চরাইদেও, ২২ এপ্রিল (হি.স.) : অসমের চরাইদেও জেলার কতিপয় যুবককে পড়শি রাজ্য অরুণাচল প্রদেশে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে এবং চিকিত্সার অভাবে তাঁদের একজন মৃতু্য বরণ করেছেন বলে এক অভিযোগ পাওয়া গেছে| এ ঘটনায় জেলায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে|
অসম চা জনজাতি ছাত্র সংস্থা এই তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, প্রতিবেশী রাজ্যে কাজের প্রলোভন দিয়ে একটি দালালচক্র এখানকার কতিপয় যুবককে অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে গিয়েছে| তাদের নিজের নিজের বাড়িতে আসতে দেওয়া হচ্ছে না| এরই মধ্যে এক যুবকের বিনা চিকিসায় মৃতু্য হয়েছে| এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওইসব যুবককে ফিরিয়ে আনতে চরাইদেও জেলাশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়ে তাঁকে এক আবেদনপত্র সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে| এদিকে বন্দি দুই যুবকের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, জেলার নাফুকের রাম গোয়ালা, শালকাঠনির কান্ত তাঁতি এবং মরানহাবির সুর লাহন নামের ঠিকাদার নামধারী তিন দালাল শালকাঠনি এবং মরানহাটি গ্রাম-সহ অন্যান্য অঞ্চলের কুড়িজন যুবককে অরুণাচল প্রদেশের ইটানগরে বিএসএনএল-এর টাওয়ারে ক্যাবল্ সংক্রান্ত কাজের জন্য নিয়ে যায়| মাসে আট হাজার টাকা করে তাঁদের পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা বলে ওই দালালরা| সে অনুসারে কুড়িজনের এই যুবকের দল গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চরাইদেও থেকে ইটানগরের উদ্দেশে যাত্রা করে|
যথাসময়ে ইটানগরে গিয়ে পৌঁছার পর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় নিনি আলং নামের প্রত্যন্ত এক অতি দুর্গম পহাড়ি অঞ্চলে| সেখানে তাঁদের বিএসএনএল-এর বদলে অন্য কাজে নিয়োগ করা হয়| তাছাড়া এই সব শ্রমিকদের সেখানে একদল অস্ত্রধারী যুবক সবসময় ঘেরাও করে রাখে যাতে তারা পালাতে না পারে বলেও ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন| তাঁদের আরও অভিযোগ, কুড়িজন শ্রমিকের নামে ওই তিন দালাল নিয়মিত মাসোহারা মালিকের কাছ থেকে আদায় করলেও আজ পর্যন্ত এর কানাকড়ি্ও এদের দেওয়া হয়নি| এ ব্যাপারে দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও লাভ হয় না বরং তারা তাদের খুন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলেও অভিযোগ| ইত্যবসরে ১ নম্বর মরানহাটির বাসিন্দা জনৈক কেশরাম রাজুয়ারের ছেলে সঞ্জীব রাজুয়ার নামের শ্রমিকটি এনকেফেলাইটিসে আক্রান্ত হয়| সেখানে একই জায়গায় নিয়োজিত সঞ্জীবের দাদা শংকর ও তরুণ গগৈ নামের অপর শ্রমিক রোগাক্রান্তকে নিয়ে পালিয়ে যান| সঞ্জীবকে নিয়ে তাঁরা গত ১৯ তারিখ ডিব্রুগড় মেডিক্যাল হাসপাতালে এনে ভরতি করান| কিন্তু ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে গত বৃহস্পতিবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে|
এদিকে অসম চা জনজাতি ছাত্র সংস্থার সাপেখাতি শাখার পদাধিকারীরা জানিয়েছেন, দালালদের খপ্পরে এখনও মরানহাবির ভীম মাঝি, রাজু মুড়া, দুলাল তেলি, ফিও খাবিয়া, দুর্গা খাবিয়া, দীপেন গগৈ শালনিকাঠনির অরূপ কর্মকার, অমৃত তাঁতি, বিকাশ তপ্ন, দুলু ক্ষেত্রপাল, রাজু কর্মকার, মহিনা তাঁতি, এবং সুরসেন পানিকা নামের কয়েকজন শ্রমিক আটক রয়েছেন| তাদের উদ্ধার করতে জেলাশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়ে এক স্মারকপত্র দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার পদাধিকারীরা|