BRAKING NEWS

অসমের বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি, প্রভাবিত প্রায় ১১ লক্ষ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ ,উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী ফোনে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে, সবধরনের সহায়তার আশ্বাস

গুয়াহাটি, ১৩ আগস্ট, (হি.স) : অসমের বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নিহতের সংখ্যা ১৬-য় পৌঁছেছে। বিভিন্ন জায়গায় নদীবাঁধে ফাটল কিংবা ভাঙন ধরায় পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। বানভাসিরা গ্রাম ছেড়ে দিগবিদিগশূন্য ছুটোছুটি করছেন। সর্বত্র হাহাকার। কয়েকটি অঞ্চলে জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে জল বইছে। তাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যানবাহনের যাতায়াত। জনতা ভবনে চলছে গুরুত্বপূর্ণ সভা। বন্যাক্রান্ত জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জনতা ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন মন্ত্রী ও মুখ্যসচিব। রাজ্যের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রীও। তিনি সর্বতোপ্রকার সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। বন্যার্তদের ত্রাণ ও উদ্ধারে গতি ক্ষিপ্রতর করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানা গেছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রে। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী ও বিধায়করা বন্যাক্রান্ত অঞ্চলে গিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণকার্য তদারকি করছেন। বানবাসিদের উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত রয়েছে এসডিআরএফ ও এনডিআরএফ বাহিনী।
গত চারদিন ধরে বন্যার কবলে অসমের উজান থেকে নিম্ন। সরকারি তথ্য, ইতিমধ্যে ১৯টি জেলার ৬৬টি রাজস্ব সার্কলের ১,৭৫২টি গ্রাম প্লাবিত। স্থাপন করা হয়েছে ২৬৮টি ত্রাণশিবির। এগুলির মধ্যে ৬৬ হাজার বানভাসি আশ্রয় নিয়েছেন। তাছাড়া আরও প্রায় হাজার চল্লিশেক পীড়িত মানুষজন এদিক-ওদিক, বাঁধ ও জাতীয় সড়কে খোলা আকাশের নীচে প্লাস্টিকের তাবু টাঙিয়ে কোনও রকম দিন কাটাচ্ছেন। বন্যায় প্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়েছে ১,০০,৪৪২ হেক্টর কৃষিজমি। বহু গবাদি পশু মারা যাওয়ার পাশাপাশি জলের তোড়ে ভেসে গেছে বলে খবর।
প্ৰলয়ঙ্করী বন্যার ফলে নিহতের সংখ্যা ১৬ জনে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক কোকরাঝাড়ে ২৪ ঘণ্টায় ছয়জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তামারহাট ও গোসাঁইগাঁওয়ে দুইজন নিখোঁজ। মরিগাঁওয়ের পুশকাঠিতে জলে পড়ে নিখোঁজ হয়ে গেছেন জীতেন্দ্র বরদলৈ নামের এক ব্যক্তি। দক্ষিণ মাজুলির ধোদাং চাপরিতে একটি নৌকা-সহ গতকাল নিখোঁজ সাতজনকে আজ রবিবার উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা জ্যোতি দলে, পিনারাম পেগু, ভাইটি দলে, মুণ্ডা পেগু, করাম মিলি, আটাম পেগু এবং জিতু পেগু। স্থানীয়রা অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করেছেন। শনিবার বিকেলে মদারগুড়ি চাপরিতে গরু খুঁজতে গিয়েছিলেন তাঁরা। তাছাড়া বাঘবরের সত্রকনরা ১০ নম্বর সিটে চার বছরের আশ্রাফল ইসলাম নামের এক শিশুর সলিল সমাধি ঘটেছে। উল্লেখ্য, কোকরাঝাড়ের গোসাঁইগাঁওয়ে শনিবার বন্যার জলে ভেসে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন বয়োবৃদ্ধ এক দম্পতী। তাঁরা জুয়েল হেমব্ৰম এবং পত্নী কুমা বাসকো। তাছাড়া জেলার সালাকাঠি এলাকার ভুমকি গ্রামে বিদেশ রায়ের ছেলে ২৮ বছরের ছেলে প্রাণজিৎ রায়ের মৃত্যু হয়েছে তারং নদীর জলে পড়ে। বঙাইগাঁওয়ের ঝড়ঝড়ি নদীতে সলিল সমাধি হয়েছে যমজ দুই বোনের। তারা গঙ্গা দত্ত ও যমুনা দত্ত। গহপুরের বরজহাবাড়িতে ব্রহ্মপুত্রের জলে পড়ে জনৈক নবজিৎ কলিতারও গতকাল মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। শনিবার সকালে বঙাইগাঁওয়ের নগরঝাড়ে এক শিশু হানিফ আলি এবং কোকরাঝাড়ের ফকিরাগ্রাম থানার আধীন শালমারার ৩৮ বছর বয়সি সুরঞ্জন দত্তের সলিল সমাধি হয়।
গুয়াহাটিতে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে ব্রহ্মপুত্র। যে কোনও সময় নদী তীরবর্তী ফ্যান্সিবাজারে জল ঢুকে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে শনিবার রাত প্রায় দেড়টা নাগাদ কলিয়াবরের হাতিমুড়ায় কলঙের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় গোটা ব্ৰহ্মপুত্ৰ ঢুকে পড়েছে জখলাবন্ধা শহরে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নগাঁও শহরে লাল সতর্কতা জারি করেছে জেলা প্ৰশাসন। কলিয়াবরের ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বইছে ব্রহ্মপুত্র। তাই ওই সড়কে যাবতীয় যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে সড়কপথে উজানের সঙ্গে নিম্ন অসম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
তেজপুরেও নতুন নতুন অঞ্চলে জল ঢুকছে৷ কলিবাড়ির কলাগুরু বিষ্ণু রাভা সমাধিক্ষেত্ৰ সম্পূৰ্ণ জলমগ্ন৷ বাকসার গোরেশ্বরেও তাণ্ডব চালিয়েছে বন্যা। শুক্লাই, দেওচুঙা, পুঠিমারি নদীর জল বিস্তীর্ণ এলাকাকে তছনছ করে দিয়েছে।। দুধনৈয়ে মেঘালয়ের জল এসে হামলা চালিয়ে বাঁধ ভেঙে ফেলেছে। উপরতলা দোহাপাড়ায় প্ৰায় ৬০ ফুট উঁচু বাঁধ ভেঙে হু হু করে জল ঢুকছে৷ কাজিরঙার কঁহরা বনাঞ্চলের হলদিবাড়ি, হাতিখুলি ও মাজলাইনে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ছয়টি জায়গায় জল প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনসুকিয়া, ডিব্ৰুগড়, চিরাং, বাকসা, কোকরাঝাড়, চরাইদেও, যোরহাট, গোলাঘাট, শোণিতপুর, বিশ্বনাথ, ধেমাজি, লখিমপুর, বঙাইগাঁওয়ে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। জলমগ্ন হাজার হাজার কৃষিজমি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *