করিমগঞ্জ (অসম), ১৯ নভেম্বর (হি.স.) : নিলামবাজারে সংগঠিত দলবদ্ধ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত পাঁচ অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছে নির্যাতিতা উত্তর ত্রিপুরার দুই যুবতী-বোন। করিমগঞ্জ ফৌজদারি আদালতের নির্দেশে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে বন্দি পাঁচ অভিযুক্তকে চিহ্নিত করার জন্য বৃহস্পতিবার কারাগারের মধ্যেই টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন প্রেইড সংক্ষেপে টিআইপি বা অভিযুক্ত শনাক্তকরণ মহড়া হয়েছিল। মামলার তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক ধর্ষিতা দুই যুবতীকে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে এদিন কারাগারের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর ফৌজদারি আদালতের আতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নুপূরচন্দ্র ভুইয়াঁর উপস্থিতিতে কারাগারের ভিতরেই বন্দি পাঁচ অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছে দুই নির্যাতিতা।
জানা গেছে, কারাগারের ভিতরে বন্দি ধর্ষকদের শনাক্ত করতে দুই যুবতীর কোনও অসুবিধা হয়নি। কারাগারের ভিতরে ধর্ষকদের দেখেই সেই অভিশপ্ত রাতের (চলতি মাসের ১৩ তারিখ) কালো ছবি তাঁদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তাঁদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ধর্ষকদের প্রতি নির্যাতিতা যুবতীদ্বয়ের মনে প্রতিশোধের স্পৃহা ও বিদ্বেষের জন্ম নিলেও আইনি ব্যবস্থার উপর সম্পূর্ণ ভরসা রেখে, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়ে তাঁরা অভিযুক্তদের শনাক্ত করে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। এদিন আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তদের রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে আদালত চত্বরে নির্যাতিতা দুই যুবতীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে ভরতি তাঁদের মা-কে দেখে শিলচর থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে ফেরার পথেই তাঁদের সঙ্গে এই জঘন্য ঘটনা ঘটে। ত্রিপুরা শনিছড়ার বাসিন্দা দুই যুবতী মূলত ‘ককবরক’ভাষী হলেও বাংলা ভাষায় তাঁরা স্পষ্ট কথা বলতে পারেন। তাঁরা বলেন, চেরাগি ধাবা থেকে ত্রিপুরার সহজ রাস্তার কথা বলে তাঁদেরকে যখন নিলামবাজারে ফিরিয়ে নিয়ে আসে গাড়ি চালক, তখন তাঁদের সন্দেহ হয়। কিন্তু গাড়িতে চিৎকার দিলেও, দরজার কাঁচ বন্ধ থাকায় তাঁদের চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি। তাছাড়া রাত গভীর থাকায় রাস্তায় লোকজনেরও চলাচলও ছিল না। গাড়ি চালকের সঙ্গে অন্য একজন লোক সে সময় গাড়িতে ছিল। কিন্ত সেদিন গাড়ির অন্য আরোহীকে আজ জেলের ভেতরে অভিযুক্ত শনাক্তকরণ মহড়ায় তাঁরা দেখতে পাননি বলে দুই যুবতী-বোন বয়ান দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, নিলামবাজারে একটি ঘরে যখন নরপিশাচের দল তাঁদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে উদ্যত হয়, তখন এদের পায়ে ধরেও রেহাই পাননি তাঁরা। উল্টো গলা চেপে তাদের সতীত্ব হনন করে নরপিশাচের দল।
উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর নিলামবাজারে এই ধর্ষণ কাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পর পুলিশ তদন্তে নেমে পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। ধৃতরা যথাক্রমে আহাদ উদ্দিন, আলতাফ উদ্দিন, আনোয়ার হুসেন, আবু বক্কর এবং মঈন উদ্দিন।