নিজস্ব প্রতিনিধি, চুরাইবাড়ি , ১২ ডিসেম্বর:– রাজ্যের প্রবেশদ্বার চুড়াইবাড়ি গেইটে বেধেছে দুর্নীতির বাসা। বাম আমল থেকে দুর্নীতির চরমসীমায় গিয়ে পৌঁছে ছিল বর্তমানেও রাজ্যের সরকার পরিবর্তন হলেও রাম আমলে আরো যেন জাঁকিয়ে বসেছে চরম জালিয়াতি।কখনো বিক্রয় কর দপ্তর আবার কখনো পরিবহণ দপ্তরের কর্মীরা সরাসরি গাড়ি পাচারে জড়িয়ে পড়ছেন। গতকাল এমনই একটি চরম জালিয়াতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন পরিবহণ দপ্তরের টি আর টি সির এক গ্রেইট ম্যান কুলবাহাদুর গুরুং। রাত দশটার পর থেকে উনি আসাম আগরতলা জাতীয় সড়কের মেইন গেইটে ডিউটিতে ছিলেন। তখন উনার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পাঁচটি টেইলার গাড়ি ত্রিপুরা থেকে আসাম এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। যা গাড়িগুলা পরিবহণ দপ্তরের কমপ্লেক্সে প্রবেশ না করে এবং বিনা ছাড়পত্রে কি করে বহি রাজ্যে চলে গেলো তাতেই উঠছে প্রশ্ন। পাঁচটি গাড়িতে ভাঙ্গাচুরা লোহার সামগ্রী বোঝায় ছিল। তাই ত্রিপুরা থেকে বেরিয়ে যাবার সময় পরিবহণ দপ্তরের আইন অনুযায়ী ন্যূনতম 10 হাজার টাকা করে ফাইন দিতে হয় যা পাঁচটি গাড়িতে অর্ধ লক্ষ টাকার ফাইন আসে। তাছাড়াও যদি লরি চালকের অতরাইস না থাকে তাহলে আরো 500 টাকা করে ফাইন করা হয়। অর্থাৎ সবমিলিয়ে 52 হাজার পাঁচশত টাকা ফাইন করা হতো ,সেই জায়গায় রাজ্যের কোষাগারকে শূন্য করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গেইটম্যান কুলবাহাদুর গুরুং নিজের একাউন্ট ভারি করে পাঁচটি গাড়িকে ছেড়ে দিলেন। তাও আবার সেখানে পরিবহণ দপ্তরের গেইটম্যান ছাড়াও পাহাড়ারত অবস্থায় রয়েছেন ত্রিপুরা স্টেট ১৩ ব্যাটেলিয়নের দুই জোয়ান। এদিকে পুলিশ কে হার মানিয়ে টি এস আর এর দাদাগিরিতে নাজেহাল লরি চালক থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ।পরিবহণ দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিএসআর জোয়ানরাও গেইটে ডিউটি রত অবস্থায় অবাধে লরি চালকদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারদর্শী। তাই টি এস আর ও পরিবহণ দপ্তরের গেইটম্যান দের দাদাগিরিতে রাত 11 টার পর থেকে অবাধে গাড়িগুলি মেইন সড়কের গেইট দিয়ে পারাপার হয়। যা পরিবহণ দপ্তরের নিয়মানুযায়ী কমপ্লেক্স এর ভিতর দিয়ে এন্ট্রি করে ছাড়পত্র নিয়ে বেরিয়ে যাবার কথা। কিন্তু সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গেইটম্যান ও টি এস আর এর দাপটে সরাসরি গাড়িগুলি এপার ওপার হয়ে যাচ্ছে। গতকালের সেই ঘটনা পরিবহণ দপ্তরের ইনচার্জ সুদীপ সাহা এবং ইন্সপেক্টর অজয় নাথ জানতে পেরে গাড়িগুলির পিছু ধাওয়া করে আসামের লোয়ারপোয়া এলাকা থেকে গাড়িগুলো কে আটক করে চুরাইবাড়িতে নিয়ে আসেন। তারপর গাড়িগুলি চেকিং করে বৈধভাবে 52 হাজার টাকা ফাইন কাটা হয়। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে প্রতি রাতে লক্ষ লক্ষ টাকার বানিজ্য হচ্ছে চুরাইবারি গেইটে। যা রাজ্যের পরিবহন দপ্তর এবং সরকারকে ঘুমে রেখে একাংশ সরকারি কর্মী এবং দালালচক্রের দাপুটে সরকারি রাজস্ব মার খেয়ে তাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট বাড়ি হচ্ছে। অবশ্য গতকালের এই ঘটনা নতুন নয় বিগত বাম আমল থেকেই সেই দুর্নীতির বাসা বেঁধেছিলো এবং বর্তমানে সরকার পরিবর্তনের পর রাম আমলেও চিরাচরিত দুর্নীতির প্রথা অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য দালালচক্রের কিছু লোক যারা আগে সিপিএমের কান্ডারি ছিলেন তারাই এখন গেরুয়া শিবিরের এক নম্বর সারির কর্মী। চুরাইবারি গেটের অর্ধেক মালিকানা যেন তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তাদের প্রলোভনে পা দিয়ে টি আর টি সি’র গেটম্যান এবং টিএসআর জওয়ানরা নিজেদের মতো করে গাড়িগুলি অর্থের বিনিময়ে অবাধে ছেড়ে দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কনটিনার গাড়ি গুলি রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে যেখানে চার হাজার টাকা ন্যূনতম ফাইন করা হয় সেখানে তারা দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে প্রতি রাতে গাড়ি গুলি জাতীয় সড়কের মেইন গেট দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। তাতে প্রতি রাতেপরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকদের ঘুমে রেখে গেটম্যান ও টিএসআর জওয়ানরা লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেদিকে রাজ্যের পরিবহন দপ্তর এবং জেলার পরিবহণ দপ্তরের কোন হেলদোল নেই। সেই বিষয়ে ইনচার্জ সুদীপ সাহাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি গেটম্যানের দুর্নীতির কথা অকপটে স্বীকার করে নেন। তিনি তাও বলেন দুর্নীতিবাজ গেটম্যান কুল বাহাদুরের বিরুদ্ধে জেলা পরিবহন দপ্তরে রিপোর্ট করেছেন। এখন দেখার বিষয় জেলার পরিবহন আধিকারিক এবং রাজ্যের পরিবহন দপ্তর ওই দুর্নীতিবাজ কেলেঙ্কারির মূল নায়ক কুল বাহাদুরের বিরুদ্ধে কি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।