ডেরা বাবা নানক, ৯ নভেম্বর (হি.স.) : শ্রী গুরুনানক দেবের ৫৫০ তম প্রকাশোস্তব উপলক্ষ্যে শনিবার কর্তারপুর করিডর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী| দেশ এবং বিশ্বজুড়ে বসবাসকারী শিখদের অভিনন্দন জানিয়ে কর্তারপুর করিডর দেশবাসীকে উত্সর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী| পাশাপাশি শিখদের আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্তারপুর করিডর তৈরি করার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী| এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৫৫০ টাকার মুদ্রা এবং ডাকটিকিটও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী|
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, পবিত্র এই ভূমিতে এসে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করছি| কর্তারপুর করিডর দেশবাসীকে উত্সর্গ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শ্রী গুরুনানক দেবজী শুধুমাত্র ভারত নয়, সমগ্র মানবতার জন্য অনুপ্রেরণা| সেই সময় সামাজিক বৈষম্য, অত্যাচার ও অধার্মিকতার যে বাতাবরণ ছিল, তা দূর করার জন্য বিশ্ব ভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন তিনি| দুরাচর থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবন উত্সর্গ করেছিলেন গুরুনানক দেবজী| প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, একদিকে গুরুনানক সামাজিক দর্শনের ভিত্তিতে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের রাস্তা দেখিয়েছিলেন, অন্যদিকে সমাজকে এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উপহার দিয়েছেন, যা সততার উপর টিকে ছিল| সত্য ও সততার পথে চলার মাধ্যমে কীভাবে অগ্রগতি সম্ভব সেই বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গুরুনানক সমাজকে ‘কিরত করো, নাম জপো’-র মূলমন্ত্র দিয়েছিলেন| গুরুনানক তাঁর ঘনিষ্ঠ ভাই লালো এবং ভাই মর্দানাকে তাঁর সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে এই বার্তা দিয়েছিলেন যে কেউ ছোট বা বড় নয়, সবাই সমান|
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, আজ গোটা বিশ্বজুড়ে গুরু সাহেবকে উত্সর্গ করে ভারতীয় দূতাবাসগুলির দ্বারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে| শিখ ধর্মের ঐতিহ্যকে গোটা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে| গুরুবাণী বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে| ইউনেস্কো প্রশংসনীয়ভাবে সেই কাজে সহায়তা করছে| শুধু তাই নয়, গুরুনানক দেব এবং খালসা পন্থ সম্পর্কিত শিক্ষা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে| এছাড়াও কানাডা এবং অমৃতসরেও একই রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে| আমাদের গুরুদের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র স্থান সম্পর্কে অবহিত হোক নতুন প্রজন্ম, এই লক্ষ্যে বিশেষ প্রচেষ্টা চলছে| সুলতানপুর লোধিকে ঐতিহ্যবাহী শহর হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে| এখানকার রেল স্টেশন থেকে অন্যান্য শিখ ধর্মীয় স্থানে সপ্তাহে পাঁচ দিন বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে| শ্রী কেসগড় সাহিব, শ্রী পাটনা সাহিব, শ্রী হুজুর সাহিব, শ্রী দমদমা সাহিব পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সরাসরি বিমান পরিষেবা শুরু করা হয়েছে| অমৃতসর থেকে লন্ডন সরাসরি ফ্লাইটে ওঙ্কার শোনা যায়|
কৃষ্ণাঙ্গ তালিকা থেকে মুছে ফেলা শিখদের নাম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেশ কয়েকবছর ধরে কিছু শিখ ভাই ভারতে আসতে অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছিলেন| যা দূরিভূত করা হয়েছে| এখন তাঁরা ভিসা অথবা ওসিআই কার্ডের জন্য ভারতে আসতে পারেন| ভারতে বসবাসকারী নিজেদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন| প্রধানমন্ত্রীর কথায়, কেন্দ্রের আরও দু’টি সিদ্ধান্তের জন্য শিখদের সরকারি উপকার হয়েছে| জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার সঙ্গে সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে বসবাসকারী শিখ পরিবারগুলিও ভারতে থাকা শিখদের মতো একই অধিকার পাবে| এখনও পর্যন্ত প্রায় হাজার শিখ পরিবার ছিল, যাঁরা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন| নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সৌজন্যে তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ হবে| এছাড়াও চলতি বছরে জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডে ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর এখন আধুনিক রূপ দেওয়া হচ্ছে| কর্তারপুর করিডর তৈরি হওয়ায় পঞ্জাব সরকার, পাকিস্তান সরকার এবং শ্রমিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী|
বের সাহিব গুরুদ্বারে প্রার্থনা করার জন্য শনিবার সকালেই সুলতানপুর লোধিতে এসে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী| সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং| বের সাহিব গুরুদ্বারে প্রার্থনা করার পর গুরুদাসপুর জেলার ডেরা বাবা নানক-এ এসে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী| সেখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদলের সঙ্গেও সাক্ষাত্ করেন প্রধানমন্ত্রী| এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গুরুদাসপুরের বিজেপি সাংসদ সানি দেওল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরী এবং শিরোমণি অকালি দলের নেতা সুখবীর বাদল| এরপর কর্তারপুর করিডরের ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী| সবশেষে ডেরা বাবা নানক-এ ভোজন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং প্রমুখ|
এদিকে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের কর্তারপুর করিডোর উদ্বোধনে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষদের অভিনন্দন জানালেন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাক প্রধানমন্ত্রী এক বার্তায় বলেন, মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা ধার্মিক স্থান ও পূজা স্থানে পবিত্রতা বজায় রাখা ভালোভাবেই জানেন। তিনি আরও বলেন, এই ঐতিহাসিক করিডোর উন্মোচিত হওয়ার ফলে আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখতে পাকিস্তান যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারই একটি প্রমাণ। পাকিস্তান খোলা মনে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বাগত জানাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আরও বলেন, মুসলিমরা মুসলিম সম্প্রদায়ের সহ অন্যান্য জাতির ধর্মের প্রতি আস্থা রাখা মানুষদের প্রতি একই ভালোবাসার নজরে দেখে।