জাইকার ২য় পর্যায়ের সূচনা, প্রকল্পকে সম্পূর্ণ রোজগার ভিত্তিক তৈরি করা হয়েছে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ জানুয়ারি ৷৷ বনদপ্তরের মাধ্যমে যে সকল প্রকল্প রূপায়ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তার মাধ্যমে প্রকৃতিকে রক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও যাতে সৃষ্টি হয় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে৷ তবেই রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব হবে৷ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই রাজ্যের বন এলাকার উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থ সামাজিক মানোন্নয়ন, বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা এবং ভূমি ও জল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ আজ শালবাগানের হাতিপাড়াস্থিত ত্রিপুরা রাজ্য বন একাডেমী প্রাঙ্গণে ত্রিপুরা জাইকা প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, রাজ্যে ২০০৭ সালেজাইকা প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে৷ এই প্রকল্পে ১০ বছরের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুরী পাওয়া গেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজ্যের বনাঞ্চল এলাকা জাতীয় গড়ের চাইতে বেশি৷ সুন্দরী ত্রিপুরাকে কিভাবে আরও সুন্দর করা যায় এবং স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায় সেই বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই জাইকা প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করা হয়েছে৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৪৪৭টি চেকড্যাম তৈরি করা হবে৷ অধিকাংস চেকড্যামগুলিই তৈরি করা হবে পাহাড়ি এলাকায়৷ চেকড্যামগুলির মাধ্যমে মৎস্য চাষ, হাঁস পালন করে জনজাতিদের রোজগারেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে৷ তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে বর্ষার সময় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সমতল অঞ্চল বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ বৃষ্টির সেই জলকে পাহাড়ি অঞ্চলে ধরে রাখার ব্যবস্থাও করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে৷ এতে কৃষি, বনায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুবিধা হবে৷ পাশাপাশি বন্যার হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যেতে পারে৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্ল্যানটেশন করা হবে৷ এরমধ্যে বাঁশ চাষে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হবে৷ ত্রিপুরার বিভিন্ন নদীগুলির পাড় ভাঙন রোধ করার জন্য এই প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর পাড়ে গাছও লাগানো হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জাইকা প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে আগর গাছের বনায়নে বনদপ্তর বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে৷ এর মাধ্যমে স্থানীয় রোজগার দেওয়ার দিশাতেই কাজ করছে রাজ্য সরকার৷ এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে আদা, আনারস, সজনে ইত্যাদির প্লানটেশনও করা হবে৷ রাজ্যে ডেয়ারী শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৫ হাজার পরিবারে ২টি করে মোট ১০ হাজার গাভী প্রদান করা হবে৷ নাবার্ডের মাধ্যমে ঐ পরিবারের মহিলাদের ভর্তুকীতে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে৷ এতে রোজগারের পাশাপাশি রাজ্য দুধেও স্বয়ম্ভর হতে পারবে৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজ্যের বনজ সম্পদ থেকে যেসব দ্রব্য তৈরি করা হয় তা সারা দেশেই সমাদৃত৷ এই সকল দ্রব্যকে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও কিভাবে বাজারজাত করার যায় সেই লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ করছে৷ জাইকার দ্বিতীয় পর্যায়ের এই প্রকল্প সম্পূর্ণ রোজগার ভিত্তিক তৈরি করা হয়েছে৷ রাজ্যের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান যেমন ঊনকোটি, ছবিমুড়া, বিভিন্ন ইকো পার্কগুলির উন্নয়ন করার ব্যবস্থাও রয়েছে এই প্রকল্পে৷ ফলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্যের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ই-টেন্ডারিং, ই-পিডিএস, ই-চালান, ই-গেজেট ইত্যাদি চালু করেছে৷ ত্রিপুরাকে স্বনির্ভর ও মডেল রাজ্য বানানোর লক্ষ্যে জাইকা প্রকল্পের মাধ্যমে যে অর্থের মঞ্জুরী পাওয়া গেছে তাকে সঠিকভাবে সঠিক কাজে লাগিয়ে স্থায়ী রোজগারের ব্যবস্থাও করা হবে৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতির ভাষণে বনমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া বলেন, জাইকা প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে মূল লক্ষ্য হবে বনের উন্নয়ন, বনকে রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং বনকে সবুজ করা৷ কারণ বনের মাধ্যমেই মানুষের জীবন রক্ষিত হবেত পারে৷ এই প্রকল্প যাতে সঠিক ও সফলভাবে রূপায়ন হতে পারে সেজন্য আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে৷ বিশেষ করে জনজাতি এলাকায় জাইকা প্রকল্পে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হবে তা যাতে সফল হয় সেই বিষয়ে ঐ এলাকার জনগণকে সচেষ্ট থাকতে হবে৷ বনকে ভিত্তি করে যাতে স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় সেই লক্ষ্যেও বন দপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷


অনুষ্ঠানে বন দপ্তরের প্রধান মুখ্য বনসংরক্ষক ডঃ অলিন্দ রস্তোগী বলেন, আজকের দিনটি ত্রিপুরাবাসীর জন্য খুবই আনন্দের৷ বাস্তুতন্ত্রকে বজায় রাখার ক্ষেত্রে বনের গুরুত্ব অপরিসীম৷ বনকে উন্নয়ন করে কিভাবে আর্থিক উন্নতি লাভ করা যায় তা জাইকা প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ জীবিকার মানোন্নয়নেরক উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পে ১৩৫০টি স্ব সহায়ক দল এবং ১ হাজার ৪৪৭টি চেকড্যাম তৈরি করা হবে৷ বনাঞ্চলের গুণ ও ঘনত্ব বাড়ানোর মাধ্যমে ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত বনজ সম্পদের উন্নতি সাধনের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ ত্রিপুরার জনজীবনের মানোন্নয়ন ঘটানোর জন্যই এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে৷ এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে বনায়ন, বাঁশচাষ, ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন এবং প্রানী সম্পদ ও মৎস্য চাষের মাধ্যমে জীবিকার ব্যবস্থাও করা হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *