বিশালগড়ে বিজেপি-কংগ্রেস সংঘর্ষের ঘটনায় আহত বহু, রোষের মুখে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, চড়িলাম, ২০ আগস্ট৷৷ ত্রিপুরায় শাসক-বিরোধী সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে সিপাহিজলা জেলার নৌকাঘাট এলাকায়৷ এ ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মী সহ সাতজন বিজেপি কার্যকর্তা এবং কংগ্রেসের একজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে বিজেপির চড়িলাম মণ্ডল সভাপতির পা ভেঙে গেছে৷ তাঁকে হাঁপানিয়ায় ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভরতি করা হয়েছে৷ বাকি আহতদের বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে৷


এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে বিজেপি কর্মীরা বিশালগড় থানা ঘেরাও করেন৷ খবর পেয়ে ছুটে যান উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা, সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক এবং বিজেপির জনজাতি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক প্রতীক দেববর্মা৷ সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক জানিয়েছেন, এই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে৷ পুলিশ প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে৷

বৃহস্পতিবার আগরতলায় প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর মর্মর মূর্তির আবরণ উন্মোচন হয়েছে৷ এ উপলক্ষ্যে দক্ষিণ জেলা থেকে দুটি গাড়িতে কংগ্রেস কর্মীরা আগরতলার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন৷ সিপাহিজলার নৌকাঘাট এলাকায় বিজেপি কর্মীরা তাদের পথ আটকান বলে অভিযোগ৷ তাতে দুই দলের কর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়৷ একসময় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে৷ বাকবিতণ্ডা থেকেই দুই দলের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন৷ অভিযোগ, কংগ্রেস কর্মীরা বিজেপি কর্মীদের তিনটি বাইক ভাংচুর করেছেন৷ কংগ্রেস কর্মীদের আক্রমণে বিজেপির চড়িলাম মণ্ডল সভাপতি রাজকুমার দেবনাথের পা ভেঙে গেছে৷


খবর পেয়ে বিশালগড় থানার ওসি বিমল বৈদ্য বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন৷ কিছুক্ষণের মধ্যে এসডিপিও তাপসকান্তি পালও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান৷ কিন্তু তাঁরা কোনওভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না৷ তাই বাধ্য হয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে৷ পুলিশের এলোপাথাড়ি লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী আহত হন৷ তাঁদের উদ্ধার করে বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে৷
এদিকে, পুলিশের লাঠিচার্জে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ঠিকই, কিন্তু বিজেপি কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন৷ পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন৷

ইত্যবসরে সিপাহিজলার পুলিশ সুপার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে পৌঁছেন৷ তাঁর কাছে বিজেপি কর্মীরা বিশালগড় থানার ওসি বিমল বৈদ্য এবং এসডিপিও তাপসকান্তি পালকে বরখাস্তের দাবি জানান৷ বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার৷ এতে সন্তুষ্ট না হয়ে বিজেপি কর্মীরা বিশালগড় থানা ঘেরাও করেন৷
এদিকে, ওই সংঘর্ষের ঘটনায় দীর্ঘ সময় জাতীয় সড়কে যান চলাচল ব্যহত হয়েছে৷ জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে৷
থানা ঘেরাও করে জনৈক বিজেপি কর্মী বলেন, বিশালগড় থানার ওসি এবং এসডিপিও সিপিএমের ইশারায় কাজ করছেন৷ তাই তাঁরা কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে বিজেপি কর্মীদের পিটিয়েছে৷ ওই সংঘর্ষের খবর পেয়ে ছুটে যান বিজেপি জনজাতি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক প্রতীক দেববর্মা৷ তিনি দলীয় বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করেন, অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ এরই মধ্যে বিশালগড়ে পৌঁছে যান উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা এবং সাংসদ প্রতিমা ভৌমিকও৷ বিশালগড় বিজেপি মণ্ডল অফিসে এ বিষয়ে তাঁরা বৈঠক করেন৷ বৈঠক শেষে সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক এবং প্রতীক দেববর্মা বিশালগড় থানায় যান৷ সেখানে ডিআইজি সৌমিত্র ধর, সিপাহিজলার পুলিশ সুপার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীর সাথে আজকের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা৷


আলোচনা শেষে থানা থেকে বেরিয়ে সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক বলেন, করোনা-প্রকোপে সারা ত্রিপুরায় দলীয় সমস্ত কর্মসূচি বন্ধ রেখেছে বিজেপি৷ অথচ কংগ্রেস মানুষ নিয়ে সভা-সমাবেশ করছে৷ শুধু তা-ই নয়, আগরতলায় যাওয়ার সময় উশৃঙ্খল আচরণ করছেন তারা৷ বিজেপি কর্মীদের মারধর করেছেন৷ তিনি বলেন, আজকের ঘটনায় দুই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে৷ বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে৷


এদিকে, কংগ্রেসের মিডিয়া সেল ইনচার্জ আইনজীবী হরেকৃষ্ণ ভৌমিক বলেন, সারা রাজ্যে গণতন্ত্র আজ বিপন্ন৷ তাই প্রতিবাদে কংগ্রেস কর্মীদের মাঠে নামতে দেখে বিজেপি ভয় পেয়ে গেছে৷ আজ কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা করা হয়েছে৷ এতে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস কর্মী আহত হয়েছেন৷ একজনের অবস্থা খুবই গুরুতর হওয়ায় তাঁকে আগরতলায় জিবি হাসপাতালে নিয়ে ভরতি করা হয়েছে৷ তাঁর দাবি, বিজেপি কর্মীদের আক্রমণে ১৫/১৬ জন কংগ্রেস কর্মী আহত হয়েছেন৷ এ ঘটনায় ত্রিপুরাব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আলোচনায় বসবে প্রদেশ কংগ্রেস৷