নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে উত্তাল বিধানসভা, দফায় দফায় মুলতুবি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ মে৷৷ আনোয়ারা ইস্যুতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মুখ্যমন্ত্রীকে পথ আটকে দেওয়ার ঘটনায় বিধানসভায় ট্রেজারি বেঞ্চের নিন্দা প্রস্তাবকে ঘিরে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে বিধানসভা৷ বৃহস্পতিবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের অন্তিম দিনে বিরোধীদের দফাওয়ারি বিক্ষোভের মুখে উপাধ্যক্ষ দুইবার সভা মুলতুবি ঘোষণা করেন৷ পূর্ত মন্ত্রী বাদল চৌধুরী বিধানসভায় বলেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মুখ্যমন্ত্রীর পথ আটকানো সংসদীয় রাজনীতিতে এধরনের ঘৃণ্য কাজে মেনে নেওয়া যায় না৷ পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা বলেন, বিধানসভার বাইরে কোন ঘটনা বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব আনা অসাংবিধানিক৷ কংগ্রেস বিধায়ক জানতে চান, কোন আইনে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়েছে৷ এদিন সরকারী মুখ্য সচেতক বাসুদেব মজুমদার নিন্দা প্রস্তাবটি আনেন৷ উপাধ্যক্ষ তা মঞ্জুর করেন৷
এদিন বিধানসভায় শূণ্যকালে সরকারী মুখ্যসচেতক বাসুদেব মজুমদার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পথ আটকানোর ঘটনায় নিন্দা প্রস্তাব আনেন৷ তাতে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন বিরোধীরা৷ কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস একজোটে নিন্দা প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানায়৷ কিন্তু, উপাধ্যক্ষ বিরোধীদের দাবি মানতে সম্মত হননি৷ তাতে, বিরোধীরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন৷ তখন উপাধ্যক্ষ পরবর্তী কার্যসূচী শুরু করতে চেষ্টা করেন, কিন্তু বিরোধীদের তুমুল হৈহট্টগোলের মধ্যে সভা পরিচালনা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি৷ ফলে, উপাধ্যক্ষ ১৫ মিনিটের জন্য সভা মুলতুবি ঘোষণা করেন৷
পুণরায় সভা শুরু হলে উপাধ্যক্ষ জানান, জনস্বার্থে আনা দুটি নোটিশের জবাব মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু, সভায় থাকতে পারছেন না তাই মুখ্যমন্ত্রীর বদলে পূর্ত মন্ত্রী বাদল চৌধুরী নোটিশের জবাব দেবেন৷ কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল রায় তখন জানতে চান, কোন আইনে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়েছে৷ সাথে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা যোগ করেন, বিধানসভার বাইরে কোন ঘটনায় বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক৷ তাঁরা নিন্দা প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানান৷ কিন্তু, উপাধ্যক্ষ বিরোধীদের দাবি মেনে নেননি৷ ফলে, বিরোধীরা পুণরায় ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন৷ তাঁরা উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে শুরু করেন৷ তাঁদের দাবি, এবিষয়ে বিরোধীদের কথা শুনতে হবে৷ তখন উপাধ্যক্ষ বিরোধীদের কথা বলার সুযোগ দেন৷
তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ তখন জানতে চান, রাজ্যে গণতন্ত্র বলে কিছু আছে কি৷ একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে, সেটা কি অগণতান্ত্রিক? তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর যখন পথ আটকানো হয়েছিল তখন পুলিশের দায়িত্ব ছিল তাঁকে যাওয়ার রাস্তা করে দেওয়ার জন্য৷ তিনি উপাধ্যক্ষের কাছে জানতে চান, কোন ধারায় প্রস্তাবটি আনা হয়েছে৷ কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল রায়ও সুদীপবাবুর সাথে আলোচনায় যোগ দেন৷ শ্রীরায় বলেন, নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু এই প্রস্তাবের উপর আলোচনা হওয়া উচিৎ ছিল৷ তিনি জানতে চান কোন আইনে প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে৷ উপাধ্যক্ষ তখন জানিয়ে দেন, তিনি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভাল বুঝেই করেছেন৷ পূর্ত মন্ত্রী বাদল চৌধুরী তখন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় আসছিলেন৷ কিন্তু তাঁকে গেইটে আটকে দেওয়া হয়৷ যারা এই কাজ করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, বিজেপিকে খুশী করার জন্যই এই কাজ সংগঠিত করা হয়েছে৷ তাতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিরোধীরা৷ বিরোধীদের বিক্ষোভে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে সভা৷ তাঁরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন৷ উপাধ্যক্ষ তখন তাঁদের চেয়ারে ফিরে যাবার অনুরোধ জানান৷ বিরোধীরা চেয়ারে ফিরে গেলেও নিন্দা প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবিতে অনঢ় থাকেন৷ কিন্তু, উপাধ্যক্ষ তার সিদ্ধান্ত পাল্টাবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন৷ এরই মাঝে স্টেট গুডস এন্ড সার্ভিস ট্যাক্স বিল বিধানসভায় অনুমোদিত হয় এবং জনস্বার্থে আনা দুটি নোটিশের জবাব পেশ করে দেন পূর্ত মন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷ উপাধ্যক্ষ নিন্দা প্রস্তাব প্রত্যাহার করছেন না দেখে বিরোধীরা পুণরায় ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন৷ গোপাল রায়, সুদীপ রায় বর্মণ, আশীষ কুমার সাহা, বিশ্ববন্ধু সেন এবং রতন লাল নাথ বিধানসভার সচিবের টেবিলের উপর উঠে বিক্ষোভ দেখান৷ প্রচন্ড হৈ হট্টগোলের মধ্যে উপাধ্যক্ষ প্রথমার্ধের সভা মুলতুবি ঘোষণা করে দেন৷