নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ মে৷৷ মহিলা পলিটেকনিকের ছাত্রী আনোয়ারা চৌধুরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কে বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতে মন্ত্রিসভায় বরিষ্ঠ সদস্য বাদল চৌধুরী এই বক্তব্য বিধানসভায় পেশ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া লিখিত বয়ান অনুযায়ী বিগত ৯ এপ্রিল হাপানিয়া মহিলা পলিটেকনিকের ছাত্রী আনোয়ারা চৌধুরীর মারাত্মক পেটের ব্যথায় আক্রন্ত হলে তাঁর পার্শ্ববর্তী জনৈক অটোচালক শফিক মিয়াঁ, শিল্পী বেগন সহ তাঁর নিজের অটো নিয়ে আনোয়ারাকে আইজিএম হাসপাতালে আনে৷ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ইনজেকশন ও ওষুধ দেন৷ তারপর তাকে বাড়িতে নেওয়া হয়৷
কিন্তু পরবর্তীতে সেই দিন বিকালেই আবার তাঁর পেটে ব্যথা শুরু হওয়ায় তাকে বিকালবেলা আইজিএম হাসপাতালে আনা হয়৷ তখন তাঁর সাথে তাঁর বাবা আবদুল্লা মোঃ আমিন ছিলেন৷ আইজিএম হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে জি বি হাসপাতালে রেফার করেন এবং সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেই সময় তাঁর সঙ্গে তাঁর বাবাও ছিলেন৷
জি বি হাসপাতালে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়৷ শফিক মিয়াঁ তখন পশ্চিম প্রতাপগড়ে ফিরে যায় এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজনকে খবর দেয়৷ এই সংবাদ পাবার পর নুর মহম্মদ, তার স্ত্রী এবং তার বোন জ্যোৎস্না বেগমকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসে৷ আনোয়ারার পিতা আবদুল্লা মোঃ আমিন বিকাল ৬৩০ মিনিট নাগাদ হাসপাতাল থেকে চলে যায় এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে রাত্রি আটটার মধ্যে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট সহ ফিরে আসবে৷ কিন্তু, তারপর সে আর ফিরে আসেনি৷ সেই রাতেই ১২১৫ মিমিটে আনোয়ারা চৌধুরীর মৃত্যু হয়৷ পরবর্তীতে আনোয়ারা চৌধুরীর মৃতদেহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷
তারপর ১১ তারিখে হাপানিয়া মহিলা পলিটেকনিকের ছাত্রী জাগৃতি দেববর্মা তাঁর সহপাঠী আনোয়ারা চৌধুরীর আকস্মিক এবং সন্দেহজনক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের কাছে এই ঘটনার যথাযথ তদন্তের দাবী করে৷ এই অভিযোগে আনোয়ারা চৌধুরীর মৃতদেহ ময়না তদন্ত না করা এবং আইনের বিধি পালন না করেই দাফন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়৷
প্রাথমিক ভাবে ঘটনার তদন্ত সিআরপিসির ১৫৭ ধারার অধীনে শুরু করার পর পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলার আবেদন করা হলে তা মঞ্জুর হয় এবং বিগত ১৩ এপ্রিল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দেহ কবর থেকে তোলার পর তাঁর দেহ একদল চিকিৎসকের অধীনে ময়না তদন্ত করার জন্য এজিএমসি এবং জি বি হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ তা ১৩ এপ্রিল তারিখে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়৷ ময়নাতদন্ত করার পর মৃতদেহ পুনরায় কবর দেওয়া হয়৷
মৃতদেহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়৷ রিপোর্ট অনুযায়ী ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির মতামত যেসব ডাক্তার ময়না তদন্ত করেছিলেন তাঁদের কাছে দেওয়া হয়৷ সেই সব চিকিৎসক তাঁদের চূড়ান্ত মতামতে উল্লেখ করেন যে ময়না তদন্ত রিপোর্ট রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্সের রিপোর্ট এবং হিস্টোপেথলজিকেল রিপোর্ট অনুসারে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে আনোয়ারা চৌধুরীর মৃত্যুর কারণ হল বিষক্রিয়া৷
এই ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট মামলা পশ্চিম আগরতলা মহিলা থানাতে ভারতীয় দন্ডবিধির ১২০ (বি)/৩০২ অনুসারে গত ১২ মে তারিখে মৃতার মামা নুর মহম্মদ মিয়াঁর বিরুদ্ধে নথিভূক্ত হয়৷ তদন্ত কাজ শুরু করার পর নুর মহম্মদ মিয়াঁকে ১২ মে গ্রেপ্তার করা হয়৷
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরও আনোয়ারা চৌধুরীর চিকিৎসার কোন গাফিলতি হয়েছে কি না এই বিষয়েও তদন্ত করা হয়৷ এই তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ডাঃ মনোরঞ্জন দেববর্মা এবং ডাঋ শ্যামসুন্দর সাহাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারী করা হয়েছে৷
2017-05-26
