নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ ডিসেম্বর৷৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছয়টি উগ্রপন্থী সংগঠনের সম্মিলিত মঞ্চ ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ওয়েস্টার্ন সাউথ-ইস্ট এশিয়া’ (ইউএনএলএফডব্লিউ) আগামীকালের ৭১-তম প্রজাতন্ত্র দিবস বর্জন করে এদিন বারো ঘণ্টার ‘সম্পূর্ণ বনধ’-এর ডাক দিয়েছে৷ সে অনুযায়ী আগামীকাল রবিবার প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন সকাল ৬-টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘সম্পূর্ণ বনধ’ পালন করতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনগুলি৷ যদিও ত্রিপুরা সহ পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলির আরক্ষা প্রশাসনের তরফ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে৷
রাজধানী আগরতলা শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা তল্লাসী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে৷ রাজ্যের মূল অনুষ্ঠানটি হতে চলেছে আসাম রাইফেলস ময়দানে৷ রবিবার এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে শহরে যানবাহন চলাচলে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ পাশাপাশি রেলস্টেশন, এয়ারপোর্ট, মোটরস্ট্যান্ড, আন্তরাজ্য বাস টার্মিনাসেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে৷
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে যথাক্রমে মণিপুর ভিত্তিক কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি (কেসিপি), কাংলেই ইয়াওল কান্না লুপ (কেওয়াইকেএল), মেঘালয়ের হিনিউত্রেপ ন্যাশনাল লিবারেশন কাউন্সিল (এইচএনএলসি), ত্রিপুরার ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব তিপ্রা (এনএলএফটি), অসম ও পশ্চিমবঙ্গের কমতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) এবং অসমের পিপলস ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিল অব কারবি লাংপি (পিডিসিকে)৷
আসন্ন প্রজাতন্ত্র দিবস বর্জনের ডাক দিয়ে যৌথ বিবৃতিতে ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ওয়েস্টার্ন সাউথ-ইস্ট এশিয়া’ বলেছে, ‘‘ভারতের সংযুক্ত সরকারের এজেন্সিগুলো এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাজ্যগুলির সরকারগুলি আগামীকাল এই অঞ্চলে গণতন্ত্র দিবস আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷ কিন্তু এই গণতন্ত্র দিবস পালনের পরিকল্পনা এই অঞ্চলের কাছে সম্পূর্ণ সংগতিহীন৷ কারণ এই অঞ্চলের নাগরিকদের প্রকৃত গণতন্ত্র ভোগ করতে দেওয়া হয় না৷ তথাকথিত ভারতের প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান উত্তরপূর্বীয় জনগণকে এর বলে কোনও স্বাধীনতা দিতে ব্যর্থ হয়েছে৷ আমাদের এই অঞ্চলের ভারতীয় শাসকরা তাত্ত্বিকভাবে প্রজাতান্ত্রিক৷ বাস্তব সত্য হল, খিলঞ্জিয়া মানুষজনের ওপর নিপীড়ন সমানে চলছে, যা প্রজাতন্ত্রের ধারণার পুরোপুরি বিরোধী৷ এক কথায়, এই অঞ্চলের জনগণ শোষিত জনতা৷’’ বিবৃতিতে এরা আগামীকাল অনুষ্ঠেয় প্রজাতন্ত্র দিবসের সকল অনুষ্ঠান বর্জন করতে আহ্বান জানিয়েছে৷
প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতি ১৫ আগস্টের স্বাধীনতা দিবস এবং ২৬ জানুয়ারি গণতন্ত্র দিবস বর্জনের ডাক দেয় এই সব উগ্রপন্থীরা৷ এদিন অসম (বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা), মণিপুর, মেঘালয়ে অঘোষিত বনধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হত৷ মানুষজন খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ি থেকে বের হতেন না৷ বাড়ি-ঘর, দোকানপাটে জাতীয় পতাকা উত্তলনেও ভয় পেতেন নাগরিকরা৷ তবে সাম্প্রতিককালে অসমের জনসাধারণ এই ভীতি কাটিয়ে উঠেছেন৷ অসমে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে এই দুই দিবস ঘটা করে পালন করেন জনসাধারণ৷