নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ অক্টোবর৷৷ সরকারের উন্নয়নের মূল অভিমুখই হচ্ছে রাজ্যের জনগণের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি জনজাতিদের সার্বিক বিকাশ৷ সরকার এ জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করছে৷ আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং হলে ত্রিপুরা পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত এন এল এফ টি (এস ডি) গ্রপের আত্ম সমর্পণকারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে এন এল এফ টি (এস ডি) গোষ্ঠীর আত্মসমর্পণের চুক্তির শর্ত অনুসারে ওভারগ্রাউণ্ড সদস্যদের এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ আজকের অনুষ্ঠানে ১৩৬ জন ওভারগ্রাউণ্ড সদস্যকে ১ লক্ষ টাকা করে এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, আত্মসমর্পণকারীদের্ মধ্যে আজ যারা আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন তারা সকলেই এই সহায়তাকে তাদের জীবনশৈলীর মানোন্নয়নে কাজে লাগাবেন৷ নিজে এবং নিজের পরিবারের প্রতিষ্ঠার জন্য কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির সুুযোগ সুুবিধা গ্রহণ করে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবেন৷ পাশাপাশি নিজের গ্রাম কিংবা শহরের উন্নয়নের সাথে সাথে রাজ্যের উন্নয়নেও নিজেকে সমর্পিত করবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, উত্তর পূর্বা’ল কোনও এক সময় উপেক্ষিত ছিল৷
বিশেষ করে ত্রিপুরা রাজ্যের নির্দিষ্ট কোন পরিচিতি ছিল না৷ কিন্তু বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর-পূর্বাঞ্চ সহ আমাদের রাজ্য ত্রিপুরাকেও এক বিশেষ পরিচিতির অধিকারী করে তুলেছে৷ জনজাতিদের প্রকৃত সম্মান দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ হৃদয় থেকে তাদের সমস্যাগুলি জেনে তার সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন তিনি৷ রাজ্যের জনজাতিদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ’তিপ্রা টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল’ করার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে৷ জনজাতিদের ঐতিহ্যবাহী ‘রিসা’ কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে মান্যতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ দেশবাসীকে সম্বোধন করার সময় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর পৃথক পৃথক রিসা সময়ে সময়ে পরিধানকরে থাকেন প্রধানমন্ত্রী৷ সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অতিথিদেরও ’রিসা’র মধ্য দিয়ে সম্মান জানানো হয়৷ এর ফলে বিদেশীদের ত্রিপুরা সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে বড়মুড়ার নাম ’হাতাইকতর’ নামে নামঙ্কিত হয়েছে৷ জনজাতিদের পরম্পরাগত খাদ্য বাঁশকরুল থেকে বিসুকট তৈরি করে বাজারজাত করণের পাশাপাশি বাঁশের তৈরি বোতলের মধ্যে মধু বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার৷ রাজ্যের সাংস্ক’তিক ব্যক্তিত্ব জনজাতি সম্পদায়ের থাঙ্গা ডার্লং ও বেনীচন্দ্র জমাতিয়াকে সাহিত্য ও সংস্ক’তিতে বিশেষ অবদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পদ্মশ্রীতে ভূষিত করেছে যা ত্রিপুরাকে গৌরান্বিত করেছে৷
তিনি বলেন, ধলাই জেলার সামগ্রিক বিকাশে এই জেলাকে অ্যাশপিরেশন্যাল ডিস্ট্রিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ ধলাইতে একটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে৷ এই প্রথমবার এডিসির জন্য প’দশ অর্থ কমিশন থেকে ৫৭ কোটি টাকা জনজাতিদের উন্নয়নে ব্যয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ টিটিএএডিসি এলাকার আসন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে৷
জাইকা প্রকল্পের কাজ অধিকাংশই জনজাতি অ’লে রূপায়ণ করা হচ্ছে৷ ২০২২ সালে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি পরিবারে পানীয় জল সরবরাহ সুুনিশ্চিত করতে অটল জলধারা প্রকল্পে বিনামূল্যে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করছে সরকার৷ তিনি বলেন, পূর্বতন সরকার রাজ্যের উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট কোন যোজনা গ্রহণ করেনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগের পাশাপাশি জলপথে সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে৷ জনজাতিদের শিক্ষার উন্নয়নেও সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷ আগামী দিনে সবাই একত্রিত হয়ে ত্রিপুরাকে বৈভবশালী এবং শক্তিশালী রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপূজার দিনগুলিতে সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানান৷
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি রাজস্ব মন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা বলেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা এন এল এফ টি (এস ডি) সদস্যদের জীবনযাত্রা যাতে সুুষ্ঠভাবে অতিবাহিত হয় তারজন্য এই আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার৷ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা এন এল এফ টি (এস ডি) সদস্যরা সকলের সাথে মিলে মিশে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের জীবন অতিবাহিত করবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷ অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান সচিব বরুণ কুমার সাহু৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ মহানির্দেশক রাজীব সিং৷ ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ মহানির্দেশক (ইন্টেলিজেন্স) পুনীত রাস্তোগী৷ অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণকারী এন এল এফ টি (এস ডি) গ্রপের ছয় জেলা ছয়জন অভারগ্রাউণ্ড সদস্যকে প্রতিকীরূপে আর্থিক সহায়তা স্বরূপ প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকার চেক তুলেদেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ও রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা৷