আর কে সিনহা
নিজেকে ইসলামিক বিদ্বান মনে করা দাঙ্গাবাজ জাকির নায়েক এখনও নিজেকে সংশোধন করেননি। আসলে নিজের ভুলগুলিকে সংশোধন করার ইচ্ছা তার মধ্যে নেই। উস্কানিমূলক মন্তব্য করে ভারতীয় সমাজে বিভাজন তৈরি করার একাধিক চেষ্টা তিনি করে গিয়েছেন। এখন মালয়েশিয়ায় থেকে তিনি বলেছেন যে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে হিন্দু মন্দির তৈরি করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। এমনটা হলে তা ইসলামবিরোধী হয়ে উঠবে।
তাকে কারো জিজ্ঞাসা করা উচিত যে কোন যুক্তির ভিত্তিতে তিনি ইসলামাবাদে হিন্দু মন্দির নির্মাণের বিরোধিতা করছেন? পরিস্থিতি ও পরিষদকে বিষাক্ত করতে চান জাকির নায়েক। এই বিষাক্ত ব্যক্তিত্ব থেকে আর ভালো কিবা আশা করা যায়। হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছেন তিনি। তার পূর্বপুরুষ যে ভারতীয় ছিল সেটা ভুলে গিয়েছেন।
মনে করছে যে সোজা আকাশ থেকে মাটিতে এসে পড়েছেন।
ভারত থেকে পালিয়ে প্রায় চার বছর ধরে মালয়েশিয়ায় আস্তানা গেড়েছেন জাকির নায়েক। সেখানকার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহাতির মহমুদ তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন মহাতির। বর্তমানে পুত্রজয়া শহরে রয়েছেন জাকির নায়েক। এই শহর মালয়েশিয়ার রাজধানী কোয়ালালপুরে কিছু দূরে রয়েছে। সেখান থেকে তিনি প্রতিনিয়ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং হিন্দু সমাজের প্রতি বিষোদগার করে চলেছেন। তারই বিষোদগার থেকে রক্ষা পায়নি মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী হিন্দুরাও। একবার তিনি এও বলেছিলেন যে এখানে বসবাসকারী হিন্দুরা মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ মাহাতির থেকেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি বেশি অনুগত। এখন আপনারা বুঝতে পারছেন জাকির নায়েক কতটা নিচু মানসিকতার লোক।
আসলে মালয়েশিয়ায় ২০-২৫ লক্ষ প্রবাসী ভারতীয় বসবাস করে থাকেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ তামিল হিন্দু। এদের মধ্যে কিছু ভারতীয় মুসলমান এবং শিখ সম্প্রদায়ের রয়েছে। এই সকল ভারতবংশীরা ভারতীয় শিকড়ের প্রতি সংযুক্ত।
কিন্তু তারা মালয়েশিয়াকেও নিজেদের দেশ বলে মনে করে। সেখানকার সংসদেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন আবার মন্ত্রী ও হয়েছে। ফলের জাকির নায়েকের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং বিদ্বেষ মূলক মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মন্দির নির্মাণের বিপক্ষে নিজের মতামত ব্যক্ত করে সেখানকার কট্টরপন্থী মোল্লাদের খুশি করেছেন জাকির নায়েক। কখনো যদি তাকে মালয়েশিয়া থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তবে তাকে আশ্রয় দেবে পাকিস্তান। তাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য হাফিজ সঈদ এবং মাওলানা আজহার মাহমুদের মতন কট্টরপন্থীরা পাকিস্তানী প্রশাসনের ওপর আগামী দিনে চাপ সৃষ্টি করবে। সেই পরিস্থিতি তৈরি করতেই পাকিস্তানে মন্দির নির্মাণের বিরোধিতা করে চলেছেন জাকির নায়েক । মালয়েশিয়ায় যে আর বেশিদিন থাকতে পারবেন না সেটা ভালই বুঝতে পেরেছেন জাকির নায়েক। তাকে আশ্রয়দানকারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহাথির মহম্মদ এখন ক্ষমতার বাইরে রয়েছেন। মহাথিরের মানসিকতা বরাবরই ভারতবিরোধী ছিল। কাশ্মীর সহ একাধিক প্রসঙ্গে বরাবর ভারতের বিরোধিতা করে গিয়েছে সে। এমনটা নয় যে মোদি সরকার যাবে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে তবে থেকে মহাথির ভারতবিরোধী। বর্তমানে তার বয়স ৯০ ছুঁইছুঁই।
অন্যদিকে সে দেশে বসবাসকারী হিন্দুরা জাকির নায়েকের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। জাকির নায়েককে ভারতে পাঠিয়ে দিতে তৎপর সেখানকার প্রবাসীরা। কারণ ভারতের জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই চাপ থেকে বাঁচতে চাইছেন জাকির নায়েক। তাইতো পাকিস্তানের দিকে চলে যাওয়ার মনোনিবেশ করেছে তিনি।
সর্বদা কোট-প্যান্ট-টাই পরে থাকা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করার জন্য উস্কানিমূলক মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। জাকির নায়েকের প্রত্যর্পণের জন্য ভারত সরকারের তরফ থেকে বারবার মালয়েশিয়াকে বলে আসা হচ্ছে। কিন্তু জাকির নায়েককে বাঁচিয়ে চলেছে মালয়েশিয়া সরকার। মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মহম্মদ ক্ষমতার অলিন্দের বাইরে রয়েছে বলে চিন্তিত জাকির নায়েক।মনে করা হচ্ছে মালয়েশিয়া থেকে যাকে বিতারিত করে দিলে সে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা। আর সেই কারণেই পাকিস্তানি কট্টরপন্থীদের।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদে হিন্দু মন্দির নির্মাণ এর বিরোধিতা করে অবরোধ এবং বিরোধ লেগেই রয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে ধর্মীয় সভাগুলোতে হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানি লেখক তারিক ফাতেহ এই প্রসঙ্গে ভিডিও জারি করেছেন। মন্দির তৈরি হলে মস্তক ছেদ করা হবে বলে হুমকিও দিয়েছে বহু কট্টরপন্থী নেতা। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম নেওয়ার ৭০ বছর পরেও ইসলামাবাদে একটিও হিন্দু মন্দির না থাকায় এটা প্রমাণিত যে সে দেশটি বড় বেশি সাম্প্রদায়িক।
পাকিস্তানের মৌলবাদীরা এবং জাকির নায়েক একই ভাষায় কথা বলছেন।
এখানে লক্ষ্য করে দেখার বিষয় আরব আমিরশাহির রাজধানী আবুধাবিতে মন্দির নির্মাণের জন্য ভূমি পুজা গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন কিন্তু জাকির নায়েক এর কোন বিরোধিতা করেননি। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে একটিও কথা বলেননি তিনি।মন্দির তৈরি করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সরকার ২০ হাজার বর্গ মিটার জমি হিন্দুদের দিয়েছেন। আরব আমিরশাহির সরকার যে জাকির নায়েক কে পাত্তা দেবে না সেটা সবার জানা। ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে সম্পর্ক মধুর ।
মনে করা হচ্ছে দাউদ ইব্রাহিমের মতন জীবনের শেষ দিনগুলি জাকির নায়েক পাকিস্তানেই অতিবাহিত করবেন। ভারতে এলে তার জেল নিশ্চিত। তাই নিরাপত্তার জন্য পাকিস্থানে আশ্রয় নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। ভারতের সাদাসিধে মুসলমানদের নিজের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ভাষণে মোহিত করার চেষ্টা করেছিলেন জাকির নায়েক। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ইংরেজি বলতে পারা কট্টর মৌলবাদী জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে জাকির নায়েক।
ভারতের বহুত্ববাদী সমাজ ও সংস্কৃতির কলঙ্ক হচ্ছে জাকির নায়েক। ভারত শাহিদ ব্রিগেডিয়ার আবদুল হামেদা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম, অভিনেতা ইফান খানকে দেশ সম্মান করে থাকে। এরা দেশের গৌরব। আবার এই দেশ জাকির নায়েক যেমন সমাজ তোড়কার মল্লে তার নায়েক কেমন মানাবে।
দেশ ভক্তি এবং জনসেবার সেবার জন্যই তারা আজ আমাদের প্রকৃত নায়ক। বিচ্ছিন্নতাবাদী বিশ্বাস করা জাকির নায়েক ভারতের প্রকৃত নায়ক নন।
ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনা ভারতীয়দের রক্তে বহমান। সংস্কৃত ভাষাতেও একই কথা বলা হয়েছে। ভারতবর্ষের এয়ারফোর্স প্রধান ইদ্রিস হাসান আলী ছিলেন। রাষ্ট্রপতি ড এপিজে আবদুল কালাম ছিলেন। কিন্তু ভারতের সব কিছুতেই খারাপ দেখতে অভ্যস্ত জাকির নায়েক।
(লেখক রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ)
( এই নিবন্ধের বক্তব্য সম্পূর্ণ লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত। www.jagarantripura.com এর জন্য দায়ী নয়।)