নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ জুন৷৷ চিটফান্ড কান্ডে সিবিআই নোটিশের জেরে মন্ত্রী বিজিতা নাথের পদত্যাগ দাবি করেছে প্রদেশ কংগ্রেস৷ সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা গোপাল রায় বলেন, বামফ্রন্টের মদতেই রাজ্যে চিটফান্ড ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছিল৷ মন্ত্রী বিজিতা নাথ খোদ রোজভ্যালীর এজেন্ট ছিলেন৷ এখন সিবিআই রোজভ্যালী মামলায় তাঁকে নোটিশ পাঠিয়েছে৷ তাই, তাঁর এক্ষুনি পদত্যাগ করা উচিৎ৷ গোপালবাবুর দাবি, স্বচ্ছতা প্রমাণে মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিসভা থেকে বিজিতা নাথকে বরখাস্ত করুক৷ পাশাপাশি তাঁর আরও দাবি, রাজ্যে চিটফান্ড মামলায় সঠিক তদন্ত হোক৷ তা না হলে প্রদেশ কংগ্রেস আবারও আন্দোলনে নামবে৷ এদিকে, সিপিএম প্রদেশ কংগ্রেসের এই দাবি হাস্যকর বলে কটাক্ষ করেছে৷
এদিন গোপালবাবু বলেন, রাজ্যে এখন চিটফান্ড মামলায় সিবিআই আসছে, তা প্রদেশ কংগ্রেসের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল৷ তাঁর দাবি, চিটফান্ড কান্ডে ডেপুটেশন, ঘেরাও এবং বন্ধ ইত্যাদির ফলেই সিবিআই বাধ্য হয়েছে এরাজ্যে আসতে৷ তিনি বলেন, প্রথম এবং দ্বিতীয় বামফ্রন্ট আমলেই রাজ্যে চিটফান্ডের ব্যবসা শুরু হয়েছিল৷ মোট ১৪২টি চিটফান্ড সংস্থা রাজ্যে ব্যবসা করেছে৷ তাদের দ্বারা রাজ্যে ১৪ লক্ষ আমানতকারী প্রতারিত হয়েছেন৷ এর জন্য তিনি বামফ্রন্টকেই দায়ী করেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ২০০০ সালে চিটফান্ড বিরোধী আইন পাশ হয়েছিল বিধানসভায়৷ অথচ রুল হতে সময় লাগে ৭ বছর৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার চিটফান্ড সংস্থাগুলিকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে৷ কিন্তু, ২০১৩ সালে যখন সারদা চিটফান্ড সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ধরা পড়ে, তখন রাজ্য সরকারের টনক নড়ে৷ এরপর মহকুমা শাসকদের দিয়ে বিভিন্ন চিটফান্ড সংস্থায় অভিযান চালানো হয়৷ গোপালবাবুর অভিযোগ, এই অভিযানে রাজ্য থেকে ১৪২টি চিটফান্ড সংস্থাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে৷
তিনি আরও বলেন, আসাম সরকার সমস্ত চিটফান্ডের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়৷ তাই, ২০১৩ সালের ২ মে বিধানসভায় রাজ্যেও চিটফান্ডগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই দেওয়া হোক, দাবি জানানো হয়৷ বিরোধীদের প্রচন্ড চাপের মুখে ২০১৩ সালের ১২ মে রাজ্য সরকার ২৭টি মামলা সিবিআইকে পাঠায়৷ কিন্তু, তাতে রোজভ্যালীর নাম ছিল না৷ এনিয়ে আবারও চিৎকার শুরু হলে, রাজ্য সরকার রোজভ্যালী সহ আরও ১০টি মামলা সিবিআইকে পাঠায়৷ কিন্তু, মামলায় রোজভ্যালীর টাকার অঙ্ক কম দেখানো হয়৷ ফলে, সিবিআই রোজভ্যালী বিরুদ্ধে তদন্ত করতে রাজী হয়নি৷ ৩৭টি মামলার মধ্যে সিবিআই শুধু ৫টি মামলায় তদন্ত করবে বলে সম্মত হয়৷
গোপালবাবুর অভিযোগ, সিবিআই রাজ্য সরকারের পাঠানো রোজভ্যালীর মামলাটি তদন্তের জন্য রাজী না হলেও, যেহেতু মামলা হয়েছে, তারপরও ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঐ সংস্থা মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে কিভাবে৷ রোজভ্যালী বিনোদন পার্ক প্রচুর টাকা কর বকেয়া পড়ে রয়েছে৷ সেই কর আদায়েও রাজ্য সরকার উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে৷ তাই গোপালবাবুর বিশ্বাস, সিবিআই সঠিক ভাবে তদন্ত করলে আরো অনেক রাঘব বোয়াল বেড়িয়ে আসবে৷ পাশাপাশি তিনি দাবি জানান, আমানতকারীদের টাকা ফেরৎ পাওয়ার বিষয়টিও সিবিআইকে দেখতে হবে৷
এদিকে, রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যা বিজিতা নাথের পদত্যাগের দাবী নাকচ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন সিপিআইএম৷ সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই এম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বলেন, এই ধরনের দাবীর কোন যৌক্তিকতা নেই৷ কারণ এটা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ৷ কলকাতায় দায়ের হওয়া মামলার উপর ভিত্তি করে সিবিআই ত্রিপুরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এসেছে৷ রাজ্যের মন্ত্রী বিজিতা নাথকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷ কিন্তু এতে পদত্যাগ করার কোন প্রশ্ণই উঠে না৷ তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের এই দাবি হাস্যকর বলে কটাক্ষ করেছেন৷
বিজন ধর বলেন, সিবিআই’র অভিযান নিয়ে এখনই কোন মন্তব্য করার সময় আসেনি৷ এর সঙ্গে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখনই বলা সম্ভব নয়৷ তবে রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে রাজ্য সরকারও সিবিআই তদন্তের দাবী জানিয়েছিল৷ যদিও এখন এসব নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে৷
2017-06-27

