BRAKING NEWS

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সংবেদনশীল বিবৃতি দেওয়ার আগে রাহুল গান্ধীকে কংগ্রেসের ইতিহাস জানতে হবে, ব্লগে সরব আমিত শাহ

নয়াদিল্লি, ১৫ মার্চ (হি.স.) : সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সংবেদনশীল বিবৃতি দেওয়ার আগে রাহুল গান্ধীকে কংগ্রেসের ইতিহাস জানতে হবে বলে শুক্রবার ব্লগে সরব হলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি আমিত শাহ |

শুক্রবার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি আমিত শাহ | এদিন তিনি ব্লগে লেখেন, পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে ভারতীয় বায়ু সেনার এয়ার স্ট্রাইকের পর সন্ত্রাসবাদীদের মাথা মাসুদ আজহারকে নিয়ে পাকিস্তানের উপর যেভাবে আন্তর্জাতিক স্তর ও ভারতের পক্ষ থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ | কুখ্যাত জঙ্গি মাসুদ আজহার এবং তার সন্ত্রাসবাদী সংগঠন নিয়ে পাকিস্তান খুব চাপে রয়েছে। বিশ্বের সমস্ত দেশ এবং বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলি ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের সর্বস্তরে পাকিস্তানের বিকৃত চেহারা উন্মোচিত হয়েছে | পাকিস্তান যে কোনও উপায়ে নিজেদের ক্ষুন্ন হওয়া ভাবমূর্তি পুরুদ্ধার করতে চাইছে | এই পরিস্থিতিতে যখন অপরাধী সন্ত্রাসবাদী মাসুদ আজহার এবং তার সংঠনের বিরুদ্ধে ভারত সহ বিশ্বের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলি একজোট হয়েছে এবং বিশ্বের দরবারে পাকিস্তান চাপের মুখে রয়েছে সেই সময় দেশের মধ্যে কংগ্রেস এবং কিছু রাজনৈতিক দলের প্রশ্ন এবং টিপ্পনির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি মদত পাচ্ছে। কংগ্রেস যেভাবে ১৯৯৯ সালের কান্দাহার বিমান অপহরণের সংবেদনশীল ঘটনাকে আজ নিজেদের ভিত্তিহীন রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, যে ঘটনার সঙ্গে ১৭০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ জড়িয়েছিল, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এদের মধ্যে বাইরের দেশের মানুষও ছিলেন যাদের সুরক্ষা আমাদের কর্তব্য। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী দেশের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এবং কান্দাহার বিমান অপহরণের ঘটনার সাথে জড়িত মানুষের জীবনের প্রতি অসংবেদনশীলতা প্রকাশ করে মোদী সরকারকে প্রশ্ন করছেন, অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার মাসুদ আজহারকে কেন ছেড়ে দিয়েছিল?

তিনি কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে জানতে চান এটা কি এমনই একটা প্রশ্ন যার এখনও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি! কংগ্রেস কি জানেনা এই ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী একটি ‘সর্বদলীয় বৈঠক’ ডেকেছিলেন! তিনি বলেন, ওই বৈঠকে কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং উপস্থিত ছিলেন। দেশের মানুষের কথা ভেবে এবং বিমানে আটকে পড়া জীবন রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দল সহমত হয়েছিল। শেষে সব দলের সর্বসম্মতি নিয়ে মাসুদ আজহারকে সমর্পণ এবং দেশের মানুষের ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব স্বীকার করা হয়। এটা গোটা দেশের দাবি ছিল, বিমানে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করা আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য ছিল, আমরা তাই করেছি যা সেই মুহূর্তে করা সম্ভব ছিল। এই সিদ্ধান্ত কোনও ‘গুডউইল জেসচার’ তৈরি করতে নেওয়া হয়নি। এমনকি তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিং, যাঁর পুত্র বর্তমানে কংগ্রেসে আছেন, ২০০৯ সালে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন সর্বদলীয় বৈঠকের সিদ্ধান্তে সোনিয়া গান্ধী এবং মনমোহন সিং সহমত ছিলেন। আজ কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধী এই ঘটনায় প্রশ্ন তুলে শুধু অসংবেদনশীলতারই পরিচয় দিচ্ছেন না উপরন্ত নিজেদের পার্টির প্রবীণ নেতাদের বিবেকের ওপর প্রশ্নচিহ্ন তুলছেন।

তাঁর দাবি, এই অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস ইতিহাসের এমন বিষয়ের ওপর সমালোচনা করছে যা তাদের নিজেদেরকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এই সমালোচনা মাসুদ আজহারকে ফিরিয়ে দেওয়া বা না-দেওয়ায় শুরুও হয় না শেষও হয় না। কান্দাহার বিমান অপহরণের ঘটনার দশ বছর আগে দেশের গৃহমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সঈদের কন্যা রুবেয়া সঈদকে কাশ্মীরের ঘাঁটি থেকে সন্ত্রাসবাদীরা অপহরণ করেছিল। এই ঘটনায় তিনি ১০ সন্ত্রাসবাদীকে ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। সরকার তাঁর অনুরোধ রেখে ১০ সন্ত্রাসবাদীকে ছেড়েও দিয়েছিল। এটাও ‘গুডউইল জেসচার’ ছিল না।
তিনি বলেন, কংগ্রেসকে বলতে হবে ২০১০ সালে যখন কংগ্রেসের সরকার ছিল তখন ২৮ মে-তে ২৫ জন কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীদের কেন ছাড়া হল ? সেই সময়ে এখনকার মতো কোনওরকম পরিস্থিতি ছিল না | বলা যায় কোনওরকম চাপ ছিল না | কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার সম্পর্ক ভালো করার জন্য পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের ছেড়ে দেয়। এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে ২৫ সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে একজন এমনও ছিল যাকে ১৯৯৯ সাল থেকে আটকে রাখা হয়েছিল। এই ২৫জন কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী জইশ-ই-মহম্মদ ও লস্কর-ই-তাইবা মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। মুক্তিপ্রাপ্ত সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে একজন শহিদ লতিফ ছাড়া পাওয়ার পর পাঠানকোট হামলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। আজকে রাজনীতির জন্য একটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন উঠছে, কংগ্রেস কেন কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীদের মুক্তি দিয়েছিল? কী জবাব দেবে কংগ্রেস?

তাঁর আরও লেখেন, কংগ্রেস যে তথ্য তুলেছে তার মূল সত্য আমাদের জানতে হবে। আসলে কংগ্রেসের নীতি সব সময় আতঙ্কবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং নকশালবাদ। সিনিয়র কংগ্রেস নেতা শীলা দীক্ষিত স্বীকার করেছেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে মোদী সরকারের কঠোর নীতির তুলনায় মনমোহন সিংয়ের চাপের নীতিটি দুর্বল ছিল। শীলা দীক্ষিত একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে যখন কংগ্রেসের সরকার দেশে দশ বছর ছিল তখন মুম্বাই, দিল্লি, জয়পুরসহ দেশের বিভিন্ন অংশে সন্ত্রাসবাদী ঘটনাগুলি খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত পাঁচ বছরে আমরা সন্ত্রাসবাদীদের দেশের ভিতরে প্রবেশ করতে দিইনি। ওদেরকে সীমানা কাছে থাকতে হয়েছে। সন্ত্রাসবাদীরা দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পেতে পারেনি, দেশ তাদের সেটা পেতে দেয়নি। দেশের সীমানার মধ্যেও মোদী সরকার আতঙ্কবাদীদের বিরুদ্ধে্ “জিরো টলারেন্স” জারি করেছে। আজকে যদি কোনও আতঙ্কবাদী আসতে চেষ্টা করে তাহলে ভারতীয় জওয়ান মখ্যম জবাব দেবে।

তিনি উল্লেখ করেন, এটা সত্য যে ক্ষমতায় থাকার সময় সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দোদুল্যামান নীতি অবলম্বন করা কংগ্রেস বিরোধী দল থাকা অবস্থায় সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং নকশালবাদীদের সমর্থনের কোনও সুযোগই ছাড়তে নারাজ । রাহুল গান্ধীর ‘ছোট ছোট দল’-এর পাশে দাঁড়ান এবং তাদের সমর্থন করা, এর উদাহরন | কংগ্রেস কি জবাব দেবে ২008 সালে বাটলা হাউস এনকাউন্টারে সন্ত্রাসীদের মৃত্যুর ঘটনায় কেন সোনিয়া গান্ধী গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছিলেন ? মোদী সরকার যদি এই সব বিষয় গুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে তবে উত্তেজিত হওয়া স্বাভাবিক, যা কংগ্রেসের ভয়কেই প্রকাশ করছে |

তাঁর আরও দাবি, আজ বিশ্ব মজবুত ভারতের দিকে যখন তাকিয়ে রয়েছে, বরং মজবুতিতে দাঁড়িয়ে আছে তখন কংগ্রেস নিজেদের মন্তব্য থেকে ওই সমস্ত দেশগুলোকে মদত দিচ্ছে, যারা ভারতকে শক্তিশালী দেখতে চায় না। জওহরলাল নেহেরু মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার বিষয় যখন আসে, তখন পন্ডিত নেহেরু চিন নীতির উপর দাঁড়িয়ে সেই সুযোগ চিনের হাতে তুলে দিয়েছেন। এই ঘটনার কথা কংগ্রেস দলের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী নটবর সিং নিজের লেখা বইয়ে উল্লেখ করেছেন। আজ চিন ওই অধিকারকে হাতিয়ার করে বার বার জঙ্গি মাসুদ আজহারকে বাঁচানো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কাশ্মীরের সমস্যা রাষ্ট্রসঙ্ঘে পেশ করা বিষয়েও ভুল করেছেন। সন্ত্রাসবাদী ও অসংবেদনশীল মন্তব্য করার আগে রাহুল গান্ধী নিজের দলের ও নেহেরুর ওই দুটি ভুলের উপর অবশ্যই নজর দেওয়া উচিত। এই দুটি ভুলই আজ দেশের পক্ষে দুরারোগ্য ক্ষত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *