BRAKING NEWS

রাষ্ট্রপতি শাসন প্রয়োগ না হলে বামফ্রন্টের ক্ষমতায় আসা মুশকিল ছিল ঃ পূর্তমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ নভেম্বর৷৷ রাজ্যে ক্ষমতা বদলের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের ভূমিকাই কি মুখ্য? এবিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরীর অকপট স্বীকারোক্তিতে মনে হয়েছে, এরাজ্যে সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকায় রয়েছে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ৷ তাঁর কথায়, রাষ্ট্রপতি শাসন প্রয়োগ না হলে বামফ্রন্টের ক্ষমতায় আসা মুশকিল ছিল৷ তাঁর যুক্তি, তৎকালিন সময়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমীর রঞ্জন বর্মণ যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, তাতে সহজভাবে নির্বাচনে জেতা বামফ্রন্টের জন্য কঠিন ছিল৷ তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের পরিস্থিতি রাজ্যে এখনো সৃষ্টি হয়নি৷ তাই তিনি চাইছেন, নির্বাচন যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক৷
শুক্রবার মহাকরণে সাংবাদিকদের প্রশ্ণের উত্তরে তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজ্যে নির্বাচনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের আশঙ্কা প্রকাশ করা খুবই স্বাভাবিক৷ তিনি বলেন, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ ফলে তারা উপজাতি আঞ্চলিক দলগুলির সাথে জোট বেঁধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলেই মনে হচ্ছে৷ বর্তমান সময়ে বিজেপির অনেকটা শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে৷ কিন্তু, রাজ্যের মানুষের চিন্তা এবং সংসৃকতির ধারে কাছে নেই বিজেপি৷ তাঁর অভিযোগ, ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে প্রতিটি জেলায় মোটা অংকের সান্মানিক দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ জন কট্টর কর্মীদের পুষে চলেছে বিজেপি৷ তাঁর কটাক্ষ, রাজ্যের জনবর্জিত নেতারাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন৷ তাঁদের এই রাজ্যের মানুষ ভালোভাবেই চিনতে পেরেছেন৷
পূর্ত মন্ত্রীর মতে, বিজেপি রাজ্য প্রভারী সুনিল দেওধর এবং প্রদেশ সভাপতি বিপ্লব দেবের রাজ্যের মানুষের ভাবাবেগ বোঝার ক্ষমতা এখনো হয়নি৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, তাঁরা বিজেপির নামে ব্যবসা করছেন৷ নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, তা আরো পরিস্কার হয়ে যাবে৷ পূর্তমন্ত্রী চাইছেন, নির্বাচন যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে হওয়া উচিত৷
এদিকে, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাসে গুজরাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ সেই রাজ্যে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারলে, রাজ্যের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হওয়ার কারণ তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন৷ তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের কারণ দেখিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই৷ এজন্যই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷
কথা প্রসঙ্গে পূর্ত মন্ত্রী বলেন, নির্বাচন যদি না পিছুতো এবং রাষ্ট্রপতি শাসন প্রয়োগ না করা হত, তাহলে ১৯৯৩ সালে বামফ্রন্টের ক্ষমতায় আসা মুসকিল ছিল৷ তাঁর যুক্তি, তৎকালিন সময়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পরিস্থিতি যা তৈরি করেছিলেন, তাতে বামফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচনে জেতা কোনভাবেই সম্ভব ছিলনা৷ রাষ্ট্রপতি শাসন প্রয়োগ করা হয়েছে বলেই বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসতে পেরেছে৷
এখন নির্বাচনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের যে আওয়াজ উঠেছে সে বিষয়ে পূর্তমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে গোলমাল করে এখন উপদ্রুত অঞ্চল ঘোষণার চেষ্টা চলছে৷ কেন্দ্র চাইলে রাজ্যকে উপদ্রুত অঞ্চল ঘোষণা দিতে পারে৷ আবার রাজ্য চাইলেও উপদ্রুত অঞ্চল ঘোষণা দেওয়া যেতে পারে৷ কিন্তু, রাজ্যে এখনো উপদ্রুত অঞ্চল ঘোষণা দেওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে তিনি দাবি করেন৷ তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্রের হাতে এখন ক্ষমতা রয়েছে৷ যেমনটা খুশি তেমনটা করতেই পারে৷ কিন্তু, ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যে সরকার পরিবর্তনে এই ক্ষমতা ব্যবহার করলে সারাদেশে ভুল বার্তা যাওয়া স্বাভাবিক বলে তিনি মনে করেন৷ পাশাপাশি তিনি বিশ্বাস করেন, রাজ্যের মানুষও সুষ্ঠু নির্বাচন চাইছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *