করিমগঞ্জ (অসম), ১১ মে (হি.স.) : ‘এক দেশ এক আইন’, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় দেখে আইনের ধারা বদল হতে পারে না। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে বিজেপি এই ডাক দিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই বিজেপি এ সব সূত্র বেমালুম ভুলে গিয়েছে। এই অভিযোগ অসম প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক তথা পেশায় গুয়াহাটি উচ্চ আদালতের আইনজীবী দাইয়ান হুসেনের। কোভিড-১৯ মারণ ভাইরাস নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় এআইইউডিএফ দলের বিধায়ক আমিনুল ইসলামকে হাজতবাস করতে হচ্ছে। এর জন্য ভারতীয় বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনের সময়োচিত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন দাইয়ান। কিন্তু সমপর্যায়ের অপরাধ করে শিলচরের বিধায়ক দিলীপ পাল ও শাসকদলের এক কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন বরা কীভাবে পার পেয়ে গেলেন? এ নিয়ে শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলেন প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক দাইয়ান হুসেন।
আইন শাসক দলের জন্য এক, আর বিরোধী দলের জন্য আরেক? এমন হতে পারে না। এআইইউডিএফ-এর বিধায়ক আমিনুল ইসলাম অন্যায় করেছেন, আইনি শাস্তিও ভোগ করছেন। কিন্তু একই ধরনের অন্যায় অপরাধ শিলচরের বিধায়ক দিলীপ পাল ও শাসক দলের কর্মকর্তা সত্যরঞ্জণ বরা সহ দলীয় বিধায়ক-নেতারা করলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিহিত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় রাজ্য সরকারের পক্ষপাতমূলক চরিত্র প্রকাশ্যে এসেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। দাইয়ান আরও বলেন, রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনও সরকারের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করছে। যা গণতন্ত্রের জন্য অশুভ সংকেত বলে মনে করেন দাইয়ান।
সোমবার দাইয়ান হুসেন এক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, আসাম পুলিশ অ্যাক্ট ২০০৭-এর বিধি-নীতি থেকে রাজ্য পুলিশকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে শাসকদল গণতন্ত্রকে পদদলিত করছে। তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে জানান প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক দাইয়ান হুসেন। তিনি রাজ্য পুলিশকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, সৎসাহস থাকলে সত্যরঞ্জণ বরা ও বিধায়ক দিলীপ পালকে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য গ্রেফতার করে দেখান। এঁদের প্রতি পুলিশের নরম মনোভাব কেন? এ নিয়ে রাজ্য পুলিশের নিরপেক্ষ কর্তব্যপরায়ণতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি।
বলেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট ব্যবহার ও চরম উদাসীনতার সুযোগে শাসক দলের মিডিয়া সেলের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যন্ত বেলাগাম হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত শাসকদলের নেতা কর্মীরা সামাজিক গণমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে সমগ্র রাজ্যে অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ সৃষ্টি করছেন বলেও অভিযোগ উত্থাপন করেন দাইয়ান হুসেন। তিনি বলেন, অথচ পুলিশ প্রশাসন এ সবের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ না করে রীতিমতো সমর্থন জানাচ্ছে। তা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বক্তব্যে বলেছিলেন, করোনা ভাইরাস কোনও জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় দেখে আক্রমণ করবে না। তাই মারণ ভাইরাস করোনাকে ধর্মের আধারে না নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। অথচ একই সরকারের রাজ্য নেতৃত্ব খোদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপন্থী বিরূপ মন্তব্য নিয়ে কোনও টু শব্দটিও করেনি। আর এতেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে মহামারি করোনা থেকেও রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি সরকার। এমন দাবি তুলে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকেও নিশানা করেন দাইয়ান।
এদিকে নোভেল কোভিড-১৯ মারণ ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার কর্ম তৎপরতার ভূয়সী প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন দাইয়ান। পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় রাজ্যবাসীকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত লকডাউন এবং সান্ধ্য আইন মেনে চলে, দেশ ও দশের এই সংকটজনক সময় সরকার ও প্রশাসনকে সকল প্রকার সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক তথা গুয়াহাটি উচ্চ আদালতের আইনজীবি দাইয়ান হুসেন।