নয়াদিল্লি, ১২ মে (হি.স.) : দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে তিন তালাকের নিন্দা করল সুপ্রিম কোর্ট| তিন তালাক এবং নিকাহ হালালা-এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে শুনানির দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছে, তিন তালাক বৈধ বলে মনে করে কোনও কোনও মহল| তবে বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত সমস্যায় তিন তালাক সবেচয়ে খারাপ এবং অনভিপ্রেত সমাধান | এটা কাম্য নয়, মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের|
এই মামলায় আদালত বান্ধব হয়েছেন প্রাক্তন আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ| এদিন আদালতে খুরশিদ সওয়াল করেন, তিন তালাক নিন্দনীয় অপরাধ বটে, কিন্তু স্বীকৃত প্রথা| বেঞ্চকে তিনি বলেন, তিন তালাক ইসু্যতে বিচারবিভাগের নজরদারির প্রয়োজন নেই| তাছাড়া মুসলিম মেয়েদের তিন তালাকে না বলার অধিকার আছে, নিকাহনামায় এই সংক্রান্ত শর্ত দিতে পারেন তাঁরা| তখনই প্রধান বিচারপতি এই প্রতিক্রিয়া দেন|
এদিন খুরশিদকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতিরা একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন| প্রধান বিচারপতি জেএস খেহরের প্রশ্ন, তিন তালাক কি কেবল প্রতীকি আচরণবিধি নাকি ধর্মের মৌল আচরণবিধি? কোনও একটা পাপের প্রথা কি শরিয়তের অংশ হতে পারে? কিছু মানুষ মনে করেন মৃতু্যদণ্ড পাপাচার| কিন্তু সেটাকেই আইনি বৈধতা দেবেন কী করে? যার উত্তরে খুরশিদ বলেন, ভারতের মিশ্র সংস্কৃতির কারণে ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে| আদালতের ইসলামকে মানবিক করার উদ্যোগের প্রয়োজন নেই| তিন তালাক ইসলামে হস্তক্ষেপ করছে না, এটা সহায়তা করছে|
আদালতে অনেকেই জানিয়েছে, তারা তিন তালাক চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে| কোনও সংশোধন হলে আপনা থেকেই হবে| যার সমালোচনা করে বিচারপতি ফলি এস নরিম্যান বলেছেন, তত্ত্ব এবং অনুশীলনের মধ্যে তফাটা বোঝা উচিত| একদিকে বলবেন ধর্মে সংস্কারের দরকার নেই| তারপর আমাদেরই বলবেন সংস্কার করে দিন যাতে ঈশ্বরের হাতে শাস্তি পেতে না হয়|
খুরশিদকে তিন তালাক নিষিদ্ধ হয়েছে, এমন ইসলামি ও অ-ইসলামি দেশের তালিকা পেশ করতে বলে বেঞ্চ| তিনি জানান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মরক্কো, সৌদি আরবের মতো দেশগুলিতে বিয়ে ভাঙায় তিন তালাক আর অনুমোদিত নয়|
কেন্দ্রের তরফে সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয়েছে, তিন তালাক মুসলিম মেয়েদের সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকারকে স্বীকার করে না| তাই এই প্রথাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হোক|
তিন তালাকের শিকার এক মহিলার হয়ে আদালতে প্রবীণ আইনজীবী রাম জেঠমালানি সওয়াল করেন, তিন তালাকের অধিকার একচেটিয়া কেবল পুরুষেরই, স্ত্রীর নয়| সাম্যের অধিকার সহ বিভিন্ন সাংবিধানিক কারণ দেখিয়ে তিন তালাক প্রথার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি| বলেন, ডিভোর্স দেওয়ার এই পন্থার মধ্যে কোনও শিষ্টাচার নেই| একতরফা বিয়ে বাতিল একটা ঘৃণ্য ব্যাপার| তাই তা এড়ানো উচিত|
2017-05-13