BRAKING NEWS

‘মহাসংক্রামক’ হয়ে উঠছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, সংক্রমণ রুখতে নৈশ কার্ফু বিভিন্ন রাজ্যে, টিকাকরণের পর্যালোচনায় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

নয়াদিল্লি, ১৭ এপ্রিল (হি.স.) :  দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে বিপর্যস্ত গোটা দেশ। দৈনিক করোনা-সংক্রমণ ভেঙে ফেলছে একের পর এক পুরানো রেকর্ড, সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে ভারতে ২.৩৪-লক্ষের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেল দৈনিক করোনা-সংক্রমণ। এই সময়ে ভারতে মৃত্যু হয়েছে ১,৩৪১ জনের। শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছে, শুক্রবার সারাদিনে ভারতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২,৩৪,৬৯২ জন, বিগত ২৪ ঘন্টায় সমগ্র দেশে করোনা কেড়ে নিয়েছে ১,৩৪১ জনের প্রাণ। ভারতে সক্রিয় করোনা-রোগীর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১৬.৭৯-লক্ষের (১১.৫৬ শতাংশ) গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই সুস্থতা স্বস্তি দিচ্ছে, শুক্রবার সারা দিনে ভারতে করোনা-মুক্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৩৫৪ জন। ফলে শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে মোট সুস্থ হয়েছেন ১,২৬,৭১,২২০ জন করোনা-রোগী (৮৭.২৩ শতাংশ)।

দেশে হু হু করে বেড়েই চলেছে সক্রিয় করোনা-রোগীর সংখ্যা। বিগত ২৪ ঘন্টায় বৃদ্ধির সংখ্যা ১,০৯,৯৯৭ জন। বিগত ২৪ ঘন্টায় ভারতে করোনা-মুক্ত হয়েছেন ১,২৩,৩৫৪ জন। শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে করোনা-আক্রান্ত ১,৭৫,৬৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে (১.২১ শতাংশ)। বিগত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ১,৩৪১ জনের। ভারতে সুস্থতার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১,২৬,৭১,২২০ জন (৮৭.২৩ শতাংশ)। বিগত ২৪ ঘন্টায় ভারতে চিকিৎসাধীন করোনা-রোগীর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে, ১,০৯,৯৯৭ জন বেড়ে এই মুহূর্তে ভারতে মোট ১৬,৭৯,৭৪০ জন করোনা-রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন (১১.৫৬ শতাংশ)।

এই অবস্থায় শনিবার রাতে রিভিউ মিটিংয়ে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পর্যালোচনা বৈঠকে দেখা হয় দেশের করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করার দিকগুলো। আলোচনায় উঠে আসে দেশের ভ্যাকসিন মজুতের পরিমাণও। বিভিন্ন দফতরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা বৈঠকে উপস্থিত থাকেন।

দেশে সুনামির মত আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। লাগাতার বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট অনুযায়ী আক্রান্তের নিরীখে ভারত আবার নতুন রেকর্ড তৈরি করল। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ভাইরাস থাবা বসিয়েছে ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬৯২ জনের শরীরে। এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৬০৯ জন। কোরোনার বলি হয়েছে ১ হাজার ৩৪১ জন। যা শুক্রবারের তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি।এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৫০জন মানুষ করোনার বলি হয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৩৫৪ জন। এইমুহূর্তে দেশে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৪০জন। এখনও পর্যন্ত কোভিড টিকা পেয়েছেন দেশের ১১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬৪১ জনকে। তবে সংক্রমণ তাতেও রোখা যাচ্ছে না।

গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসেই মনে হয়েছিল, স্বস্তি ফিরিয়ে করোনা কমছে। সম্ভবত তার পুরোপুরি বিদায়ের ক্ষণও এসেই গিয়েছে। কিন্তু এ বঙ্গ এখনও রঙ্গে ভরা। সেই রঙ্গের নাম ‘ভেরিয়্যান্ট’। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে যা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আতঙ্ক, কারণ, করোনাভাইরাসের এই নতুন রূপ (ভেরিয়্যান্ট) দ্রুত ‘মিউটেশন’ করে।

মহারাষ্ট্র থেকে পশ্চিমবঙ্গ— করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই নতুন রূপ। এখনও পর্যন্ত ভারতেই এই রূপটির হদিশ মিলেছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে পশ্চিমবঙ্গে গত রবিবার পর্যন্ত যত জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই এই ভারতীয় রূপের শিকার। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের কথায়, এক জনের দেহ থেকে অন্য জনের দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে ভাইরাসের এই রূপ অন্যান্য নতুন রূপের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয়। সেটাই আতঙ্কের কারণ।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ধারনা, মহারাষ্ট্র থেকেই এই রূপটি এ রাজ্যে এসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর রাজ্যের বহু পরিযায়ী শ্রমিক ও বেসরকারি সংস্থাগুলির কর্মচারী আবার মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জেলায় ফিরে গিয়েছিলেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গোড়া থেকেই ভয়াবহ হয়ে ওঠায়, আর তার ভরকেন্দ্র মূলত মহারাষ্ট্র হওয়ায় তাঁদের একটা অংশ ইতিমধ্যেই আবার পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসেছেন। তাঁদের মাধ্যমেই এই ডাব্‌ল মিউট্যান্ট রূপটি রাজ্যে ঢুকেছে বলে মনে করা হচ্ছে। পার্থপ্রতিম অবশ্য এই যুক্তিও মানতে রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘পর্যাপ্ত তথ্যাদি হাতে না আসা পর্যন্ত এমন কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না। কোন রাজ্য থেকে ডাব্‌ল মিউট্যান্ট পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে তা নিখুঁত ভাবে জানতে হলে কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের প্রয়োজন। যা গত বছর লকডাউন উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর কথায়, ‘‘হু-র গাইডলাইন অনুয়ায়ী কোনও দেশের জনসংখ্যার প্রতি ৩০০ জনে একটি করে জিনোম সিকোয়েন্সিং হওয়া উচিত। ভারতে দু’টি ঢেউ মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১০ হাজারেরও কম সংখ্যক মানুষের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা সম্ভব হয়েছে। আগের মতো কনট্যাক্ট ট্রেসিং বা ক্লাস্টার ম্যাপিংও করা হচ্ছে না’’

করোনা সংক্রমণ রোধ করতে মাস্ক পরার দিকে বারবার জোর দিতে বলছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। এবার রেল এই নিয়ে নির্দেশিকা জারি করল। রেলের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ট্রেনে, প্ল্যাটফর্মে বা রেলের কোনও জায়গায় মাস্ক না পরলে জরিমানা করা হবে।

দেশে ক্রমশ ভয়াবহ হচ্ছে করোনা। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ভাইরাস থাবা বসিয়েছে ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬৯২ জনের শরীরে। এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৬০৯ জন। কোরোনার বলি হয়েছেন ১ হাজার ৩৪১ জন। যা শুক্রবারের তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি। এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৫০জন মানুষ করোনার বলি হয়েছেন। এই সংক্রমণে লাগাম টানতে ইতিমধ্যেই একাধিক রাজ্যে শুরু হয়েছে আংশিক লকডাউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *