নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ আগস্ট৷৷ কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পগুলির কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারদর্শিতার সঙ্গে শেষ করতে হবে৷ এই ক্ষেত্রে রাজ্যের জেলাগুলির জেলাশাসকদের ভূমিকা অন্যতম৷একই সঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকেও সরকারি আধিকারিকদের সাথে সমন্বয় রেখে উন্নয়নমুলক কাজগুলি রূপায়ন করে ত্রিপুরাকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে হবে৷ আজ আগরতলার প্র’াভবনে নগরোন্নয়ন দপ্তর আয়োজিত নগর উন্নয়ন প্রকল্প এবং এন জি টি(ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইব্যুনাল)-এর নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কিত কর্মশালা সহ এক পর্যালোচনা সভার সূচনা করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, জেলাশাসকদের সময়কাল সাধারণত ৩ থেকে ৪ বছর থাকে৷ এটাই তাদের জন্য সুুবর্ণ সময়৷ কারণ এই সময়ের কার্যকালে জেলাশাসকগণ সমস্ত দপ্তরের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করতে পারেন৷
তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যেকোন কাজ সম্পাদন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে জেলাশাসকদের৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে ব্যক্তি যেই পদে কর্মরত রয়েছেন তিনি যেন সময়ের মধ্যে নিজের কাজ সম্পাদন করেন৷ এটাই হচ্ছে পারদর্শিতা যা আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিচার ধারা ৷ তিনি বলেন, আমাদের দেশের প্রধান ব্যক্তির কাজ করার মানসিকতা থাকায় তাঁর অধিনস্ত সকল ব্যক্তিদের মধ্যেই কাজ করার মানসিকতা জেগে উঠেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী নগর সংস্থার নির্বাচিত প্রতিনিধি তথা উপস্থিত চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে বলেন, পারদর্শিতা, সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা ব্যক্তির কথা জনগণ সর্বদাই মনে রাখেন৷ এর উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন, লালবাহাদুর শা’ সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন বলে ভারতবাসী এখনও তার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে মরণ করেন৷ তিনি কর্মশালায় উপস্থিত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রকল্পগুলো পর্যবেক্ষণ করে নির্দিষ্ট সময়ে রূপায়িত করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বশাসিত নগর সংস্থাগুলির ছোট ছোট প্রকল্প রয়েছে৷ এই নগর সংস্থাগুলির মাধ্যমে রাজ্যের ৫০ শতাংশ জি ডি পি আসে৷ তাই ত্রিপুরাকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে হলে শহরেরও উন্নয়ন করতে হবে৷ স্বনির্ভর নগর সংস্থা গড়ে তোলার উপরও গুরুত্ব দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ তিনি বলেন, রাজ্যের রাজস্ব আয় বেড়ে ২৬ শতাংশ হয়েছে যা বিগত সরকারের আমলে ছিল মাত্র ৯.৮ শতাংশ৷ তাই নগর সংস্থাগুলিকেও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রেখে নিজস্ব আয় বাড়াতে হবে৷ তিনি বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জনগণের সঙ্গে সুু-সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে৷ প্রয়োজনীয় জলের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট পরিষ্কার, নর্দমা পরিষ্কার প্রভ’তি পরিষেবার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ দৃষ্টি আরোপ করতে হবে৷ তবেই কর প্রদানের ক্ষেত্রেও জনগণ আরও বেশি করে আগ্রহী হয়ে উঠবে৷ তাই সমস্ত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পর্যালোচনা সভায় আলোচনাকালে নগরোন্নয়ন দপ্তরের বিশেষ সচিব কিরণ গিত্যে নগর সংস্থাগুলি কিভাবে শহর উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করবে, সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট (ডি পি আর) তৈরী করার বিষয় সহ নগর সংস্থাগুলির রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলেন৷
স্বাগত বক্তব্যে নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা ড. মিলিন্দ রামটেকে বলেন, রাজ্যের নগর উন্নয়ন সংস্থাগুলির মধ্যে মোট জনসংখ্যা রয়েছে ২৩ শতাংশ৷ তিনি বলেন, রাজ্যের নগর সংস্থাগুলির সম্পত্তি কর আদায়ের ক্ষেত্রে মূল্য পৃথক রয়েছে৷ তাই সবগুলি সংস্থার জন্য একই মূল্য করার বিষয়ে প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যে অটল জলধারা মিশনের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারে বিনামূল্যে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে৷ যেখানে জলের সংযোগ এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি সেখানে নগর সংস্থাগুলির টুয়েপ-এর অর্থে, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের অর্থে বা নিজস্ব রাজস্ব আয় থেকে অর্থ বরাদ্দ করে জলের সংযোগ দেওয়া যাবে৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (নগর) প্রকল্পের ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বা’ল এবং দেশের পাহাড়ি রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরার সাফল্য সবচেয়ে ভাল৷ ২০২২ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ত্রিপুরায় ২০২১ সালের মার্চের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে৷
এছাড়া তিনি কঠিন বজ্য ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিতে বাড়ি বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করতে মহিলা স্বসহায়ক দলগুলিকে যুক্ত করতে গুরুত্ব আরোপ করেন৷ এখন পর্যন্ত নগর সংস্থার ৩১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯৮টি ওয়ার্ডে এই প্রকল্প চালু হয়েছে বলে তিনি জানান৷পর্যালোচনা সভায় আগরতলা পুর নিগম সহ ২০টি স্বশাসিত নগর সংস্থা অর্থাৎ পুর পরিষদ এবং নগর প’ায়েতের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক এবং মহকুমা শাসকগণ নিজ নিজ পুর পরিষদ এবং নগর প’ায়েত এলাকার শহর উন্নয়নের রূপরেখা সবিস্তারে তুলে ধরেন৷ পর্যালোচনা সভায় আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ড. প্রফুল্লজিৎ সিনহা ছাড়াও ১৯টি পুর পরিষদ এবং নগর প’ায়েতের চেয়ারপার্সন, ভাইস চেয়ারপার্সন, জেলাশাসকগণ উপস্থিত ছিলেন৷