নয়াদিল্লি, ১ আগস্ট (হি.স.): কূটনৈতিক পরিপক্কতার মাধ্যমে কোনও রকমের জমি না হারিয়ে ডোকলাম সমস্যার সমাধান করা গিয়েছে। বুধবার লোকসভায় এমনই জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
সম্প্রতি চিনের উহানে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, উহান বৈঠকের মূল্য্ লক্ষ্যই ছিল পারস্পরিক বোঝাপোড়া, বিশ্বাস, সুবিধাগুলি নিশ্চিত করা। আর সেই লক্ষ্য পূরণ করা গিয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে বলছি কোনও রকম জমি না হারিয়ে, লেশমাত্র কিছু পরিবর্তন না করে কূটনৈতিক পরিপক্কতার মধ্যে দিয়ে ডোকলাম সমস্যার সমাধান করা গিয়েছে। পাশাপাশি ভুটানের সঙ্গে চিনের সীমান্ত নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে সুষমা স্বরাজ বলেন, ভুটান ও চিনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে জটিলতা একান্তই তাদের বিষয়ে। উহানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চিনে রাষ্ট্রপতির বৈঠক সফল হয়েছে। বৈঠকটি কূটনৈতিক সম্পর্কের এক সুন্দর বাতাবরণ তৈরি করেছিল। দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়েছিল এই বৈঠক। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বৈঠকটি হাল্কা আবহের মধ্যে হয়েছে। যাতে করে দুই রাষ্ট্রপ্রধানই খুব সহজে দ্বিধাহীন ভাবে বিষয়গুলি তুলে ধরতে পারে। এতে যে সুফল পাওয়া গিয়েছে তা হল প্রটোকলের উর্দ্ধে উঠে দুই রাষ্ট্রপ্রধানই নিজেদের বক্তব্যগুলি সুন্দর ভাবে পেশ করতে পেরেছিল।
চিনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বেশি সুদৃঢ় করার জন্য সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতে আসবে। বছরের শেষদিকে চিনের বিদেশমন্ত্রীও ভারতে আসবেন জানিয়েছেন সুষমা স্বরাজ। এদিন সংসদে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুগত বসু প্রশ্ন তোলেন, বিদেশমন্ত্রী যেহেতু উহান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। তাই ওখানে কি হয়েছে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উচিত সংসদকে জানানো। এরপরই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন তিনি এর উত্তর দিতে তৈরি। আমি না থাকলেও সেখানে কি হয়েছে তা জানি। তাই এই বিষয়ে আমি সংসদকে বলতে পারব।
এদিন লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসেন। উহান বৈঠকে কি হয়েছে তা নিয়ে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন তৃণমূল নেতা সুগত বসু, কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে, কে সি বেণুগোপাল, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। ডোকলাম থেকে কাছেই শিলিগুড়ি করিডর। তার প্রেক্ষিতে প্রশ্নটি করেন তৃণমূল সাংসদ। তখন বিদেশমন্ত্রী বলেন এই সম্মেলনের যাবতী প্রস্তুতি তিনি এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী করেছিলেন। বিদেশমন্ত্রী পুরো বিবৃতির পর তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু বলেন, কূটনৈতিক উপায়ে ডোকলাম সমস্যার সমাধান হওয়ায় আমি খুবই খুশি। প্রসঙ্গত, ২৭ এপ্রিলে উহানে এই বৈঠকটি হয়। বিদেশমন্ত্রী আরও বলেন, সম্প্রতি ব্রিক্সস সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ফের প্রধানমন্ত্রী ও চিনের রাষ্ট্রপতি মুখোমুখি হয়ে বৈঠক করেন। ২০১৯ সালে ভারত সফরে আসবেন চিনের প্রেসিডেন্ট।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৬ জুন থেকে ২৮ আগস্টের মধ্যে ডোকলামে প্রায় ৫০দিন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনী। এতে এশিয়া মহাদেশ সহ গোটা বিশ্বে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এমন কি চিন্তিত হয়ে পড়ে আমেরিকাও। পরে দুই দেশই বিতর্কিত জায়গাটি থেকে নিজেদের সেনা সরিয়ে নেয়। জটিলতার সৃষ্টি হয় যখন ভারত জানতে পারে ডোকলামে রাস্তা তৈরি করছে চিন। যা কিনা শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছে। পরে আলোচনার মধ্যে দিয়ে এই জট কাটায় ভারত।
এদিকে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ আরও বেশি ভাল করার জন্য চিনা সেনাবাহিনীর ৯১তম প্রতিষ্ঠা দিবসে যোগ দিল ভারত। নাথুলা পাসে এই নিয়ে বৈঠকও হয়। চিনা সেনার আমতন্ত্রে ভারতীয় সেনাবাহিনী উদযাপনে যোগ দেয়।