BRAKING NEWS

ভারতের বদনাম করতে গিয়ে অসমের চা-কে বিশ্বে বদনাম করার গভীর ষড়যন্ত্ৰ চলছে : মোদী

ঢেকিয়াজুলি (অসম), ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ (হি.স.) : দেশের প্রত্যেক রাজ্যে স্থানীয় আঞ্চলিক তথা মাতৃভাষায় একেকটি মেডিক্যাল কলেজ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি (আইটি) প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্নে বিভোর। স্বাধীনতার ৭৫ বছর সম্পূৰ্ণ হওয়ার আগেই দেশে মাতৃভাষায় মেডিক্যাল কলেজ এবং আইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হবে। এরই অঙ্গ হিসেবে অসমে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পর অসমিয়া ভাষায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হবে। অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ রবিবার মধ্য অসমের শোণিতপুর জেলার শহিদনগর ঢেকিয়াজুলির ভোটপাড়া ময়দানে কয়েকটি প্ৰকল্পের শিলন্যাস উপলক্ষ্যে প্রায় চার লক্ষাধিক জনতার উপস্থিতিতে আয়োজিত সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন প্ৰধানমন্ত্ৰী। প্রদত্ত ভাষণে তিনি অসমের চায়ের ছবিকে বদনাম করার গভীর ষড়যন্ত্ৰ চলছে বলে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। তবে এই ষড়যন্ত্ৰের বিরুদ্ধে আমাদের চা শ্ৰমিকরা যুদ্ধ করে জয়ী হবেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী বলেন, ১৯৪২ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে শোণিতপুরের বীর শহিদদের শৌর্যগাঁথা আত্মবলিদান দেশবাসীর হৃদয়ে আলাদা এক পরিচয় বহন করে চলছে। শহিদদের রক্তে রঞ্জিত এই পুণ্যভূমির স্পর্শে নিজের জীবন ধন্য হয়েছে। শোণিতপুরের “পাবন মিট্টি” অসম তথা সমগ্র দেশের কাছে এক গৌরবের প্রতীক। ৫৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চড়াইদেও এবং ৫৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বনাথে দুটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিলান্যাসের পাশাপাশি অসমের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য ৫,০০০ কোটি টাকার “অসম মালা” প্রকল্পের‌ও শুভ সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

রবিবার মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ্বর তেলি, অৰ্থ সহ বহু দফতরের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, শরিকদল অগপ সভাপতি তথা মন্ত্রী অতুল বরা, মন্ত্রী কেশব মহন্ত, মন্ত্রী রঞ্জিত দত্ত, মন্ত্রী নবকুমার দলে, বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ শইকিয়া, বিজেপির প্রদেশ সভপতি রঞ্জিতকুমার দাস, বিটিআর-প্রধান প্রমোদ বড়ো, সাংসদ তপন গগৈ প্রমুখ বহুজনের উপস্থিতিতে সুধাকণ্ঠ প্ৰয়াত ভূপেন হাজরিকার একটি গালের কলি বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, যাবতীয় হিংসা-ভেদভাবের ঊৰ্ধ্বে উঠে অসমের পাশাপাশি উত্তর-পূৰ্বাঞ্চল এখন দ্ৰত বিকাশের পথে এগিয়ে চলেছে। তবে এই বিকাশের ধারা প্ৰবাহিত করতে অগ্ৰণী ভূমিকা নিয়্ছে অসম।

প্রায় চার লক্ষাধিক জনতার সমাবেশে বক্তব্যের শুরুতেই অসমবাসীকে ঢেকিয়াজুলির স্থানীয় চা জনগোষ্ঠীয় ভাষায় ভাই ও বোন সম্বোধন করে করজোড়ে প্রণাম নিবেদন করে পাঁচ বছরের স্বল্প সময়ের মধ্যে অসমকে বিকাশের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বানন্দ সনোয়াল সরকারের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন অসমের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য ৫,০০০ কোটি টাকার “অসম মালা” প্রকল্পের‌ও শুভ সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। স্বপ্নের এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী পনেরো বছরের মধ্যে অসমের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ৭০ বছরে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আসামে মাত্র ছয়টি মেডিক্যাল কলেজ ছিল। কিন্তু রাজ্যে বিজেপি আমলের পাঁচ বছরে নতুন আর‌ও ৬-টি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন হয়েছে। প্রতি বছর ১,৬০০ জন এমবিবিএস ডাক্তার পাবেন অসমের জনতা। এর পরই তাঁর এক স্বপ্নের বিষয়ে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, তাঁর ইচ্ছে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির আগে দেশের প্রত্যেক রাজ্যে স্থানীয় আঞ্চলিক তথা মাতৃভাষায় একেকটি মেডিক্যাল কলেজ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি (আইটি) প্রতিষ্ঠান গড়া। এরই অঙ্গ হিসেবে অসমে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পর অসমিয়া ভাষায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হবে। অসমিয়া ভাষায় অধ্যয়ন করলে একজন ছাত্ৰ ভালো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন না? নিশ্চয়ই পারবেন।

তিনি বলেন, অসমের মানুষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আর বাইরে যেতে হবে না। শীঘ্রই গুয়াহাটিতে নির্মীয়মাণ এইমস-এ চিকিৎসা পরিষেবা শুরু হবে। এখন অসমেই সবধরনের উন্নত চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যাবে, বলেন মোদী। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অধীনে অসমে এক লক্ষের বেশি রোগী চিকিৎসার সুবিধা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুয়াহাটিকে উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের চিকিৎসা খণ্ডের অভিকেন্দ্ৰ হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার প্ৰচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া করোনা থেকে দেশ যে শিক্ষা অর্জন করেছে ভবিষ্যতে তা সকলকে সহায়তা করবে বলেও আশা ব্যক্ত করেছেন মোদী। স্বাধীনতা পরবর্তী কালে দেশে প্রায় ৫৫ বছর ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস সরকার। কিন্তু দেশ সহ অসমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য পূর্বতন কংগ্রেস সরকার উল্লেখযোগ্য কোনও ভূমিকা নেয়নি বলে অভিযোগ তুলেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রে এবং রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হ‌ওয়ার পর‌ই চিকিৎসা সেবায় ধীরে ধীরে দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে চলছে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় অসম গত কয়েক বছরে দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অসমের চিকিৎসা ব্যবস্থা শুধু রাজ্যে নয় সমগ্র উত্তরপূর্বে আমূল পরিবর্তন এনেছে।

প্রধানমন্ত্রী আর‌ও বলেন, “অসম মালা” প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সড়ক, জাতীয় সড়ক ও জেলার গ্রামীণ সড়কের উন্নয়নে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। চিকিৎসা সেবায় বিভিন্ন প্রকল্পের উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অধীনে এ রাজ্যের এক কোটি পঁচিশ লক্ষ মানুষ উপকৃত হয়েছেন। হেলথ অ্যান্ড ওয়েল্থ সেন্টারের মাধ্যমে রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৫৫ লক্ষের উপর মানষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার সুবিধা লাভ করেছেন। অটল অমৃত যোজনার মাধ্যমেও রাজ্যবাসী উপকৃত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্যবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। করোনা মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ রণনীতি স্থির করতে কেন্দ্রীয় সরকার এখন থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। এর জন্য সমগ্র দেশে স্থানীয় ভাবে ইন্টিগ্রেটেড ল্যাব তৈরির‌ও পরিকল্পনা চলছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

অসম সহ উত্তরপূর্বের পশ্চাদপদ রাজ্যগুলোর সার্বিক বিকাশের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হ‌ওয়ার পর থেকেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো প্রকৃতার্থে উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে বলে দৃঢ়তার সুরে জানান প্রধানমন্ত্রী। ঐতিহাসিক বড়ো চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদ্যসমাপ্ত বিটিআর নির্বাচনের ফল‌ই প্রমাণ করে, বড়ো চুক্তি ফলপ্রসূ হয়েছে। বড়োল্যান্ডের নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সেখানে নয়া দিগন্তের সূচনা করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অসমের চা শিল্প নিয়েও প্রধানমন্ত্রী নানা আশার বাণী শুনিয়েছেন। বলেন, সমগ্র বিশ্বে অসমের চা শিল্প বন্দিত। বিশেষ করে শোণিতপুরের লাল চা-এর আলাদাভাবে প্রশংসা করতেও কার্পণ্য করেননি প্রধানমন্ত্রী। দেশের চা শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে ১০০০ কোটি টাকা ধার্য হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ চা শ্রমিককে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। চা বাগানের গর্ভবতী মহিলাদের জন্য‌ও নানা প্রকল্প ইতিমধ্যে চালু রয়েছে। মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিটের মাধ্যমে চা জনজাতির লোকেদের মধ্যে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের‌ও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তবে বিদেশে অবস্থানরত ভারত বিরোধী অপশক্তি দেশকে বদনাম করার জন্য অসমের চা শিল্পকেও টার্গেট করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। দেশবিরোধী এই অপশক্তিকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশের গৌরব চা শিল্পকে যারা বদনাম করতে চাইছে তাদের প্রতি চরম হুঁশিয়ারি ছুঁড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এর জন্য দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছেও জবাব চাইবেন চা শ্রমিকরা। এ কথাও উল্লেখ করেন তিনি। পরিশেষে কলাগুরু রূপকোঁওর জ্যোতিপ্রসাদ আগর‌ওয়ালার রচিত কবিতা “মেরি ভারত কে নানা ছবি, জাগা-রে জাগা” লাইনটি পড়ে প্রধানমন্ত্রী নিজের বক্তব্যে যতি টানেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *