নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জুলাই৷৷ করোনা-প্রকোপে বিদ্যুতের ব্যবহার কমেছে৷ ফলে, ত্রিপুরা বিদ্যুৎ নিগমকে লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে ত্রাতার ভূমিকায় নেমেছে ত্রিপুরা সরকার৷ এ-ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সহায়তার আর্জিও জানিয়েছে৷
আজ কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী আরকে সিং-এর সভাপতিত্বে রাজ্যগুলির বিদ্যুৎ মন্ত্রীদের এক ভিডিও কনফারেন্সে উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিদ্যুৎ মন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টিএসইসিএল-এ আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে বহিঃরাজ্যে বাণিজ্যিক কার্যকলাপ বন্ধ হওয়ায় ২০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে৷ এপ্রিল, মে মাসে রাজস্ব সংগ্রহও কমেছে ৩০-৪০ শতাংশ৷ তাছাড়া বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রায় ২২০.৯৫ কোটি টাকা বিল বকেয়া রয়েছে৷
এই সমস্ত সমস্যার নিরিখে ত্রিপুরা সরকার কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে৷ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর বকেয়া বিলের কারণে টিএসইসিএল-কে ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকার ঋণ নিতে হয়েছে৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে প্রদেয় নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটি চার্জের ৫০ শতাংশ মার্চ, ২০২০ থেকে তিন মাসের জন্য মকুব করা, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বিল প্রদানের ক্ষেত্রে মার্চ, ২০২০ থেকে ১২০ দিনের জন্য কোনও লেট সারচার্জ না কেটে মরেটরিয়াম প্রদান করা এবং কোভিড-১৯-এর বাবদ ৪.৩০ কোটি টাকার রিবেট প্রাপ্তির জন্য এনটিপিসি এবং পিজিসিআইএল-এর সাথে চুক্তি ইত্যাদি ত্রাণ সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রককে অনুরোধ জানিয়েছেন৷
তিনি এই ভিডিও কনফারেন্সে ভারত সরকারের বিবেচনার জন্য আরও কিছু বিষয় তুলে ধরেন৷ যেমন, ভারত সরকার যেন ডিসকম ইউটিলিটিকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আরইসি/পিইসি-র ৯.৫ শতাংশ এবং ব্যাঙ্কের ৭.৫ শতাংশ সুদের হারের তুলনায় কম সুদে ঋণ দেওয়া হয়৷ ডিডিইউজিজেওয়াই (ফেজ-টু) এবং সৌভাগ্য যোজনার পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ করার সময়সীমা বাড়ানো, আইপিডিএস প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা বাড়ানো ইত্যাদি৷ তাছাড়া তিনি বলেন, ত্রিপুরায় ৬০ শতাংশ বন এলাকা, জলবায়ু ও ভৌগোলিক পরিস্থিতির কারণে সোলার প্রকল্পের মাধ্যমে পুনঃনবীকরণ শক্তির উৎপাদন খুব একটা সম্ভব নয়৷ তাই তিনি ভারত সরকারকে আরপিও কমপ্লায়েন্স-এর ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার অনুরোধ জানান৷
তিনি ত্রিপুরায় নর্থ ইস্টার্ন রিজিওন্যাল পাওয়ার সিস্টেম ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সহায়তা এবং মার্চ, ২০২১ থেকে আরও পাঁচ বছরের জন্য ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে বাল্ক পাওয়ার সেল কন্ট্রাক্ট পুনঃনবীকরণ/মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টিও তিনি এই ভিডিও কনফারেন্সে উত্থাপন করেন৷ এছাড়া ত্রিপুরা টিএসইসিএল কী ধরনের সংস্কারমূলক কাজ হাতে নিয়েছে সে বিষয় তুলে ধরেন উপমুখ্যমন্ত্রী৷ তার মধ্যে রয়েছে ভোক্তাদের নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতের যোগান দিতে ১৭.৫৮ কোটি টাকা মূল্যের এডিবি ফান্ডে ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম রিলায়েবিলিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ণ করা, আইপিডিএস এবং ডিডিইউজিজেওয়াই প্রকল্পে ১,৮৪,২২৮টি প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজ চলছে৷ এছাড়া বিদ্যুৎ চুরি প্রতিরোধ ও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত মামলা দেখাশোনার জন্য আগরতলা, উদয়পুর ও কুমারঘাটে তিনটি বিশেষ থানা খোলার প্রস্তাব ত্রিপুরা সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে৷
2020-07-04