলকাতা, ৭ মে (হি. স.) : বিধানসভা ভোটে শোচনীয় ভরাডুবির দায়িত্ব নিয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি নিতে চান সিপিআইএমের বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসু। বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির শীর্ষ নেতাদের কাছে নিজের মনোভাবের কথা জানিয়েও দিয়েছেন তিনি।

সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের পাশপাশি ভাইজান আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন বিমানবাবু। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ ভেবেছিলেন, অন্তত ধর্মনিরপেক্ষ ও সংখ্যালঘু মনোভাবাপন্ন ভোটারদের সমর্থনে বাজিমাত করা যাবে। কিন্তু তাঁর সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু বামফ্রন্টের অন্দরেই নয়, এমনকী বাম মনোভাবাপন্ন বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মনেও অসন্তোষ দানা বাঁধে। অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিয়ে প্রশ্ন তোলেন, বিজেপিকে রোখার দোহাই পেড়ে কীভাবে আব্বাস সিদ্দিকীর মতো উগ্র ধর্মীয় নেতার সঙ্গে হাত মেলাল তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ানো বামপন্থীরা।

ভোট পর্বে সেই সমালোচনাকে পাত্তাই দেননি বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু সহ সিপিআইএমের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ। কিন্তু ইভিএম খুলতেই দেখা যায়, ভোটে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। দু’পক্ষের একজন প্রার্থীও জিততে পারেননি। কেন জাত-কুল দুই খোয়ানো হল সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সিপিআইএমের তিন নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য, কান্তি গঙ্গ্যোপাধ্যায় ও অশোক ভট্টাচার্যের মতো নেতারা আইএসএফের সঙ্গে জোট গড়া নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে তুলোধনা করেন।

ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়, সিপিআই সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়রাও ক্ষোভ উগরে দিয়ে পরোক্ষে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে কাঠগড়ায় তোলেন। কার্যত আইএসএফের সঙ্গে জোট বাঁধার খলনায়কের আখ্যা পাওয়ায় ভোটে ব্যর্থতার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেন বিমান বসু।

আইএসএফের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের জোট মানুষ ভালভাবে নেয়নি। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল। তাই যেখানে আব্বাস সিদ্দিকির দলের প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন, সেখানে অন্তত ধর্মনিরপেক্ষ জনতার ভোট পায়নি জোট। সেই ভোট শাসকদলের দিকে চলে গিয়েছে। একই অভিযোগ আরেক শরিক আরএসপির। তাদের বক্তব্য, কলকাতা এবং আশপাশের এলাকায় তাদের কোনও আসন দেওয়া হয়নি। নিশ্চিত পরাজয় হবে বেছে বেছে এমন আসনই তাদের দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, রাজ্যের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বামফ্রন্ট অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। ঘুরে দাঁড়ানোর আশু সম্ভাবনা নেই। তাই গুরুত্বহীন পদে থাকার কোনও মানে হয় না বুঝতে পেরেই সরে দাঁড়াতে চাইছেন প্রবীণ সিপিআইএম নেতা।

এদিকে, ভোটে স্রেফ ভরাডুবিই নয়। যাকে বলে, বিপর্যয় হয়েছে। আর এই বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে বসে বৃহস্পতিবার অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয় বামফ্রন্টের বৈঠক। বড় শরিক সিপিএমকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায় শরিকরা। ফরওয়ার্ড ব্লকের অভিযোগ, কার্যত তাদের অন্ধকারে রেখে এই জোট হয়েছে। তাদের বরাদ্দ আসন আইএসএফকে দেওয়া হয়েছে। তেমনই অন্যান্য শরিকের আসনও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে একের পর এক তিরে বিদ্ধ হন আলিমুদ্দিনের কর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *