BRAKING NEWS

এটিএম হ্যাকে জড়িত সন্দেহে এক ধৃতের পুলিশ লকআপে মৃত্যু, খুনের অভিযোগ পরিবারের, তদন্তের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

আগরতলা, ১২ জানুয়ারি (হি.স.) : এটিএম হ্যাকের সাথে জড়িত সন্দেহে ধৃত এক ব্যক্তির পুলিশ লকআপে মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় মৃতের পরিবার খুনের অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেছে। পুলিশের বক্তব্য, এটিএম হ্যাকের সাথে জড়িত সন্দেহে ধৃত সুশান্ত ঘোষ আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু মৃতের পরিবারের দাবি, পুলিশি নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার ওই ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস পুলিশ লকআপে সন্দেহভাজন অপরাধীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করে দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

ত্রিপুরায় সর্ববৃহৎ এটিএম হ্যাকের ঘটনায় ক্রাইম ব্রাঞ্চ ধৃত দুই তুর্কি নাগরিক এবং দুই বাংলাদেশী নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। এর ভিত্তিতে পুলিশ একটি ব্যাগও উদ্ধার করে। ওই ব্যাগে তুর্কির নাগরিকদের জামা-কাপড় পাওয়া গিয়েছে। এদিকে, এটিএম হ্যাকারদের সহায়তার জন্য সন্দেহবশত লঙ্কামুড়ার ঘোষপাড়ার বাসিন্দা সুশান্ত ঘোষকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তাকে আদালতে সোপর্দ করে একদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। কিন্তু গতকাল শনিবার রাতে পশ্চিম আগরতলা থানার পুলিশ লকআপে রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু হয়।

এই ঘটনার পর আজ সুশান্ত ঘোষের বাবা পরিমল ঘোষ অভিযোগ করেন, তার ছেলে নির্দোষ এবং তাকে পুলিশ লকআপে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ছেলের মৃত্যু সংক্রান্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তক্রমে দোষীর বিচার চেয়ে মামলা করেছেন। তাঁর দাবি, কোনও বেআইনি কাজের সাথে তার ছেলে জড়িত ছিল না। একই কথা বলেন মৃতের বোন মৌসুমী ঘোষও। তাঁর দাবি, গতকাল আদালতে ভাইয়ের সাথে দেখা হলে তখন আমাকে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন সুশান্ত। বার বার তার সাথে দেখা করার জন্য পুলিশের কাছে আবদার না করার জন্যও বলেছিলেন। তখন বুঝতে পারিনি পুলিশ তাকে মেরে ফেলবে, এ-কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৌসুমী।

মৌসুমী ঘোষের দাবি, আজ সকালে থানা থেকে দুই পুলিশ কর্মী গিয়ে আমাদের থানায় যেতে বলেন। সে মোতাবেক থানায় গিয়ে জানতে পারি আমার ভাই পুলিশ লকআপে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে জিবি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশের সাথেই আমরা জিবি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ তাদের হাসপাতালে রেখে গায়েব হয়ে যাষ়। এর পর আমরা জানতে পেরেছি, সুশান্তর মৃতদেহ জিবি হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। মৌসুমীর কথায়, পুলিশ বলছে লকআপে সুশান্ত আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু থানার লকআপে কীভাবে আত্মহত্যা করল ভাই, সেই প্রশ্নের কোনও জবাব দিচ্ছে না পুলিশ। তাঁর সাফ কথা, লকআপে সুশান্ত পুলিশের নির্যাতনে মারা গেছে। এখন গা বাঁচাতে পুলিশ আত্মহত্যার গল্প সাজাচ্ছে।

এদিকে, জিবি হাসপাতালে উত্তেজিত জনতা ডিআইবি-র এক কনস্টেবল অসীম পালকে মারধর করেছেন। সেখানে উপস্থিত অন্য পুলিশ কর্মীরা কোনওক্রমে তাকে উদ্ধার করেছেন। পুলিশ লকআপে মৃত্যুর ঘটনায় এটিএম হ্যাক কাণ্ডে তদন্তকারী ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডেপুটি পুলিশ সুপার নির্দেশ দেব জানিয়েছেন, আদালত তাকে দুদিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছিল। গতকাল রাতে তাকে একটি স্থানে নেওয়া হয়েছিল যেখানে এটিএম হ্যাকিঙে ব্যবহৃত জিনিসপত্র পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে হাটু পর্যন্ত জল ছিল, তাই রাতে তল্লাশি বন্ধ রেখে তাকে পশ্চিম আগরতলা থানায় রেখে আমরা চলে যাই। তিনি বলেন, সকালে সুশান্তের মৃত্যুর খবর পেয়ে থানায় ছুটে গিয়েছি।

এদিকে, থানার লকআপে সন্দেহভাজন অপরাধীর মৃত্যুর ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব। তিনি বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান। তাই থানার লকআপে মৃত্যুর ঘটনায় দোষীর বিচার হবেই। তাঁর কথায়, ওই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সঠিক তদন্তক্রমে প্রকৃত দোষীর বিচার হবেই।

এদিকে, প্রদেশ কংগ্রেসও থানার লকআপে মৃত্যুর ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করেছে। পিসিসি-র অস্থায়ী সভাপতি পীযূষকান্তি বিশ্বাস বলেন, থানায় কড়া পুলিশের নজরদারিতে কোনও কয়েদি আত্মহত্যা কীভাবে করেছে, তা ভীষণ রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। তাই ঘটনাপ সুষ্ঠু তদন্তক্রমে দোষীর শাস্তি চাইছি। সাথে মৃতের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিও জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের অস্থায়ী সভাপতি বিশ্বাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *