কৃষি সংস্কার বিল কৃষকদের কল্যাণে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ : কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ সেপ্ঢেম্বর৷৷ কৃষি সংস্কার বিল কৃষকদের কল্যাণে ও কৃষির উন্নতির জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ৷ দেশের কৃষকদের স্বার্থে এবং কৃষির বিকাশে গতকাল রাজ্যসভায় যে দুটি বিল পাশ হয়েছে সেজন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরকে ত্রিপুরা সরকার এবং রাজ্যের সমস্ত অংশের মানুষ সহ রাজ্যের কৃষকদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ত্রিপুরার কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়৷


সোমবার সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হল-এ এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই দুটি কৃষি বিল সম্পর্কে বলতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এই ঐতিহাসিক দুটি বিল পাশের মধ্য দিয়ে চিরাচরিত প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে কৃষকদের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা হল৷ এর ফলে দেশের কৃষকরা উপকৃত হবেন৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২২ সালের মধ্যে দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন সেই লক্ষ্যপূরণে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণের পাশাপাশি রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে৷


কৃষিমন্ত্রী রাজ্যসভায় পাশ হওয়া দুটি কৃষি বিল দ্য ফার্মার্স প্রডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) বিল ২০২০, দ্য ফার্মার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) এগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যাসুরেন্স অ্যা ফার্ম সার্ভিসেস বিল, ২০২০ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ভারত সরকার প্রদত্ত নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের কোনও পরিবর্তন হবে না৷ কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বিক্রির ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকবে না৷ রাজ্যে কিংবা রাজ্যের বাইরে কৃষকরা তাদের ইচ্ছা এবং সুবিধা অনুযায়ী উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারবেন৷ বিক্রির জন্য পরিবহণের ক্ষেত্রে কোনও আন্তঃরাজ্য বিধিনিষেধ থাকবে না৷ কৃষি নিয়তি বাজারকে কোনও শুল্ক প্রদান করতে হবে না৷ ব্যবস্থার এই সরলীকরণের ফলে কৃষকরা ঘরে বসেই ই-ট্রেডিঙের মাধ্যমে সঠিকমূল্যে যে কাউকে তার ফসল বিক্রি করতে পারবেন৷ এর ফলে কৃষকরা যথেষ্ট শক্তিশালী হবেন বলে কৃষিমন্ত্রী দাবি করেন৷

এদিন তিনি বলেন, ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনা চালু করেছে৷ প্রতি বছর তিন কিস্তিতে ছয় হাজার টাকা সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কৃষকদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের (কেসিসি) মাধ্যমে কৃষি ঋণ প্রদান করতে মিশন মুডে নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ সেই লক্ষ্যে রাজ্যের ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ২৫৭ জন কৃষককে কেসিসি ঋণের আওতায় আনা হয়েছে৷ এজন্য ২৯৪ কোটি ১৪ লক্ষ টাকার ঋণ মঞ্জুর হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি প্রকল্পে এ পর্যন্ত ত্রিপুরায় ২ লক্ষ ১০ হাজার ৬৩৪ জন কৃষকের অ্যাকাউন্টে প্রায় ২২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের জন্য পেনশনের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ মানধন যোজনা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটা অর্থ দেওয়ার পর ৬০ বছর পরে প্রতি বছর ৩ হাজার টাকা করে পেনশন দেওয়ার সংস্থান রয়েছে এই প্রকল্পে৷


কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় রাজ্যের কৃষকদের কল্যাণে ত্রিপুরা সরকার কর্তৃক নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, রাজ্যের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করেছে রাজ্য সরকার৷ তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য কৃষকরা যেন তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পান৷ সেজন্য ধানের পাশাপাশি রাজ্যের উৎকৃষ্ট ফল, সবজি বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তাঁর কথায়, বর্তমান কোভিড-১৯-এর ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা সত্ত্বেও প্রায় ২,০০০ মেট্রিকটন আনারস দেশের বাইরে রফতনি করা হয়েছে৷


কৃষিমন্ত্রী আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় বর্তমানে রাজ্যে ২,০৬,০৯২ জন কৃষককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ এই ক্ষেত্রে বিমার প্রিমিয়ামের সামান্য অংশ কৃষকরা বহন করবেন এবং বেশিরভাগই বহন করবে রাজ্য সরকার৷ এজন্য রাজ্য সরকারের প্রায় ১৬ কোটি টাকা খরচ হবে৷ কৃষকদের জন্য ১০০ শতাংশ সয়েল হেলথ কার্ড করা হয়েছে৷ কৃষকদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য পরামর্শ দিতে কৃষক বন্ধু কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ কৃষকদের ফসল উৎপাদনের খরচ কমিয়ে আনতে এবং আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের কাছে আধুনিক মেশিন সরবরাহ করতে সরকার উদ্যোগী হয়েছে বলে কৃষিমন্ত্রী জানান৷


তিনি আরও বলেন, রাজ্যে কৃষকদেরকে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷ এ বছর ১৫ হাজার হেক্টর এলাকা জৈব চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ চিরাচরিত চাষাবাদের প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে কৃষকদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা এবং ২২ হাজার হেক্টর জমিতে মাষকলাই চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ ভুট্টার ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরে ৬ হাজার টাকা এবং মাষকলাই চাষের ক্ষেত্রে ৯ হাজার টাকা সহায়তা দেবে সরকার৷ আখ চাষকেও গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার৷ আখ চাষে আগ্রহীদের প্রতি হেক্টরে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷