নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ জানুয়ারী৷৷ চাকলা রোশনাবাদকে বাদ দিয়ে ত্রিপুরায় বাঙালী জনসংখ্যার হিসেব করা উচিত হবে না৷ কারণ, রাজ আমলে চাকলা রোশনাবাদ ত্রিপুরার অংশ ছিল৷ শুধু তাই নয়, ত্রিপুরা ভারতভুক্তির চুক্তিতে কোথাও চাকলা রোশনাবাদ ত্রিপুরার অংশ নয় তা উল্লেখ নেই৷ ফলে, ত্রিপুরায় বাঙালীরা বরাবরই সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ অথচ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে এনআরসির আবেদন জানানো হয়েছে৷ ওই আবেদনে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে৷ এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা আবেদন জমা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় সাতকথা সমাজ৷ আগামী ১৫ জানুয়ারী সুপ্রিম কোর্টে ওই আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য্য হয়েছে৷ শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে রাষ্ট্রীয় সাতকথা সমাজের সভাপতি চন্দন দে একথা জানিয়েছেন৷ তাঁর দাবি, মহারাজা কখনওই ত্রিপুরাকে ভাগ করে ভারতভুক্তি হউক তা চাননি৷ জাতি-উপজাতিদের একত্রিত রাখতে চেয়েছেন মহারাজা৷ অথচ রাজনৈতিক স্বার্থে গভীর ষড়যন্ত্রে চাকলা রোশনাবাদকে ত্রিপুরা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷

এনআরসি ইস্যুতে রাজ্যে জাতি-উপজাতির ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ আগেই উঠেছে৷ পাতালকণ্যা জমাতিয়া সহ মোট চারজন ত্রিপুরায় এনআরসি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছে৷ কংগ্রেসের রাষ্ট্রীয় সম্পাদক প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মনও ত্রিপুরায় এনআরসির দাবীতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন৷ মূলতঃ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের কারণে ত্রিপুরায় ভূমিপুত্ররা সংখ্যালঘু হয়ে গেছেন, এই অভিযোগের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে এনআরসির আবেদন জানানো হয়েছে৷ ওই আবেদনের তীব্র বিরোধীতা করেছে রাষ্ট্রীয় সাতকথা সমাজ৷ তাদের সাফ কথা, ত্রিপুরায় বাঙালীরা বরাবরই সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের ফলে ত্রিপুরায় বাঙালীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে সাতকথা সমাজ দাবি করেছে৷ তাই পাতালকণ্যা জমাতিয়াদের আবেদনের বিরুদ্ধে সাতকথা সমাজও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে৷
এদিন, এই বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে সাতকথা সমাজের সভাপতি চন্দন দে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের বিস্তারিত বিষয়গুলি তুলে ধরেছেন৷ তাঁর কথায় ১৫০ পাতার নথি আবেদনের পক্ষে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে৷ তাতে ত্রিপুরা স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পরের সময়কালে বিভিন্ন সরকারী নথি রয়েছে৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় রাজন্য আমলে বাংলা ভাষাই গুরুত্ব পেয়েছিল৷ সরকারী নথি থেকে শুরু করে মুদ্রা, শিক্ষা ব্যবস্থা সহ সমস্ত কিছুতেই বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে৷ রাজন্য আমলে সমতল ও পার্বত্য অঞ্চল মিলে ত্রিপুরায় রাজাদের রাজত্ব ছিল৷ কিন্তু, সমতল ত্রিপুরা থেকেই রাজ্য পরিচালনা খাজনা সংগ্রহ করতেন মহারাজা৷ চাকলা রোশনাবাদ থেকেই খাজনা পেতেন মহারাজা৷ চন্দন দে’র বক্তব্য মহারাজা রাজকার্য্য পরিচালনায় বাঙালীদের সহায়তা নিতেন৷ চন্দন দে’র বক্তব্য স্বাধীনতার আগে এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সমস্ত সরকারী নথিতে কোথাও চাকলা রোশনাবাদ ত্রিপুরার অংশ নয় এমনটা উল্লেখ নেই৷ শুধু তাই নয়, ত্রিপুরা ভারত ভুক্তির চুক্তিতেও চাকলা রোশনাবাদ ত্রিপুরার অংশ নয়, তার উল্লেখ নেই৷ এদিন তিনি রাজমালার বেশ কয়েকটি পাতার উল্লেখ করে দাবি করেন, চাকলা রোশনাবাদও ত্রিপুরারই অংশ৷
চন্দনবাবু এদিন ত্রিপুরার ভারতভুক্তির চুক্তির উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ত্রিপুরার কোনও অংশ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে আদালতের মাধ্যমে তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা যাবে৷ সেই মোতাবেক চন্দনবাবুর সাফকথা চাকলা রোশনাবাদকে ত্রিপুরার সাথে যুক্ত করতেই হবে৷ সুপ্রিম কোর্টে এই আবেদন জানানো হয়েছে৷ তাঁর কথায়, চাকলা রোশনাবাদ নিয়ে জটিলতার অবসান না হওয়া পর্যন্ত ত্রিপুরায় এনআরসি চালু করা উচিত হবে না৷ কারণ, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী কারা তা আগে চিহ্ণিত করতে হবে৷ চাকলা রোশনাবাদ নিয়ে জটিলতার অবসান হলে এবং এই অংশটি ত্রিপুরার সাথে যুক্ত হলে সেখান থেকে যারাই এরাজ্যে এসেছেন তারা বাংলাদেশী হিসেবে গণ্য হবেন না৷ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, এনআরসি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে আগত ত্রিপুরী ও চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজনদেরও আওতায় নিতে হবে৷