গুয়াহাটি, ০৪ জুলাই, (হি.স.) : ভারতীয় অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে চিন। পঙ্গু করে দিচ্ছে দেশের অর্থনীতি। চিনে তৈরি সুলভ মূল্যের সামগ্রীগুলি নেহাৎ ক্ষণস্থায়ী এবং সেগুলো স্বাস্থ্যের পক্ষেও হানিকর। তাই চিনে তৈরি সামগ্রীর নেতিবাচক দিকগুলি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করতে ধারা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ‘স্বদেশী জাগরণ অভিযান’ নামের সংগঠন। অসমের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গঠিত স্বদেশী জাগরণ অভিযান কমিটি আহূত এক সাংবাদিক সম্মেলনে আজ মঙ্গলবার দেশবাসীর কেন চিনা সামগ্রী বর্জন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে সে সংক্রান্ত নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।স্বদেশী জাগরণ অভিযান-এর প্রধান আহ্বায়ক প্রাঞ্জল শইকিয়া, আহ্বায়ক মণ্ডলির অন্যতম সদস্য সুমন্ত চলিহা এবং অধ্যাপক তরণীকান্ত হালৈ সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে জানান, আন্তর্জাতিক ব্যাবসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক আদান-প্রদান চলছে। এভাবে চিনের সঙ্গেও ভারতের ব্যাবসা-বাণিজ্য চলছে এবং পড়শি এই দেশের সঙ্গে সর্ববৃহৎ ব্যবসায়িক অংশীদার ভারত। প্রতি বছর চিন থেকে ভারত ৬১.৮০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যসামগ্রী আমদানি করলেও ওই দেশে বছরে মাত্র ৯ বিলিয়ন ডলারের কাঁচা সামগ্রী রফতানি করা হয়। ফলে ভারতকে বছরে ৫২.৮০ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি বহন করতে হচ্ছে।তাঁরা জানান, ভারতের উপভোক্তা বাজারের ৪৪ শতাংশ দখল করে বসেছে চিন। এত সবের পরও সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের কাছে চিন এক হুমকি-স্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিনা সামগ্রীর অবাধ আমদানির ফলে ভারতের বহু শিল্পোদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেছে। গোটা দেশ তো বটেই, এক অসমের সর্থেবাড়ির কাঁসা-পিতল শিল্প, শুয়ালকুচির পাট-মুগা শিল্প, বরপেটার আতসবাজি উদ্যোগ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানীয় এবং ঘরোয়া ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগে হামলা করেছে চিনা সামগ্রী। অসংখ্য শিল্প-কর্মী জীবিকা হারিয়েছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশ-সহ অসমের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি একেবারে ধরাশায়ী হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন স্বদেশী জাগরণ-এর বক্তারা।এরই পরিপ্রেক্ষিতে চিনে তৈরি সামগ্রী সম্পর্কে দেশ তথা রাজ্যের জনসাধারণকে সজাগ করতে এক গণ অভিযান চালানোর প্রয়াস তাঁরা হাতে নিয়েছেন বলে জানান প্রাঞ্জল-সুমন্তবাবুরা। এই সজাগতা অভিযানের দ্বারা চিন থেকে আমদানিকৃত পণ্যবাজার কিছুটা হলেও সংকুচিত হবে বলে তাঁদের বিশ্বাস। সজাগতা অভিযানের অংশস্বরূপ আগামী দিনে যে সব ধারা-কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন সে তথ্যও দিয়েছেন তাঁরা। সে অনুযায়ী চলতি মাসের (জুলাই) ১৫ তারিখ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে বিভিন্ন দিন রাজধানী গুয়াহাটি মহানগরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে। ওই সব কর্মসূচি পালন করবেন আইনজীবী, শিল্পী সমাজ, বোদ্ধা মহল প্রভৃতি নানা স্তরের ব্যক্তিত্ব। তাছাড়া, আগস্টের প্রথম দিকে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠেয় বিশাল নাগরিক সভার মাধ্যমে চিনা সামগ্রীর আগ্রাসন সংক্রান্ত বিষয়ে সজাগতা অভিযানের সূচনা হবে এবং তা সমগ্র রাজ্যে চলবে ২০ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত। তাঁরা জানান, এই অভিযানের সময় স্কুল-কলেজ, প্রকাশ্য স্থান, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, বাজার ইত্যাদি এলাকায় সভা, পথ-নাটিকা, তথ্য চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে চিনাা সামগ্রীর নানা অপকার ও ভয়াবহতা নিয়ে জনসাধারণকে অবগত করার চেষ্টা চালানো হবে। ইতিমধ্যে রাজ্যের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিনা সামগ্রী বর্জন করে দেশীয় এবং স্থানীয় শিল্পোদ্যোগ ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে চিনের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার আহ্বানও জানানো হচ্ছে বলে বক্তারা জানান। এই আহ্বানে দেশপ্রেমী ব্যবসায়ীরা সাড়া দিয়েছেন এবং আগামীতে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার আশ্বাস তাঁরা দিয়েছেন বলে জানান প্রাঞ্জল শইকিয়া, সুমন্ত চলিহা এবং অধ্যাপক তরণীকান্ত হালৈ জানান। আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অজিত শর্মা, রঞ্জীব শর্মা প্রমুখ।