BRAKING NEWS

একের পর এক ঐতিহাসিক রায় দিয়ে দাগ রেখে গেলেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র

নয়াদিল্লি, ২৮ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : তাঁর অবসর নিতে আর মাত্র চারদিন বাকি । গত এক মাস ধরে যুগান্তকরি রায় দিয়ে চলেছেন তিনি । যা ভারতবর্ষের বিচার ব্যবস্থায় মাইলস্টোন হয়ে থাকবে । তিনি আর কেউ নন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ।
এর আগে নিজের অধীনস্থ বিচারপতিদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি । সংঘাত ঘটেছে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও । তারপরেই তাঁর একের পর এক ঐতিহাসিক রায় অবাক করেছে আইনজীবী মহলকে ।
আগামী ২ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিতে চলেছেন দীপক মিশ্র । প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র যে সংখ্যক সাংবিধানিক বেঞ্চের নেতৃত্ব দিয়েছেন তা এককথায় নজিরবিহীন । রাজনৈতিক সমস্যা থেকে ধর্মীয় টানাপোড়েন বা ব্যক্তিগত সমস্যা অথবা দেশের আর্থ-সামাজিক দিকেও তাঁর দৃষ্টি ছিল সজাগ । তাঁরই নেতৃত্বে ৩৭৭ ধারার রায়ে সমকামিতার স্বীকৃতি এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে । তাঁর কর্মজীবনের অবসর নেওয়ার বাকি ৪ দিনকে তিনি কোনওভাবেই নষ্ট করতে চান না । এই ৪ দিনের মধ্যে তাঁর কাছে ১ টি মাত্র কর্মব্যস্ত দিন আছে ।
গত এক মাসে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ৮টি গুরুত্বপূর্ণ অমিমাংসিত মামলার রায় ঘোষণা করে । এই ৮টি মামলার মধ্যেই ছিল আধার থেকে অযোধ্যা ইস্যু । গত ৬ দিনের এই বিভিন্ন শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ১০ জন বিচারপতি । এই তালিকায় রয়েছেন বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ, এ কে সিক্রি, আর এফ নর‌্যিমান, এ এম খানউইলকর, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ, সঞ্জয় কিষাণ কউল, এ আবদুল নাজির এবং ইন্দু মালহোত্রা ।
আধার সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত রায়ে ব্যান্ক আকাউন্ট এবং মোবাইল ফোনে আধার নম্বর লাগবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি । এখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে বা মোবাইল নম্বরের সঙ্গে আধার নম্বর যোগ আর করা বাধ্যতামূলক নয় । যদিও কেন্দ্র সরকার এই দুই ক্ষেত্রেই আধার যোগের কথা ঘোষণা করেছিল ।
আধার ছাড়াও অযোধ্যা নিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদন নিয়েও সুপ্রিম কোর্টে একই সঙ্গে শুনানি হয় । সুপ্রিম কোর্ট পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে মসজিদ ছাড়াও নমাজ পড়া যাবে । এবার অযোধ্যা নিয়ে মূল মামলার শুনানি শুরু হবে সুপ্রিম কোর্টে । যাতে দাগ রেখে গেলেন বিচারপতি দীপক মিশ্র ।
এই দু’‌টি মামলা ছাড়াও রয়েছে ২০০৬ সালের এম নাগরাজ মামলা, অপরাধী রাজনৈতিক নেতাদের ভোটে দাঁড়ানোর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত মামলার রায় ইতিমধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন তিনি ।
সবরীমালা মন্দিরে মেয়েদের প্রবেশ নিয়ে মামলায় আজ শুক্রবার মেয়েদের প্রবেশাধিকার দিয়েছেন তিনি । গতকালই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারার বৈধতা নিয়ে হেভিওয়েট মামলায় পরকিয়াকে স্বীকৃতি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র । বাকি রয়েছে শুধু পণ প্রতারনা মামলা ৷ আর বিচারপতি মিশ্রর কর্মজীবনে দিন রয়েছে মাত্র এক দিন সোমবার ৷ আইনজ্ঞরা মনে করছেন ওইদিনই পণ প্রতারনা মামলার রায় দেবেন তিনি ৷
অথচ, গত ৫ জানুয়ারি, শুক্রবার, দীপক মিশ্ররই বেঞ্চের বিচারপতি জে চেলামেশ্বর নিজের বাড়িতেই সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন ৷ তাঁর সঙ্গেই সাংবাদিক বৈঠকে হাজির ছিলেন বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ, বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি মদন লকুর ৷ শীর্ষ আদালতের প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভ উগড়ে দেন চার বিচারপতি । যা রীতিমতো নজিরবিহীন ৷ তাদের অভিযোগ ছিল, সুপ্রিমকোর্টের প্রশাসন ঠিকঠাক চলছে না । গত কয়েক মাস ধরে অনেক কিছুই ঘটছে যা অবাঞ্ছিত । গণতন্ত্র আজ বিপন্ন । মূলত মামলা বন্টন নিয়ে চার বিচারপতি ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন । এ প্রসঙ্গে সরাসরি প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রকে ব্যর্থ বলেই অভিহিত করেন তারা । তবে প্রধান বিচারপতিকে ভর্ৎসনা করা উচিত কিনা সেই প্রসঙ্গ দেশের ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন ক্ষুব্ধ বিচারপতিরা ।
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের কাজে অসন্তুষ্ট চেলামেশ্বর ওইদিন বলেছিলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে ইমপিচ করা উচিত কিনা দেশের মানুষই তা ঠিক করবেন ৷ প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সাংবাদিক বৈঠকে চার বিচারপতির মন্তব্যের পরেই আইনমন্ত্রীর রবিশংকর প্রসাদের সঙ্গে বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই তখনকার মত বিষয়টি মিটে যায় । আর উত্তরসুরী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা রঞ্জন গগৈর নামই সুপারিশ করেন তিনি । ৩ অক্টোবর থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন রঞ্জন গগৈই ।
প্রসঙ্গত বলা যায়, গত ডিসেম্বর মাসে মেডিকেল দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি নিয়ে চেলামেশ্বরের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের ঝামেলা বাধে ৷ লখনউয়ের মেডিকেল কলেজের ছাত্র ভর্তি নিয়ে দুর্নীতির মামলায় সামনে আসে ঘুষ নিয়ে ছাত্র ভর্তি করিয়েছে কলেজটি ৷ এরপর কলেজটিকে ব্ল্যাক লিস্ট করা হয় ৷ এই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চায় ওই কলেজটি ৷ এই মামলায় বিচারবিভাগের বিরুদ্ধেও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে ৷ এই তথ্য সামনে আসতেই প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ওই মামলা অন্য বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন ৷ যার প্রতিবাদ করেছিলেন চেলামেশ্বর ৷ তবে সুপ্রিম কোর্টে কোনও মামলার শুনানি কার হাতে যাবে তার সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতির ৷ আর সেই অধিকার নিয়েই দাপটের সঙ্গে একের পর এক ঐতিহাসিক মামলার রায় দিয়ে গেলেন দেশের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ৷ স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায় ‘দাগ রেখে গেলেন’ ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *