BRAKING NEWS

প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, শোকস্তব্ধ মোদী ও সোনিয়া

নয়াদিল্লি ও কলকাতা, ২০ নভেম্বর (হি.স.): প্রয়াত হলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি| দীর্ঘ ৯ বছর কোমায় থাকার পর সোমবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি| মৃত্যুকালে প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর| ২০০৮ সালে স্ট্রোক হওয়ার পর তিনি কোমায় চলে যান| সেই থেকে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি| সোমবার নয়াদিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ‘বিগত এক মাস ধরে শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক ছিল প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির| শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে সোমবার দুপুর ১২.১০ মিনিট নাগাদ তাঁর জীবনাবসান হয়েছে| মৃত্যুর সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ছাড়াও প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির পাশে ছিলেন তাঁর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সি এবং ছেলে মিছিল|’
২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে নবমীর রাতে কালিয়াগঞ্জে নিজের আদি বাড়িতে হঠাত্ই মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তত্কালীন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি| প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের উদ্যোগে দ্রুত তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের কালিয়াগঞ্জ থেকে নয়াদিল্লির এইমস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়| মস্তিষ্কে অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণের ফলে তাঁর বাহ্যিক চেতনা লোপ পায়| পরে তাঁকে এইমস থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে| সোমবার দুপুর ১২.১০ মিনিট নাগাদ রাজধানীর ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি| যে সময় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন তিনি সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)-এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন|
১৯৯৯ ও ২০০৪ সালে পরপর দু’বার রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে জিতে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি সাংসদ ও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন| প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৪৫ সালের ১৩ নভেম্বর| নভেম্বরে আগমণ, নভেম্বরেই বিদায় নিলেন তিনি| টানা ৯ বছর তাঁর জন্য প্রার্থনা জানিয়েছেন অনুগামীরা| কিন্তু সাড়া দেননি প্রিয়রঞ্জন| চিকিত্সায় সাড়া না দিয়ে সোমবার দুপুর ১২.১০ মিনিট নাগাদ প্রয়াত হলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি| প্রয়াত প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মরদেহে এদিন সর্বপ্রথম শ্রদ্ধা জানান তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়| প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মরদেহে মাল্যদানের পর শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়|
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণে শোকস্তব্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী| গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও| শোকাবার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, ‘প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সহ অন্যতম জনপ্রিয় নেতা ছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি| ভারতীয় ফুটবলে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণ অত্যন্ত দুঃখজনক| দীপা দাশমুন্সিজী এবং পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা|’ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির জীবনাবসানে শোকপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও| শোকবার্তায় কংগ্রেস সভানেত্রী জানিয়েছেন, ‘ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে|’
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও| শোকবার্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণে গভীরভাবে শোকস্তব্ধ| তাঁর পরিবার, শুভাকাঙ্খী এবং দলীয় কর্মীদের সমবেদনা| ১৯৭২ সাল থেকে বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় নেতা ছিলেন তিনি|’ শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নন, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন তাঁর এক সময়ের সহযোদ্ধা সুব্রত মুখোপাধ্যায়| শোকবার্তায় সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘আমার রাজনৈতিক জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন ওঁরই গড়ে দেওয়া| আমাদের বংশে রাজনীতি নেই| এই যে আমি রাজনীতিতে এসেছি, সেটা প্রিয়দার সংস্পর্শে এসেই| বড় মাপের রাজনীতিবিদকে হারাল দেশ|’ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র| শোকবার্তায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘রাজনীতির উজ্বল নক্ষত্রের পতন হল|’
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ভারতীয় ফুটবল জগত্| সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)-এর সহ-সভাপতি সুব্রত দত্ত জানিয়েছেন, ‘ভারতীয় ফুটবলে তাঁর অবদান কখনই ভুলে যাওয়ার নয়| তাঁর অধীনে, ১৯৯৬ সালে জাতীয় ফুটবল লীগ শুরু হয়েছিল| সমস্ত কিছু এখনও একইভাবে চলছে|’ প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে জিয়াউদ্দিনের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *