BRAKING NEWS

আইজিএমে প্রসূতির মৃত্যুতে চিকিৎসককে খুনের চেষ্টা, প্রাইভেট প্র্যাকটিস, স্বেচ্ছা পরিষেবা বন্ধ ও গণ ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যের চিকিৎসকরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ এপ্রিল৷৷ প্রসূতির মৃত্যুকে ঘিরে কর্তব্যরত চিকিৎসককে খুনের চেষ্টার ঘটনায় রাজ্যের চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস, স্বেচ্ছা সেবা বন্ধের পাশাপাশি গণ ইস্তফার সিন্ধান্ত নিয়েছেন৷ বুধবার রাতে আইজিএম হাসপাতালে জনৈক প্রসূতির সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যু হয়৷ তাতে, কর্তব্যরত চিকিৎসক দীপঙ্কর দেবনাথকে প্রচন্ড মারধোর করেছে মৃতার পরিবারের সদস্যরা৷ বর্তমানে ডাঃ দেবনাথ জি বি হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন৷ নারকীয় এই ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ কিন্তু, নিরাপত্তার দাবিতে রাজ্যের চিকিৎসকরা আজ রাজ্য সরকারকে চরম হুশিয়ারী দিয়েছেন৷

জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে আইজিএম হাসপাতালে ভর্তি লঙ্কামুড়ার বাসিন্দা গোবিন্দ দাসের স্ত্রী মাম্পি দাস৷ ওইদিন রাত এগারটা নাগাদ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তাঁর মৃত্যু হয়৷ কর্তব্যরত চিকিৎসকের দাবি, অপারেশন থিয়েটারে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে৷ রাতে এনিয়ে কোন ঝামেলা না হলেও৷ ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মৃতার পরিবারের কয়েকজন সদস্য হাসপাতালে গিয়ে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপঙ্কর দেবনাথকে হাসপাতাল থেকে বাইরে বেধরক মারধোর শুরু করেন৷ হাসপাতালে উপস্থিত বেসরকারী নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের বাধা দিতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন৷ ওই সময় উত্তেজিত হয়ে মৃতার পরিবারের সদস্যরা ডাঃ দেবনাথকে টেনে হিচড়ে সিটি সেন্টারের সামনে নিয়ে যায়৷ সেখানে নিয়ে গিয়ে তাঁকে প্রচন্ড মারধোর করে এবং অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রেখে তারা সেখান থেকে চলে যায়৷ খবর পেয়ে পশ্চিম থানার পুলিশ প্রচন্ড আহত অবস্থায় ডাঃ দেবনাথকে উদ্ধার করে আইজিএম হাসপাতালে ভর্তি করে৷ কিন্তু, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে জি বি হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে পাঠানো হয়৷ বর্তমানে সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে৷

এদিকে, এই খবর পেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ হাসপাতালে ছুটে যান৷ তিনি ডাঃ দেবনাথের শারীরিক অবস্থার খোজ খবর নেন এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা পুলিশকে বলেন৷ পুলিশ এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ চিকিৎসককে মারধোরের ঘটনায় পুলিশ খোকন দাস, সুমন দাস, অর্জুন দাস, বিকাশ দাস এবং প্রদীপ দাসকে গ্রেপ্তার করেছে৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধি ৩৬৪, ৩০৭, ৩৩৩, ৪২৭ এবং ৩৪ ধারা এবং মেডিক্যাল কিউর প্রিভেন্টিভ এ্যক্ট’র ৩ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে৷ মামলা নম্বর ৭০/১৯৷ জানা গেছে, ধৃতদের বাড়ি কল্যাণপুর থানানধীন তুতাবাড়ি এলাকায়৷

এদিকে, চিকিৎসককে খুনের চেষ্টার ঘটনায় এদিন বিকাল সাড়ে চারটায় আইজিএম হাসপাতাল চত্বরে ধর্ণায় বসেন সরকারী হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা৷ নিরাপত্তার দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন৷ অল ত্রিপুরা গভর্মেন্ট ডক্টরস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ রারজেশ চৌধুরী বলেন, রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে এখন আমাদের প্রাণ সংশয় হয়ে পড়েছে৷ প্রতি নিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় আমাদের৷ প্রায়ই কোন না কোন হাসপাতালে চিকিৎসকরা নিগৃহীত হচ্ছেন৷ সমাজের একাংশ মানুষ চিকিৎসকদের উপর হামলা করছে৷ তিনি বলেন, গত এক বছরে চিকিৎসক আক্রান্তের ১২টি ঘটনা ঘটেছে৷ তিনি বলেন, চিকিৎসক আক্রান্তের ঘটনা প্রতিদিন বেড়ে চললেও প্রশাসনের তরফে কোন কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না৷ তাই চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন পথ খোলা নেই৷

তিনি জানান, চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে আগামী এক সপ্তাহ সমস্ত প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখবেন চিকিৎসকরা৷ শুধু তাই নয়, সেচ্ছা সেবাও আমরা করব না৷ পাশাপাশি, দুয়েক দিনের মধ্যে গণ ইস্তফা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *