মহাজোটের প্রয়াস যেন তেমন জোর পাইতেছে না৷ পূর্ণাঙ্গ মহাজোট করিয়াও কেন্দ্র হইতে বিজেপিকে হঠানো যইবে এমন কথা জোর দিয়া বলিবার সুযোগ নাই৷ কারণ মহাজোট গড়িবার উদ্যোগের ক্ষেত্রেও পিছাইয়া থাকিবার ঘটনা চোখে পড়িবার মতো৷ সম্মিলিত মহাজোট গড়িয়া না উঠিলে দেশের মানুষের ভরসা ও আস্থার জায়গা তৈরী হইবে কি ভাবে? আর মহাজোট যদি ভরসা ও বিশ্বাসের ডালা উপহার দিতে না পারে তাহা হইলে মানুষ বিজেপি বিরোধী মঞ্চে ঝাঁপাইয়া পড়িবে না৷ রবিবার বিহারের পাটনায় আয়োজিত সমাবেশকে মিনি মহাজোটের সমাবেশ বলা যাইতে পারে৷ এই সমাবেশে সিপিএম, বিএসপি অংশ না নিলেও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেসের গোলাম নবী আজাদ, জনতা দল (ইউ) এর শরদ যাদব, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব৷ বিহারে এই মহাজোটের উদ্যোগ সমাবেশ এমন সময়ই আরজেডির সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব নিয়াছেন যখন জনতা দল ইউ ত্যাগ করিয়া বিজেপিকে নিয়া বিহারে সরকার গড়িয়াছেন নীতীশ কুমার৷ যিনি জনতা দল ইউ’র ও আরজেডি জোট গত নির্বাচনে জনতার ভোট নিয়াছিলেন৷ কিন্তু লালু মন্ত্রীপুত্রের দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় নীতীশ পদত্যাগ করিতে বলিয়াছিলেন৷ এই অজুহাত তুলিয়া তিনি বিজেপির সঙ্গে হাত মিলাইয়া মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে থাকিয়া যান৷ এই ঘটনায় জনতা দল ইউ’র সভাপতি শরদ যাদব বেজায় চটিয়াছেন৷ বিহারে লালুর উদ্যোগে মহাজোটের সমাবেশে কাহারা হাজির থাকিবেন তাহা নিয়া জল্পনা তুঙ্গে ছিল৷ এই সমাবেশে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াইয়া বক্তব্য রাখেন৷ তাঁহার গুরুতর অভিযোগ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে অশান্তি লাগিয়াই আছে৷ আইন শৃঙ্খলা ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে৷
সিবিআই আদালত গুরু রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করার পর শুক্রবার হরিয়ানায় যেভাবে হিংসার আগুন জ্বলিয়াছে, গণহারে মৃত্যুর ঘটনা রাজ্য সরকারের চরম ব্যর্থতাই প্রমাণিত হইয়াছে৷ হরিয়ানা, পাঞ্জাবের হাইকোর্ট হরিয়ানা সরকারের চরম ব্যর্থতার জন্য ভৎর্সনা করিয়াছে৷ হাইকোর্টের নিরপেক্ষ ফোরাম চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিতেছে দেশ কোন্ পথে চলিতেছে৷ শুধু হরিয়ানা নহে উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়া গুরুতর প্রশ্ণ উঠিয়াছে৷ এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অবিজেপি দলগুলিকে এক মঞ্চে আসিবার তাগিদ বাড়াইবেই৷ আজ অবিজেপি দলগুলি বুঝিতে পারিতেছে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলিয়া যদি ঐক্যবদ্ধ হওয়া না যায় তাহা হইলে সারা দেশই বিজেপির করতলগত হইবে৷ বিরোধী দলগুলি নিশ্চিহ্ণ হইয়া যাইতে পারে৷ অত্যাচার ও নিপীড়ন বঞ্চনা যত বেশী হইবে ততই ক্ষোভের আগুন বাড়িতে থাকিবে৷ ঐক্যবদ্ধ হইবার তাগিদ বাড়াইবে৷ তাগিদ কতখানি বাড়িয়াছে তাহা পাটনায় লালুর মঞ্চই বলিয়া দিয়াছে৷ সেই মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে হুশিয়ারী দিয়াছেন৷ তিনি ২০১৯ এ লোকসভার নির্বাচন নিয়া আওয়াজ তুলিয়াছেন৷ ঐক্যের ডাক দিয়াছেন৷ প্রশ্ণ উঠিয়াছে, পাটনায় লালুর মঞ্চ হইতে বিরোধী ঐক্য জোরদার হইবার পথ কি প্রশস্ত হইয়াছে? মহাজোট তখনই সার্থক রূপ পাইতে পারে যদি সব অবিজেপি দল শক্তিশালী মঞ্চ গড়িতে পারেন৷ কাজ খুব কঠিন৷ এই কঠিন কাজেই হাত দিয়াছেন লালু মমতারা৷ এই উদ্যোগের সাফল্য তখনই সম্ভব হইবে যদি জোটের নেতারা বিশ্বাস, আস্থা ও ভরসার জায়গাটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাইতে পারেন৷