নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ জুলাই৷৷ রাজ্যে করোনার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করছে রাজ্যে৷ একদিকে সরকার লকডাউন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে৷ অন্যদিকে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে৷ বুধবার আরও ১২৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন৷ সেইসাথে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে৷ তাছাড়া সংক্রমিতের তালিকায় এসেছে বিজেপি বিধায়ক ও তাঁর স্ত্রী৷ তাছাড়া বিধায়কের দুই দেহরক্ষীও করোনা সংক্রমিত হয়েছেন৷ তাতে লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্যুইট করে জানিয়েছেন রাজ্যে নতুন করে ১২৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ ৩০৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তাতে ১২৬ জনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷ আক্রান্ত ১২৬ জনের মধ্যে এন্টিজেন টেস্টে ১২০ জন, উপসর্গে ২ জন এবং সংস্পর্শে ৪ জন আক্রান্ত৷ ১২৬ জনের মধ্যে পশ্চিম জেলায় ২৯ জন, উত্তর জেলায় ১৭ জন, গোমতী জেলায় ২৭ জন, ধলাই জেলায় ১৮ জন, দক্ষিণ জেলায় ৩ জন, সিপাহীজলা জেলায় ২৪ জন এবং খোয়াই জেলয় ৮ জন আক্রান্ত৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, দুর্ভাগ্যক্রমে একজন করোনা রোগী মারা গেছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের বিভিন্ন কোভিড কেয়ার সেন্টার থেকে এদিন ১০৭ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন৷
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ত্রিপুরায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে৷ বুধবার আগরতলার জিবি কোভিড হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ৭২ বছর বয়সি মহিলা গত ১৮ জুলাই খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়া থেকে অসুস্থ হয়ে জিবি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন৷ ভরতির আগে তাঁর অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়৷ তাতে তাঁর কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কোভিড সেন্টার ভরতি করা হয়৷ আজ বুধবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ স্বাস্থ্য দফতরের জনৈক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই মহিলা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন৷ এছাড়া তাঁর মধুমেহ রোগও ছিল৷
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত করোনা-য় আক্রান্ত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ টানা দুদিনে দুজনের মৃত্যু হয়েছে৷
বিজেপি বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন৷ সাথে তাঁর স্ত্রী এবং দুইন দেহরক্ষীর দেহেও করোনা-র সংক্রমণ মিলেছে৷ তাতে ত্রিপুরায় এখন হাই প্রোফাইল ব্যাক্তিদেরকেও করোনা নিশানা করতে শুরু করেছে৷ কারণ, এই প্রথম কোনও বিধায়ক ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ এদিকে, ত্রিপুরায় নতুন করে ২৫৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাতে, ত্রিপুরায় বর্তমানে ৩,৩৪৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে ১,৯২৬ জন সুস্থ হয়েছেন৷ সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,৩৯৭ জন৷
বাগমা কেন্দ্রের বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া জানিয়েছেন, আজ (বুধবার) তিনি গোমতি জেলায় আঠারভোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করেছিলেন৷ অ্যান্টিজেন কিটের সহায়তায় তাঁর পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তাতে তাঁর কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, তাঁর স্ত্রী ও দুই দেহরক্ষীর কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে৷
তিনি বলেন, উদয়পুর পিআরটিআই কোভিড কেয়ার সেন্টারে তাঁদেরকে ভরতি করা হয়েছে৷ তাঁর উপসর্গ হিসেবে সর্দি ছিল৷ বিজেপি বিধায়কের করোনা আক্রান্তের ঘটনায় প্রচুর মানুষের অ্যান্টিজেন টেস্টের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে৷ তিনি কীভাবে সংক্রমিত হলেন, সে-বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি৷ তবে গত কয়েকদিনে তাঁর জনসংযোগ কর্মসূচিতে যাঁরা ছিলেন তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে৷
এদিকে, বিজেপির প্রদেশ সহ-সভাপতি তথা বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ ফলে দলের সদর কার্যালয়কে আজ স্যানিটাইজ করা হয়েছে৷ তিনি সম্প্রতি মুখ্য কার্যালয়ে এসেছিলেন৷ তাই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজেপির প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক টিঙ্কু রায়৷ তাঁর দাবি, নিয়ম মেনে দলীয় কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করেছি আমরা৷ তবুও সুরক্ষার প্রশ্ণে এবং করোনা মোকাবিলায় আজ (বুধবার) স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা হয়েছে৷
এদিন তিনি বলেন, করোনা-র প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে দলীয় কার্যালয়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ শুধু জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ তাও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে৷ তাঁর কথায়, আজ বিধায়ক তথা বিজেপি প্রদেশ সহ-সভাপতি রামপদ জমাতিয়া করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাই, দলীয় কার্যালয় স্যানিটাইজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
এ-বিষয়ে দলের প্রদেশ সাধারণ সম্পাদিকা পাপিয়া দত্ত বলেন, এমনিতে আমরা সকলেই করোনা মোকাবিলায় সমস্ত সরকারি নিয়ম মেনে চলছি৷ তবুও অনেকের আসা-যাওয়া রয়েছে দলীয় কার্যালয়ে৷ তাই স্যানিটাইজ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছি৷ তাঁর কথায়, দলীয় বিধায়ক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ঠিকই৷ তবে তিনি স্বাভাবিক আছেন৷ শীঘ্রই তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন পাপিয়া৷