নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ জুলাই৷৷ প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যােজনায় ত্রিপুরায় বিনামূল্যে চাল ও ছোলা সরবরাহ কর্মসূচি নভেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ শুক্রবার সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্য ও জনসংভরণ মন্ত্রী মনােজ কান্তি দেব এই ঘোষণা করেছেন৷ তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ত্রিপুরায় খাদ্যের মজুত সন্তোষজনক৷ বাজারগুলিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ লকডাউন চলাকালীন সময় থেকেই খাদ্য দফতর চ্যালেঞ্জ নিয়েই গণবন্টন ব্যবস্থাকে নিরবচ্ছিন্ন রেখে মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিয়েছে৷
এদিন তিনি লকডাউনের সময়কাল থেকে খাদ্য দফতরের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন৷ তিনি জানান, রাজ্যের ৩৪, ৪৬৪টি পরিবার চিহ্ণিত করা হয়েছে, যেখানে এক বা একাধিক শিশু অপুষ্টিজনিত রােগের শিকার৷ এবারের বাজেট ঘােষণা অনুযায়ী খুব শীঘ্রই ওই পরিবারদের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে বিনামূল্যে চাল, ডাল, আটা ও লবণ সরবরাহ করা হবে৷ এই প্রকল্পটি আগামী তিন বছর পর্যন্ত চালু থাকবে৷ এজন্য খাদ্য দফতরের প্রতি বছর ৮.৬০ কোটি টাকা ব্যয় হবে৷ তাঁর কথায়, রাজ্য সরকার গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে সমস্ত রেশনকার্ডধারীদের জন্য চিনি সরবরাহ শুরু করা হয়েছিলাে, যা এখনও চালু রয়েছে৷ এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য রাজ্য কোষাগার থেকে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে৷
কোভিড-১৯ মােকাবিলায় রাজ্য সরকার কর্তৃক ঘােষিত রিলিফ প্যাকেজের উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী জানান, খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতাধীন রেশন কার্ডধারীদের মধ্যে লকডাউনের শুরুতে এপ্রিল মাসে নিয়মিত বরাদ্দের চাল বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে৷ সর্বমােট ৫.৬৭ লক্ষ এন এফ এস এ রেশনকার্ডধারী পরিবার এই সুবিধা পেয়েছেন৷ এই প্রকল্পের জন্য খাদ্য দফতরের ৬ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে৷ রাজ্যের ৫০ হাজার দরিদ্রতর এ পি এল পরিবারগুলির মধ্যে মে মাসের নিয়মিত বরাদ্দের চাল বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে৷
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ঘােষণা অনুযায়ী ইতিমধ্যেই প্রায় ৪৫ হাজার পরিবার মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে এককালীন ১,০০০ টাকা করে অনুদান নিজ নিজ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, বিনামূল্যে চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য দফতর থেকে ৫৪ লক্ষ টাকা এবং এককালীন ১,০০০ টাকা করে অনুদান দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে এখন অবধি ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে৷ খাদ্য মন্ত্রী জানান, রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৯ লক্ষ ২১ হাজার রেশন কার্ড হােল্ডারদের ১,৮১৩টি রেশনশপের মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে৷ ৫ লক্ষ ৭৯ হাজার পরিবার খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় গণবণ্টন ব্যবস্থায় অতি সুলভমূল্যে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য রেশন সামগ্রী পেয়ে থাকেন৷
প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যােজনায় প্রথম পর্যায়ে (এপ্রিল-জুন) কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক রাজ্যের ৫.৭৯ লক্ষ অন্ত্যোদয় ও প্রায়ােরিটি গ্লুপ রেশনকার্ডধারীদের মধ্যে বিনামূল্যে প্রতিমাসে মাথাপিছু ৫ কেজি হারে চাল এবং রেশনকার্ড প্রতি ১ কেজি মসুর ডাল সরবরাহ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিলা৷ বিনামূল্যে চাল বিতরণ এপ্রিল মাস থেকেই শুরু হয়েছিলা৷ ত্রিপুরায় মসুর ডাল দেরিতে পৌঁছানর কারণে বিতরণ শুরু হয়েছে মে মাস থেকে৷ এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে গড়ে ৫.৬৩ লক্ষ পরিবার বিনামুল্যে চাল সংগ্রহ করেছেন৷ পাশাপাশি, মে-জুন মাসে গড়ে ৫.৩৫ লক্ষ পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে মসুর ডাল সরবরাহ করা হয়েছে৷ রেশনের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিত বরাদ্দ অনুসারে বিনামূল্যে সরবরাহকৃত রেশন সামগ্রীও আধারভিত্তিক বায়ােমেট্রিকের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে৷ যার ফলে সঠিক উপভােক্তাগণ তাদের রেশন সামগ্রী পেয়েছেন বলে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান৷
খাদ্যমন্ত্রী আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যােজনায় দ্বিতীয় পর্যায়ে (জুলাই-নভেম্বর) বিনামূল্যে চাল ও ছোলা সরবরাহ কর্মসূচি নভেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে৷ জুলাই মাসের বরাদ্দ বিনামূল্যে চাল এবং জুন মাসের বকেয়া মসুর ডাল ১ জুলাই থেকে বিতরণ করা শুরু হয়েছে৷
গত আড়াই বছর সময়কালে খাদ্য দফতর কর্তৃক গৃহীত উল্লেখযােগ্য পদক্ষেপ সমূহের উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের সমস্ত রেশনকার্ডের ডিজিটাইজড ডাটাবেস তৈরি করে আধার সংযুক্তিকরণের কাজ অতি দ্রুততার সঙ্গে শেষ হয়েছে৷ যার ফলে সারা রাজ্যে ৬২ হাজারেরও বেশি ভুয়াে রেশনকার্ড চিহ্ণিত করে বাতিল করা হয়েছে৷ এরফলে প্রতি মাসে প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার রেশন সামগ্রী অপচয় বন্ধ হয়েছে৷ বিভিন্ন সামগ্রীর বর্তমান বাজার মূল্যের নিরিখে টাকার অঙ্ক প্রায় ৫ কোটি ১০ লক্ষ টাকা৷ তাছাড়া রাজ্যের রেশন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে কম্পিউটারাইজড করার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ এরফলে সরকার নির্ধারিত রেশন সামগ্রীর বিক্রয়মূল্য হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকার রেশনসামগ্রীর অপচয় বন্ধ হয়েছে৷ রেশন সামগ্রী সংগ্রহ করার পর ভােক্তাদের রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে এস এম এস-এর মাধ্যমে রেশন সামগ্রী সংগ্রহের পরিমাণ ও দামের বিবরণ জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা দফতরের মাধ্যমে করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন৷
খাদ্যমন্ত্রী আরও জানান, উজ্জ্বলা যােজনায় এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাস বিনামূল্যে গ্রাহকদের গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আই ও সি এল এর নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিটি এল পি জি এজেন্সি তাদের ব্যবসাস্থল থেকে ১৫ কিলােমিটার এলাকার মধ্যে অবস্থিত প্রতিটি গ্রাহকের বাড়িতে হােম ডেলিভারির মাধ্যমে এল পি জি সিলিন্ডার সরবরাহ করতে বাধ্য৷ আর যারা হােমডেলিভারি নিতে ইচ্ছুক নন তাদের সিলিন্ডার পিছু ২৭.৬০ টাকা হােমডেলিভারির খরচ হিসাবে গ্যাস এজেন্সিগুলিকে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য৷ এ সম্পর্কিত কোনও অভিযােগ থাকলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির বিরুদ্ধে খাদ্য দফতরের নজরে নেওয়ার জন্য তিনি ভােক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷