BRAKING NEWS

এডিসি নির্বাচনে তিপ্রা মথার উত্থানে নির্দলীয় প্রার্থীদের অবদান অসীম

আগরতলা, ১২ এপ্রিল (হি.স.)৷৷ ত্রিপুরায় এডিসি নির্বাচনে তিপ্রা মথা-র উত্থানে নির্দলীয় প্রার্থীদের বিরাট অবদান রয়েছে৷ কারণ, চারটি আসনে নির্দলীয় প্রার্থী প্রদ্যুত মাণিক্যদের জেতাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে৷ শুধু তা-ই নয়, বিজেপি-আইপিএফটি জোটের একটি আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই পরিণাম হিসেবে তিপ্রা মথা ফায়দা তুলে নিয়েছে৷ ফলস্বরূপ, এডিসি নির্বাচনে প্রদ্যুত মাণিক্যের দল ১৬টি আসনে জয় হাসিল করতে পেরেছে৷ তাঁদের জোটসঙ্গী আইএনপিটি দুটি আসনে জয়ী হয়েছে৷


অপ্রত্যাশিতভাবে এডিসি নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়েছে তিপ্রা মথা৷ সদ্য আত্মপ্রকাশের পর খুবই অল্প সময়ে এডিসি নির্বাচনের সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে৷ ইতিপূর্বে জনজাতিভিত্তিক আঞ্চলিক দল হিসেবে আইপিএফটি ২০০০ সালে এডিসি নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল৷ কিন্তু তখন বন্দুকের নলের মুখে এডিসি দখল নেওয়া হয়েছিল বলে বামেরা আজও সমালোচনা করেন৷ এর পর দীর্ঘ ১৫ বছর একটানা এডিসি শাসন করেছে বামফ্রন্ট৷ স্বাভাবিকভাবেই, এ-বছর এডিসি নির্বাচনে জনজাতিভিত্তিক আঞ্চলিক দল হিসেবে তিপ্রা মথা-র ফলাফল চমকপ্রদ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷


এদিকে নির্বাচনে অস্বিত্বের লড়াইয়ে সফল বলে বিজেপি দাবি করেছে৷ অবশ্য, শাসক দলের এই দাবি উড়িয়ে দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই৷ কারণ, জোট ধর্ম বজায় রাখতে মাশুল গুণতে হচ্ছে বিজেপি-কে৷ ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট, আইপিএফটি-র সাথে জোট না হলে বিজেপি আরও বেশি আসনে জয়ী হতে পারত৷ তবে, নির্দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে, তাতে আখেরে বিজেপি জোটের ক্ষতি হয়েছে, তিপ্রা মথা ভোট ভাগাভাগির ফায়দা তুলে নিয়েছে৷


ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দামছড়া-জম্পুই আসনে তিপ্রা মথা-র প্রার্থী ৮,১৭৮টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন৷ অথচ, আইপিএফটি প্রার্থী পেয়েছে ৫২৭২টি ভোট এবং নির্দল প্রার্থী ডিকে রিয়াঙের ঝুলিতে গেছে ৫,৪১১টি ভোট৷ তেমনি, গঙ্গানগর-গণ্ডাছড়া আসনে নির্দল প্রার্থী ভূমিকা নন্দ রিয়াং ৬৩০৭টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন৷ ওই আসনে আইপিএফটি প্রার্থী পেয়েছেন ৩,৫৫২টি ভোট এবং তিপ্রা মথা-র দখলে গেছে ৬,২৪১টি ভোট৷


একইভাবে, অম্পিনগর আসনে নির্দলীয় প্রার্থী ৩২১২টি ভোট পাওয়ায় তিপ্রা মথা অনায়াসে জয়ী হয়েছে৷ কারণ, মথা-র প্রার্থী পেয়েছেন ৯০৪৮টি ভোট এবং আইপিএফটি প্রার্থীর দখলে গেছে ৭৫৩৯টি ভোট৷ তাতে স্পষ্ট, নির্দলীয় প্রার্থীর জন্য ওই আসন আইপিএফটি-র হাতছাড়া হয়েছে৷ এখানেই শেষ নয়৷ রাইমাভ্যালি আসনেও নির্দলীয় প্রার্থী খুব সহজে তিপ্রা মথা-কে জিততে সহায়তা করেছে৷ ওই আসনে বিজেপি ৫৪৮০টি এবং নির্দলীয় প্রার্থী বিকাশ চাকমা ৫৪৩৭টি ভোট পেয়েছেন৷ অথচ, ৬৫০১টি ভোট পেয়ে তিপ্রা মথা জয়ী হয়েছেন৷ পূর্ব মুহুরিপুর-ভুরাতলি কেন্দ্রেও নির্দলীয় প্রার্থী সাত হাজারের অধিক ভোট পেয়েছেন এবং আইপিএফটি প্রার্থী পেয়েছেন ৩২০২টি ভোট৷ অন্যদিকে, ১১২২৮টি ভোট পেয়ে তিপ্রা মথা জয়ী হয়েছে৷

অবাক করার বিষয় হল, জোট সঙ্গী আইপিএফটি-র সাথে এডিসি নির্বাচনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে তিপ্রা মথা একটি আসন দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছে৷ নতুনবাজার-মালবাসা কেন্দ্রে বিজেপি ১২৭২৮ ভোট এবং আইপিএফটি ১২৭০টি ভোট পেয়েছে৷ অথচ, তিপ্রা মথা ১৩৮৫৫ ভোট পেয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে৷
নির্বাচনী ফলাফলে স্পষ্ট, ভোট ভাগাভাগি আখেরে ক্ষতি হয়েছে শাসক দল বিজেপি-র৷ অবশ্য, আইপিএফটি-র সাথে জোট ধর্ম বজায় রাখতে গিয়ে মাশুল গুনতে হচ্ছে পদ্ম শিবিরের৷ কারণ, লোকসভা নির্বাচনের মতোই বিজেপি একলা চলো নীতি অবলম্বন করলে তিপ্রা মথা ফায়দা তুলতে পারত না, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ বিজেপি-র নেতৃবৃন্দও মানছেন, জোট ধর্ম বজায় রাখতে গিয়ে চরম মাশুল গুনতে হচ্ছে৷ তাই, বিজেপি চাইছে, পাহাড়ে আইপিএফটি-র জনভিত্তি কতটা রয়েছে তাঁরাই মূল্যায়ন করুক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *