BRAKING NEWS

তাবলীগ জামাতের বিরোধ মেটাতে বিশেষ উদ্যোগ, নেতাদের এবার ভারত পাঠানো হচ্ছে

ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি (হি.স.): বাংলাদেশ সরকার তাবলীগ জামাতের বিভক্তি মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্ব ইজতেমা করার জন্য সংগঠনটির দুই গ্রুপের প্রতিনিধিদের ভারতের দেওবন্দে (উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার শহর দেওবন্দ) পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এই উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ভারতের দেওবন্দে ফতোয়ার জন্য পাঠানোর এই উদ্যোগকে সরকারের পক্ষ থেকে তাবলীগ জামাতকে ঐক্যবদ্ধ রাখার শেষ চেষ্টা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাবলীগ জামাতের মধ্যে বিভক্তির কারণে এবার বিশ্ব ইজতেমা নির্ধারিত সময়ে হতে পারেনি এবং অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। তাবলীগ জামাতের নেতা ভারতের সাদ কান্দালভিকে নিয়ে বাংলাদেশে সংগঠনটির প্রতিপক্ষ দু’টি গোষ্ঠীই যার যার অবস্থানে অনড় রয়েছে।

তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপ এবার আলাদা আলাদাভাবে ঢাকার কাছে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার তারিখ ঠিক করেছিল। সে জন্য টঙ্গীর সেই ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে গত পহেলা ডিসেম্বর। এই ঘটনার পর সরকার তাবলীগের দু’টি গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করেছিল এবং সেই বৈঠকে ইজতেমা স্থগিত করা হয়েছিল। নির্বাচনের পর সরকার এখন তাবলীগের বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ তাবলীগের দুই বিবদমান গোষ্ঠীকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। প্রতিমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বলেছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে টঙ্গীতে ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্ব ইজতেমা করার শেষ চেষ্টা তারা করছেন। তিনি বলেন, সাদ কান্দালভি কিছু কথা বলেছেন। এ দেশের আলেম ওলামারা মনে করেন, সেটা ধর্মের শরিয়তের বিরোধী। আবার সাদ সাহেবের পক্ষের লোকেরা বলছেন, উনি সেটাকে রুজু করেছেন, মানে প্রত্যাহার করেছেন। তো এখন দেওবন্দের কর্তৃপক্ষ এটাকে অর্থ্যাৎ এই রুজু করাটাকে গ্রহণ করেছেন কিনা বা তা কার্যকর হয়েছে কিনা-এটা দেখার জন্য আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাবলীগের দুই পক্ষ দেওবন্দ যাবে। তাবলীগে বিরোধ মেটানোর জন্য কয়েকদিনের মধ্যে ভারতের দেওবন্দে ফতোয়া নিতে যারা যচ্ছেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নিজেই সেই দলের নেতৃত্ব দেবেন।

কিন্তু, বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এর সঙ্গে জড়িতরা আলাদা আলাদাভাবে কাজ করছেন। দু’টি গোষ্ঠীই একে অপরের বিরুদ্ধে চরম বৈরি অবস্থান নিয়ে আছেন এবং তারা যে আবার ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেন-এটা নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই সন্দেহ রয়েছে। ভারতের সাদ কান্দালভিকে নিয়েই মূলত বিভক্তি। সাদ কান্দালভির পক্ষের অংশের আশরাফ আলী অভিযোগ করেছেন, হেফাজতে ইসলাম এখন তাবলীগ জামাতকেও নিয়ন্ত্রণে নেওয়ায় সেখানে রাজনীতি ঢুকে এই বিভক্তি নিয়ে এসেছে। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আমাদের তাবলীগেরই একটা অংশের লিঁয়াজো হয়ে যাওয়ার কারণে বাইরের লোক ঢুকে গিয়েছে। আর সেই কারণে এখানে রাজনীতি হচ্ছে। আশরাফ আলী আরও বলেছেন,এখন আমাদের দুই অংশের মধ্যে একেবারে নীতিগত পার্থক্য হয়ে গিয়েছে। এটা নয় যে শুধু মনমালিন্য হয়েছে।

সাদ কান্দালভি তাবলীগ জামাতে কিছু সংস্কারের কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয়। তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মতো বাংলাদেশেও তাবলীগ জামাত বিভক্ত হয়ে পড়ে। তাবলীগের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধও এই বিভক্তির অন্যতম একটি কারণ। তবে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেছেন, সাদ কান্দালভির মতবাদকে তারা ইসলামের পরিপন্থী মনে করেন, সেকারণে তারা এর প্রতিবাদ করেছিলেন। সাদ কান্দালভির বিরোধী অংশের নেতা মাহফুজ হান্নান বলেন,কান্দালভির পক্ষের অংশ ভুল বুঝতে পারলে, তখনই কেবল ঐক্য হতে পারে।এটা হেফাজত বলে কিছু নয়। সব আলেম সমাজই সাদ কান্দালভির মতবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। এখন বিভিক্তি তৈরি হয়েছে শরিয়ত বা কোরান হাদীস নিয়ে। যদি উনারা কোরান হাদীস বা শরিয়তের পক্ষে চলে আসে, তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।তবে ভারতের দেওবন্দে গিয়ে যে সমঝোতা হয়ে যাবে, সেটা তাবলীগের দুই পক্ষের এই নেতারা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীও বলেছেন তারা একটা শেষ চেষ্টা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *