করিমগঞ্জ (অসম), ১৬ মে (হি.স.) : রবিবার গভীর রাতে নিলামবাজার থানার ওসি লিটন নাথ প্রমুখের হাতে ধৃত দুই বাংলাদেশি গরুচোরকে নিয়ে এপার-ওপারে যাতায়াতের গোপন পথ উদ্ঘাটন করেছে করিমগঞ্জ পুলিশ। দুই বাংলাদেশি চোরকে নিয়ে জেলার মদনপুর সীমান্তেবর্তী জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ের এক জায়গায় ঝোপে তাদের চোরাই পথ হিসেবে ব্যবহৃত একটি ‘কালভার্ট’আবিষ্কার করেছেন পুলিশ সুপার গৌরব উপাধ্যায় ও তাঁর দলবল। অতি দুর্গম জায়গায় দুর্বৃত্তদের সুবিধাজনক ভয়ানক চোরাইপথ দেখে বিস্ময় ব্যক্ত করেছেন পুলিশ সুপার।
মঙ্গলবার, করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার গৌরব উপাধ্যায়, ডিএসপি জেপিরানি মহন্ত, নিলামবাজারের ওসি লিটন নাথ, বিএসএফ-এর আধিকারিক-সহ গত রবিবার রাতে মদনপুর বিওপি সংলগ্ন এলাকা থেকে গরু চুরি করতে আগত দুই বাংলাদেশি যুবক সামসুল ইসলাম এবং আতাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে তাদের গোপন রাস্তা উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। ধৃতরা পুলিশের দলবলকে সঙ্গে নিয়ে ওই ঘন জঙ্গলের এক জায়গায় ঝোপে গিয়ে তাদের চোরাইপথ হিসেবে ব্যবহৃত একটি কালভার্ট দেখায়। তা দেখে আঁতকে ওঠেন সকলে। চোরাইপথটি সীমান্তরক্ষী কর্তৃপক্ষ সিল করেছেন। তবে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ নিয়োজিত থাকার পরও এভাবে একটি চোরাইপথ ব্যবহার করে কী করে বাংলাদেশিরা এপার-ওপারে যাতায়াত করে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন।
দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তরক্ষীর চোখে ধুলো দিয়ে জঙ্গলে ঘেরা চোরাইপথ কালভার্ট দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশিরা এপারের সীমান্ত এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। অভিযোগ, ভারতীয় একটি দুষ্টচক্রের মদতে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা গত ছয় মাসে অংখ্য গরিব গৃহস্থের সহস্রাধিক গরু চুরি করে নিঃস্ব করেছে। সীমান্ত এলাকায় চুরিকাণ্ডের বহু অভিযোগ জমা পড়লেও অসহায় হয়ে পড়েছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত নিলামবাজার থানার ওসি লিটন নাথ বিশেষ সোর্স ব্যবহার করে রবিবার সন্ধ্যা থেকে মদনপুরের পাহাড়ি এলাকায় এএসআই আব্দুল হাসিব, সজল দাস,দেবাশিস চন্দ, জাবির হুসেন-সহ আধা-সেনাবাহিনী নিয়ে ওত পেতে বসেন। অবশেষে রাত প্রায় বারোটা নাগাদ সাত থেকে আটজনের এক দুর্বৃত্ত দলের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে দুজনকে আটক করতে সক্ষম হন তাঁরা। এরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এক দুর্বৃত্তকে ধারালো অস্ত্র সমেত ঝাপটে ধরে পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে নীচে এক জলাশয়ে পড়ে ওসি লিটন নাথ একা এক দুর্বৃত্তকে বগলদাবা করে ফেলেন। অন্যদিকে পাহাড়ের অন্য প্রান্ত থেকে কৌশলে আরও একজনকে এএসআই হাসিবের নেতৃত্বে অন্য এক দুর্বৃত্ত আটক হয়।
এদিকে পুলিশ ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সীমান্ত এলাকার গরুচোর ও চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালদের চিহ্নিত করেছে বলে জানা গেছে। শীঘ্রই ধড়পাকড়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, গ্রেফতার দুই গরুচোরকে বাংলাদেশের বরলেখা থানা এলাকার বুবারতল-ইসলামপুরের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিনের ছেলে সামসুল ইসলাম (১৯) এবং সঈদ আলির ছেলে আতাবুর রহমান (১৮) বলে পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে দুটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশি জেরায় তারা মদনপুর সংলগ্ন বাংলাদেশের পাল্লারতল ফ্যান্সিঙের নীচে একটি বড় হিউম পাইপের ভিতর দিয়ে এপারে আসা-যাওয়া করে বলে জনায়। এবারই প্রথম নয়, এ নিয়ে তারা চতুর্থবার ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। সোমবার তাদের করিমগঞ্জের আদালতে তোলা হলে বিচারকের নির্দেশে তিনদিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে এসে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের যাতায়াতের গোপন পথ দেখিয়েছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, দীর্ঘদিন ধরে নিলামবাজার থানা এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী প্রমোদনগর, ব্রাম্মণশাসন, কাবলছড়া, খাসিয়া পুঞ্জি, নংরসিংটিলা, দাসগ্রাম, হিজিম,নান্দিবাড়ি প্রভৃতি বিস্তীর্ণ এলাকায় নিময়মাফিক চুরি-ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত হচ্ছিল। সংশ্লিষ্ট এলাকায় গত ছয়মাসে হাজারের বেশি গরু চুরি হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভারতীয় চোরাকারবারিদের সহযোগে কতিপয় বাংলাদেশি দুর্বৃত্ত সীমান্ত এলাকায় রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টি করেছে। এ সব ব্যাপারে সীমান্তে নিয়োজিত বিএসএফ-এর কাজকর্মের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠছিল।
নিলামবাজার থানার ওসি লিটন নাথ দিন-পনেরো আগে এক চুরিকাণ্ডের কিনারা করতে বিশেষ সোর্স ব্যবহার করে অভিযান চালিয়ে সীমান্ত এলাকা থেকে আট থেকে দশ দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করে হাজতে পাঠিয়েছেন। এর পর গত রবিবার এই দুই বাংলাদেশি চোরকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফৌঝদারি দণ্ডবিধির ১২০(বি)/১২০(এ)/১২১(এ)/১২৩/ ৩৭৯ এবং আরডব্লিউ ধারা ১৪(এ) বিদেশি সংক্রান্ত আইন এবং ৩/১২ ভারতীয় পার্সপোর্ট আইন অনুযায়ী ৬৮/১৮ নম্বরে মামলা রুজু করেছে নিলামবাজার পুলিশ।