BRAKING NEWS

কাশ্মীরে হোটেল-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সেনা মেজর লিতুল গগৈ, কোর্ট মার্শালের তোড়জোড়

নয়াদিল্লি, ২৭ আগস্ট (হি.স.) : গত বছর ২৩ মে কাশ্মীরে স্থানীয় জনৈক যুবককে জিপের সামনে বেঁধে তাকে মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পাথরবাজদের রুখে সংবাদ শিরোনাম দখল করেছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর নিতীন লিতুল গগৈ। আজ সোমবার অন্য এক ঘটনা, হোটেল-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছে কোর্ট। সে হিসেবে তাঁকে কোর্ট মার্শালের সম্মুখিন হতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জম্মু-কাশ্মীরে ২০১৭ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে সন্ত্ৰাসীদের দমন করতে মানব-ঢাল ব্যবহার করে বিতর্কিত সাহসী ভূমিকা গ্ৰহণ করে দেশের একাংশের সমালোচনার শিকার হলেও অধিকাংশ মানুষের প্ৰশংসার পাত্ৰ হয়েছিলেন উজান অসমের ডিব্রুগড়ের সন্তান লিতুল গগৈ। পাথর-হামলাবাজদের হাত থেকে তিনি তাঁর সহকর্মী এবং প্রশাসনের লোকজনকে রক্ষা করতে গিয়ে যে পথ নিয়েছিলেন তাকে কতিপয় ভালো নজরে দেখেননি। তবে বেশিরভাগই তাঁর এই ভূমিকাকে সাহসী, বীরত্বসূচক বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। মেজর লিতুল গগৈয়ের সেদিনের দৃঢ় পদক্ষেপের জন্য ভারতীয় সেনা কর্তৃপক্ষ তাঁকে পুরস্কৃতও করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে অন্য এক ঘটনায় তাঁর সব সম্মান, সাহসী, বীরত্বসূচক ভাবমূর্তিকে ম্লান করে দিয়েছে এবং এর জন্য আজ তাঁকে এ ঘটনার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
চলতি বছরের ২৩ মে। শ্রীনগরের ডাল লেকের কাছে হোটেল গ্র্যান্ড মমতায় ১৮ বছরের এক তরুণীর সঙ্গে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন লিতুল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয় সেনাবাহিনীর কোর্ট অব ইনকুয়ারিতে। এই কোর্ট আজ তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে অনুশাসন ভঙ্গের শাস্তি দিতে বলেছে। সেদিন বড়গামের বসিন্দা ওই তরুণীকে নিয়ে মেজর লিতুল হোটেলে গিয়ে তাঁদের চেক-ইন করতে বলেছিলেন। তা নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝগড়া হয় তাঁর। হোটেল কর্তৃপক্ষ ডেকে পাঠায় পুলিশকে। পুলিশ এসে তরুণী-সহ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ঘটনা সম্পর্কে এক মামলা নিয়ে কিছুক্ষণ পর অবশ্য তাঁদের ছে়ড়ে দেওয়া হয়।
কাশ্মীরের আইজিপি এই মামলার তদন্তভার দেন শ্রীনগর জোনের পুলিশ সুপার সাজ্জাদ শাহের কাছে। তবে লিতুল গগৈ যেহেতু সেনা মেজর তাই এই মামলা পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেনাবাহিনীর বড়গাম ইউনিটের কাছে। মামলা চলে সেনা কোর্টে। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেনাবাহিনীর আধিকারিক বা জওয়ানদের স্থানীয়দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করা বারণ। কোর্টের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, মেজর গগৈ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করেছেন। তাছাড়া তিনি ডিউটির সময় নিজের অপারেশেন এরিয়া থেকে দূরে ছিলেন বলেও কোর্টের তদন্তে পাওয়া যায়।
আজ লিতুল গগৈকে দোষী সাব্যস্ত করে এ সম্পর্কীয় যাবতীয় প্রামাণিক নথিপত্র সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে মেজর গগৈয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত আগেই বলেছিলেন, মেজর গগৈয়ের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তা হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। জানা গেছে, দোষী সাব্যস্ত লিতুলের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কোর্ট মার্শালের তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, মাত্র ১৮ বছর বয়সে আসাম রেজিমেন্টের তৃতীয় ব্যাটালিয়নের জওয়ান হিসেবে যোগদান করেছিলেন আপার অসমের ডিব্রুগড়ের কৃষকপুত্র নিতীন লিতুল গগৈ। পরবর্তীতে তিনি দেরাদুনে আর্মি ক্যাডেড কলেজে যোগদান করেন এবং ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত হন। বর্তমানে ৫৩ রাষ্ট্রীয় রাইফেল্সের মেজর হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরে নিয়োজিত রয়েছেন লিতুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *