BRAKING NEWS

রেগায় রাজ্যে শ্রমদিবস কমেনি, এনইসি’র বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি কমানো যাবে না

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ মে৷৷ রাজ্যে রেগায় শ্রমদিবস কমানো হয়নি৷ এজন্যই হয়তো এনইসির বৈঠকে লেবার

সোমবার নয়াদিল্লীতে এনইসির বৈঠকে ডোনার মন্ত্রী ডঃ জীতেন্দ্র সিং, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী সহ পূর্বোত্তরে রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন৷

বাজেটের মাধ্যমে রেগা প্রকল্পে শ্রমদিবস সৃষ্টির সুযোগ আগামী দিনে কমিয়ে দেওয়া যাবে না বলে তীব্র আপত্তি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ সেই সাথে তিনি ২০০ শ্রমদিবসের কাজ দেওয়া সম্ভব না হলেও কমপক্ষে বছরে পরিবার পিছু ১০০ দিনের কাজ দেওয়ার জোড়ালো দাবী রেখেছেন৷ রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার এবং শাসক দল প্রচার করছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার রেগা প্রকল্পে শ্রমদিবস কমিয়ে দিয়েছে৷ কিন্তু, এদিন মুখ্যমন্ত্রী এন ই সির বৈঠকে যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে রেগায় শ্রম দিবস কমিয়ে দেওয়া হয়নি৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শ্রমদিবস সৃষ্টির সুযোগ কমিয়ে দেওয়া যাবে না৷ তার মানে দাঁড়াচ্ছে, রাজ্য সরকার শঙ্কিত এই বলে যে, শ্রমদিবস কমিয়ে দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার৷
উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের বৈঠক বছরে দুইবার করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ সোমবার নয়াদিল্লীতে এনইসি-র বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এই প্রস্তাব দিয়ে বলেন, পর্ষদের প্রথম বৈঠকটি হওয়া উচিত আর্থিক বছরের শুরুতে বার্ষিক বাজেট ও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য৷ দ্বিতীয় বৈঠকটি এর কিছু সময় বাদে করা যাতে গৃহীত বাজেট ও নির্দিষ্ট সময় সাপেক্ষে গৃহীত প্রকল্পের কর্মসূচীগুলি নিয়ে আলোচনা করা যায়৷ আজ এনইসির বৈঠকের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ডোনার মন্ত্রী ও পর্ষদের চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান এই বৈঠক আহ্বান করার জন্য৷ বৈঠকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্র জনগণের জন্য বিশেষ করে যে জনগণ নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম নন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে যারা বসবাস করেন, বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণীর লোকেদের কল্যাণে সরকারের যৌথ উদ্যোগেরই প্রতিরূপ হিসাবে কাজ করছে উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদ বা এনইসি৷ এনইসি তৈরী হয়েছে একটি সংঘবদ্ধ ও সমন্বিত আঞ্চলিক পরিকল্পনা তৈরীর জন্য, অগ্রাধিকারের বিষয় নির্ধারণ করতে৷ গৃহীত পরিকল্পনা সঠিকভাবে রূপায়ণ করার জন্য আজকের বৈঠকটি স্বাভাবিক ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই বৈঠকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের জন্য ত্রিবার্ষিক আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিবেচনা করা হবে৷ সঠিক ও উপযুক্ত আঞ্চলিক পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য দরকার এই অঞ্চলের সমস্যা এবং অগ্রাধিকারের বিষয় চিহ্ণিত ও মূল্যায়ণ করা৷ মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে এই অঞ্চলের কিছু বিশেষ সমস্যার উল্লেখ করে বলেন, সমতুল উন্নয়ন এবং অর্থবহ পরিবর্তন আনার জন্য এগুলির সমাধান দরকার, যাতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এই অঞ্চলও উন্নত হতে পারে৷ জাতীয় চিত্রের তুলনায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মাথাপিছু আয়ের হার কম, কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতা কম, অথচ এই ক্ষেত্রগুলিই এই অঞ্চলে আয়ের মূল উৎস৷ প্রাথমিক ক্ষেত্রের সম্ভাবনাকে আর্থিক উন্নয়নের জন্য পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়নি৷ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলের শিল্পায়নের মাত্রা কম৷ সরকারী সংস্থাগুলির উপস্থিতিও সীমিত এখানে৷ আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল, বিমান ও টেলিযোগাযোগে এখনো প্রতিবদ্ধকতা রয়েছে৷ বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহণ ও বন্টনের সম্ভাবনাকেও পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি৷ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের ক্রেডিট ডিপোজিটের হারও কম৷ তাই আঞ্চলিক পরিকল্পনা তৈরী করার সময় উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদকে এসব প্রতিবন্ধকতাগুলিকে অতিক্রম করার কথা মাথায় রেখে উপযুক্ত কৌশলের প্রস্তাব রাখা উচিত৷ পৃথক পৃথক কৌশলের পরিবর্তে পর্ষদের দরকার একটি দীর্ঘমেয়াদী রূপায়ণযোগ্য এবং বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরী করার, যার মধ্যে থাকতে পারে স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা৷ এই পরিকল্পনার নিয়মিত বিশ্লেষণও করা যেতে পারে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত বৈঠকে ত্রিপুরার পক্ষ থেকে উত্থাপিত বিষয়গুলি অনেকগুলিই পুরোপুরি সমাধান হয়নি বা এব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি৷ তার মধ্যে রয়েছে কিছু সড়ক প্রকল্প, আয়রণ রিমুভ্যাল প্ল্যান্ট, আগরতলা বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীত করা, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, আত্মসমর্পণকারী উগ্রপন্থীদের পুনর্বাসনের জন্য একটি সুসংহত প্যাকেজ তৈরী করা এবং মিজোরামের রিয়াং শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন৷ এসব ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ তৈরী করা খুবই প্রয়োজন৷ এনইসির প্রকল্পগুলিকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপ দেওয়া হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সবকিছু ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে এনইসির প্রকল্পগুলির টাকা আগের মতো রাজ্য সরকারের কাছেই হস্তান্তর করা দরকার যাতে তারা তাদের এজেন্সির মাধ্যমে রূপায়ণ করতে পারে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য এনইসি ৯২৫ কোটি টাকার ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে৷ এই অর্থ চলতি প্রকল্পগুলি রূপায়ণের জন্য খুবই কম এবং এতে নতুন কোন প্রকল্প শুরু করার জন্য কোন অর্থ বাঁচবেই না বলতে গেলে৷ অই অঞ্চলে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন এই অংকে তা মিটবে না৷
তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির জন্য এনইসির নরমেটিভ অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব চালু হতে পারে৷ যদি সম্ভব হয় অর্থ বরাদ্দ প্রকল্প রূপায়ণের অভিজ্ঞতা ভিত্তিতে করা যেতে পারে৷ এই অঞ্চলের বঞ্চিত মানুষদের কল্যাণে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আরও কয়েকটি শংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেন৷ তিনি বলেন, বর্তমানে মাথাপিছু পাঁচ কেজি করে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে৷ এটা পর্যাপ্ত নয়৷ মাথাপিছু দশ কেজি না হলেও অন্তত সাত কেজি চাল সরবরাহ করা দরকার এবং এই অঞ্চলের প্রতিটি মানুষকে এই সুবিধা দিতে হবে৷ অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনাভুক্ত পরিবারগুলি ছাড়া অন্যদের রেশনের মাধ্যমে ভর্তুকীতে চিনি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ গরীব মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করে এটা চালু রাখা প্রয়োজন৷ কেরোসিন তেলের বার বার মূল্যবৃদ্ধিতে গরীব মানুষের উপর প্রভাব পড়ছে৷ রেশনে কেরোসিন তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে৷ লেবার বাজেটের মাধ্যমে শ্রমদিবস সৃষ্টির সুযোগ কমিয়ে দেওয়া যাবে না৷ এখনই যদি ২০০ শ্রমদিবসের কাজ দেওয়া সম্ভব না হয় তবে প্রতি বছর পরিবার পিছু কমপক্ষে ১০০ শ্রমদিবসের কাজ দিতে হবে৷ এমজিএন রেগাতে মজুরী দেওয়ার পদ্ধতি জটিল এবং স্বচ্ছতা বজায় রেখে এই পদ্ধতি সহজ সরল করা প্রয়োজন৷
এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এদিনের বৈঠকে রাজ্য পুলিশের আধুনিকিকরণে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণগত দুটি অর্থ বছরে বহুলাংশে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ অপর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের জন্য আবাসন সহ পুলিশের পরিকাঠামো তৈরীর কাজ করা খুবই সমস্যা হচ্ছে৷ এমওপিএফ এ বরাদ্দ অর্থের পরিমান আরও বাড়াতে তিনি দাবী করেন৷ সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, অনাকাঙ্খিত এবং অনাবশ্যক আর্থিক বোঝা থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে মুক্ত রাখতে৷ তিনি আশা করেন, এনইসি বৈঠকে বিভিন্ন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত বিভিন্ন সময়ে সমাধানে এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের দ্রুত উন্নয়নে সহায়ক হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *