BRAKING NEWS

কৈলাসহরে তিন সহকর্মীকে গুলি চালিয়ে হত্যার পর আত্মঘাতী বিএসএফ জওয়ান

নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ৬ মে ৷৷ রাতের অন্ধকারে এক বিএসএফ জওয়ানের উন্মত্ত তান্ডব কৈলসাহর বি এস ক্যাম্পে৷ শনিবার মধ্যরাতে নিজের ইনসাস রাইফেল থেকে পরপর তিন সহকর্মীকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালানোর পর নিজেও গুলিতে আত্মঘাতী হল সে৷ গোটা ঘটনায় অভিযুক্ত জওয়ান সহ মৃত্যু হল চারজনের৷ চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে কৈলাসহর মহকুমার ইরানী থানার অধীন মাগুরউলি সীমান্ত এলাকায়৷ নিহত জওয়ানরা সকলেই বিএসএফের ৫৫ ব্যাটেলিয়ানের মর্মান্তিক ও বীভৎস এই ঘটনার খবর পেয়ে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছেন পুলিশ ও বিএসএফের পদস্থ আধিকারিকগণ৷
রাজ্যের বুকে আর একটি নৃশংস বর্বরোচিত ঘটনা এবার কোন সন্ত্রাসবাদী হামলায় নয়, দেশ রক্ষা করতে গিয়ে নিজেই সহকর্মীর ছোঁড়া গুলিতে শহীদ হলেন ভারতীয় সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরায় দায়িত্বে থাকা ৩ বিএসএফ জওয়ান৷ সেই সাথে নিজেও রাইফেলের গুলিতে আত্মঘাতী হল অভিযুক্ত জওয়ান শিশু পাল৷ কৈলাসহর মহকুমার ইরানী থানার অধীন মাগুরউলি সীমান্ত এলাকার চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় আলোড়ন বয়ে যায় বিএসএফের অন্দরে৷ কি এমন পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত জওয়ান সহকর্মীদের গুলি ছুঁড়ে নৃশংসভাবে খুন করতে পারলো সেনিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ণ৷ অভিশপ্ত রাতের ঘটনার সুত্রপাত রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ৷ বিএসএফের ৫৫ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের মাগুরউলি বিওপিতে আচমকা গুলির আওয়াজ শোনা যায়৷ ততক্ষণে টেবিলে রক্তাক্ত অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকেন ক্যাম্পের হেড কনস্টেবল বিজয় কুমার৷ শিশু পাল নামে এক কনস্টেবল তার সার্ভিস ইনসাস রাইফেল দিয়ে গুলি চালায় বিজয় কুমারের মাথায়৷ এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু কোলে ঢলে পড়েন হেড কনস্টেবল৷ এরপরই রণমূর্তি ধারণ করে শিশু পাল ক্যাম্পের গেইটের সেন্ট্রিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়৷ কিন্তু সেন্ট্রি সতর্ক থাকায় লাফ দিয়ে গুলির হাত থেকে বেঁচে যায়৷ পরবর্তীতে অভিযুক্ত শিশু পাল বন্দুকের নলের মুখে ক্যাম্পের অপর এক জওয়ান রিঙ্কু কুমারকে মোটর বাইকে তুলে চারশো মিটার দূরত্বে থাকা আন্তর্জাতিক সীমান্তের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়৷ সেখানে গিয়েই টিউটিরত জওয়ান রাকেশ কুমার যাদব ও রিঙ্কু কুমারকে গুলি চালায় উন্মত্ত জওয়ান৷ পাশাপাশি শিশু নিজেও রাইফেলের নল মাথায় ঠেকিয়ে আত্মঘাতী হয়৷ পরপর কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ পেয়ে বাহিনীর অন্যান্য জওয়ানরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর অবস্থায় আহত রিঙ্কু কুমার ও রাকেশ কুমার যাদবকে উদ্ধার করে কৈলাসহর ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রিঙ্কু কুমারকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ সেই সাথে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাত ৩টা নাগাদ রাকেশ কুমারকে জিবি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়৷ যদিও রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মৃত্যু হয় তার৷
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় সর্বমোট চারজন জওয়ানের মৃত্যু হয়৷ এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন ঊনকোটি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব দেব, ইরানী থানার ওসি স্বপন দেববর্মা এবং বিএসএফের পদস্থ আধিকারিক এ কে যাদব৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাটি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে অবহিত করেন৷ রাতের অন্ধকারে সংঘটিত বীভৎস ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান তিনি৷ সেই সাথে পুলিশ এই ঘটনাটি নিয়ে মামলা নিয়ে তদন্ত করবে বলেও আশ্বাস দেন৷ তবে ঘটনাটি নিয়ে কোন প্রকাস মুখ খুলতে চায়নি বিএসএফ কর্তৃপক্ষ৷ জেলা হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত করা হয় নিহত জওয়ান বিজয় কুমার, রিঙ্কু কুমার ও অভিযুক্ত শিশু পালের৷ যদিও কি কারনে অভিযুক্ত জওয়ান এত বড় ঘটনা সংগঠিত করেছে সেটা নিয়ে রহস্য রয়েছে ৷ গোটা ঘটনায় সহকর্মী জওয়ানদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷ শিশু পালের প্রথম শিকার হওয়া হেড কনস্টেবল বিজয় কুমারের মৃত্যুর ধরণ নিয়ে তদন্তকারীদের ধারণা ঘটনার আগে কোন না কোন কারনে তার সাথে ঝাগড়া হয়েছে অভিযুক্ত জওয়ানের৷ কারণ টেবিলেই রক্তাক্ত অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে নিহত বিজয় কুমারকে৷ তবে তদন্তের পরই ঘটনার প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসতে পারে৷
কেন্দ্রীয় বাহিনীতে এধরনের ঘটনা অবশ্য নতুনয় নয়৷ বিশেষ করে ছুটি চেয়ে ছুটি না পাওয়া, ঊধর্বতন কর্তৃপক্ষের মানসিক নির্যাতন সহ নানা কারনে জওয়ানদের মধ্যে এসকল অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে৷ কৈলাসহরের মাগুরউলি সীমান্তের ঘটনাও এর থেকে ব্যতিক্রম কিছু নয় বলে মনে করা হচ্ছে৷ পুরো ঘটনাটি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন বাহিনীর রাজ্যস্থিত পদস্থ আধিকারিকগণ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *