নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ জুলাই৷৷ রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে চা, রাবার, মৌমাছি পালন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরন এবং প্রাক’তিক গ্যাসভিত্তিক শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করতে হবে৷ এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের আত্মনির্ভর ভারত, মেক ইন ইণ্ডিয়া, স্টার্ট আপ, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্পদ যোজনা, প্রধানমন্ত্রী এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম, মাইক্রো ফুড প্রসেসিং ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে৷ আজ সচিবালয়ের ২নং কনফারেন্স হলে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷
সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের কর্মপরিকল্পনা, রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতি, স্বাবলম্বন প্রকল্প, আই টি আই, ত্রিপুরা ব্যাম্ব মিশন, ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগম, ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগম এবং ত্রিপুরা খাদি ও গ্রামোদ্যোগের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়৷ শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পগুলি পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে৷ শিল্প স্থাপনে উদ্যোগীদের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ তিনি আরও বলেন, রাজ্যে বর্তমানে শিল্প স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে৷ একে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে শিল্প স্থাপনে উদ্যোগীদের উৎসাহ প্রদান করতে হবে৷ তাতে রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুুযোগ সৃষ্টি হবে৷
পর্যালোচনা সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা প্রশান্ত কুমার গোয়েল জানান, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে এম এস এম ই প্রকল্পে মোট ১,৪৯৯টি শিল্প ইউনিট রেজিষ্ট্রেশন করেছে৷ তাতে ২২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং ৮,৮৯৩ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে৷ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রাজ্যে নতুন ৩১টি শিল্প স্থাপন করা হয়েছে৷ তাতে ১২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে৷ কর্মসংস্থান হয়েছে ১,৪৮০ জনের৷ শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা আরও জানান, রাজ্যের শিল্পা’লগুলিতে প্রয়োজনীয় বিদ্যত সরবরাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যৎ নিগম এবং ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগম যৌথ সার্ভে করে ৩৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিল্পা’লগুলিতে উন্নতমানের ট্রান্সফরমার স্থাপন, অণ্ডারগ্রাউণ্ড ক্যাবল সম্পসারণ, নতুন ফীডার স্থাপন ইত্যাদি কাজগুলি করা হবে৷ এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিল্প স্থাপনে বিদ্যৎ অত্যন্ত অপরিহার্য উপাদান৷ শিল্পা’লগুলিতে প্রয়োজনীয় বিদ্যৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে তা দ্রত রূপায়ণের উদ্যোগ নিতে হবে৷
সভায় জাতীয় ব্যাম্ব মিশনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা জানান, জাতীয় ব্যাম্ব মিশনের মাধ্যেম রাজ্যে ২৯ লক্ষ বাঁশের চারা উৎপন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ চাকমাঘাট ও কুমারঘাটে ২টি ব্যাম্ব ডিপো তৈরীর কাজ চলছে৷ এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁশচাষী, বাঁশভিত্তিক শিল্পের কারিগর এবং উদ্যোগীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ১,০০০ জন বাঁশভিত্তিক শিল্পের কারিগরকে বিভিন্ন সামগ্রী প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা ব্যাম্ব মিশনের আর্থিক সহায়তায় রাজ্যে বাঁশের বোতলের পাশাপাশি বিভিন্ন কনটেইনার তৈরী করার জন্য টি আর পি সি-কে উদ্যোগ নিতে হবে৷ রাজ্যে এরজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বাঁশের ব্যবস্থা রয়েছে৷ বাঁশের তৈরী বোতল এবং কনটেইনারকে দেশ-বিদেশে বাজারজাত করণের লক্ষ্যে টি আর পি সি-কে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ পাশাপাশি এগুলির প্রচারের উপরও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে৷
পর্যালোচনা সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা আরও জানান, ত্রিপুরা খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদ রাজ্যে মৌমাছি পালনের উপর গুরুত্ব দিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ১১০ জন সুুবিধাভোগীকে মৌমাছি পালনের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ মৌমাছি পালনের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে মুম্বাইস্থিত খাদি ও গ্রামোদ্যোগ শিল্প কমিশনের নিকট ৬৪ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকার একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে৷ এছাড়াও রাজ্যে মৌমাছি পালন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত ১৫০০টি মৌমাছি পালন বা’ প্রদান করা হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে ১৫০০ মৌমাছি পালন বা’ বিতরণ করা হয়েছে সেগুলি থেকে কি পরিমাণ মধু সংগ্রহ হচ্ছে তা সার্ভে করে দেখতে হবে৷ পরবর্তীতে ক্লাস্টার ভিত্তিতে সুুবিধাভোগীদের মৌমাছি বা’ প্রদানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তাকে নির্দেশ দেন৷
পর্যালোচনা সভায় এছাড়াও চা শিল্প, প্রধানমন্ত্রী এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম, স্বাবলম্বন কর্মসূচি, ল্যাণ্ড কাস্টম স্টেশন, সাবমে বিশেষ অর্থনৈতিক অ’ল স্থাপন, আই টি আই, রাবার ভিত্তিক শিল্প ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা প্রশান্ত কুমার গোয়েল৷ সভায় মুখ্যসচিব মনোজ কুমার, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, অর্থ দপ্তরের সচিব তনুশ্রী দেববর্মা, পরিকল্পনা ও সমন্বয় দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন৷